ডাঃ রিয়াজুল করিম
(ইউরোপের অভিজ্ঞতা থেকে)
আমি এবং আমার বন্ধু ডাক্তার মোস্তফা কামাল একদিন জার্মানীর ফ্রাংফুট শহরে বিকেলে হাঁটছিলাম।দুজনে বেশ মজা করে গল্প করছি আর হাটছি। গল্পে গল্পে রাস্তা হারিয়ে হোটেলের বিপরীত দিকের রাস্তায় অনেক দূর চলে এসেছি।
হঠাৎ মনে হলো, হোটেলের রাস্তা এতো দুরে তো না! তাহলে নিশ্চয় রাস্তা ভুল করেছি। হিসাব নিকাশ করে নিশ্চিত হলাম রাস্তা ভুল করেছি। আমাদের কাছে ফোন নাই।
ইউরোপের বাস,ট্রেন,হোটেল রেষ্টুরেন্ট সব জায়গায় ওয়াইফাই ফ্রি থাকায় সিম নিয়েছিলাম না, নেটেই কথা হতো বাড়িতে।
কোনো ভাবেই হোটেলের লোকেশন ঠিক করতে পারছিলাম না। সৌভাগ্যক্রমে হোটেলের একটি কার্ড থাকায় ইউরোপিয়ানদের সাহায্য নেওয়াটা সহজ হলো।
ইউরোপের রাস্তায় প্রতি ১০ জনের ৬ জনই দেখা যায় মেয়ে। বলা বাহুল্য ইউরোপিয়ানেরা যথেষ্ট সাহায্যের মানসিকতা রাখেন। তাদের মধ্যে মানুষকে ঠকানোর চিন্তা আমার কখনও চোখে পড়েনি।
তো, রাস্তা যখন হারিয়ে ফেলেছি কারো সাহায্য জরুরী হয়ে পড়লো। ৭০/৭৫ বছরের এক বৃদ্ধাকে “হ্যালো” বলে অভিবাদন জানাতে তিনি “হায়” বলে সাড়া দিলেন এবং মিষ্টি করে একগাল হেসে দিলেন। তাতে আমরা দুজনে একটু স্বস্তির নিঃস্বাস নিলাম আর আমাদের সমস্যা তাকে তুলে ধরলাম।
তিনি তার ফোন থেকে গুগোল ম্যাপে ঢুকে দেখলেন আমরা অনেক দুর বিপরীত রাস্তায় এসেছি। সমস্যা বেশী হচ্ছিলো ভাষাগত। তিনি তেমন ইংরেজী জানেন না। আমরা জার্মান ভাষা জানি না। কে কাকে বোঝাবে?
তিনি এক পর্যায়ে আমার হাত ধরে টেনে জানালেন আমার সাথে এসো। আমরা যথারীতি মহিলার সাথে হাটছি। প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট তার সাথে হাঁটার পরে হোটেলের দেখা পেলাম। বৃদ্ধা মহিলা আমাদের দুজনকে সাথে নিয়ে হোটেলের রুমে কার্ডপাঞ্চ করিয়ে নিশ্চিত হলেন আমরা আমাদের রুমে পৌঁছিয়েছি।
আমাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে তিনি আবার তার নিজের কাজে চলে গেলেন। যা আমার চোখে আজও ভাসে।
আমরা মুসলমানেরা এই গুনের প্রথম সারির মানুষ হওয়ার কথা ছিল। মক্কা বিজয়ের সময় এক বুড়ি তার ব্যাবহারে কিছু জিনিস নিয়ে, মুহাম্মদের ভয়ে মক্কা ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। মুহাম্মদ বুড়ির কষ্ট দেখে বুড়ির গাট্টি মাথায় করে বুড়িকে তার গন্তব্যে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। বুড়ির কাছে তার পালানোর কারন জানতে চেয়েছিলেন রাসুল(সঃ)। বুড়ি জানিয়েছিলেন,
মুহাম্মদ মক্কা দখল করে নিয়েছে, সে বড্ড খারাপ মানুষ। তাই পালিয়ে যাচ্ছে।
রাসুল (সঃ) বুড়িকে তার গন্তব্যে পৌঁছিয়ে দিয়ে জানালেন তিনিই সেই মুহাম্মদ, যার ভয়ে বুড়ি পালাচ্ছিলো। বুড়ি মুহাম্মদ (সঃ) মহানুভবতা দেখে মুসলামান হলেন।
এই আমাদের ঐতিহ্য, এই আমাদের বৈশিষ্ট্য।
লেখকঃ ডাঃ রিয়াজুল করিম। প্রভাষক, ঠাকুরগাঁও হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। ঠাকুরগাঁও। প্রোপ্রাইটার, এস,আর,হোমিও হল কুষ্টিয়া।