মোঃ আল আমিন প্রধান
রাত পোহালেই ভোরের আলোর ঝলকানিতে দিনের সূচনা হয়ে থাকে এটা চিরাচরিত নিয়ম। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় করোনার কালো থাবায় সবকিছু অচল হয়ে আছে আর সচেতন হলেই হয়তো সচল হওয়া ও বেশি দূরে নয়। আমরা আশাবাদী হয়তো অতি দ্রুতই আমাদের এই ভয়াবহ অবস্থার অবসান ঘটবে। বৃটিশ দার্শনিক, স্যার বার্ণার্ড উইলিয়ামস বলেন, ” পৃথিবীতে এমন কোনও হতাশা আসেনি যা আশাকে পরাজিত করতে পারে।” করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার নিউজ হচ্ছে সারা বিশ্বে। যার অধিকাংশেই জীবাণূ যোদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে সংবাদ প্রচার করছে, আবার বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বলছে বাদুড় থেকে ছড়িয়েছে। পরাশক্তি দেশগুলো একে অন্যকে দোষছে।
গত কয়েকদিন আগে নিউজ হলো, বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চার্লস লিবার যিনি উহানের চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা ল্যাবের সাথে জড়িত তিনি এফবিআই এর হাতে ধরা পড়লেন। চার্লস লিবার চীন সরকারের কাছ থেকে মাসিক ভাতা ও থাকা খাওয়ার জন্য প্রচুর অর্থ পেতেন বলে স্বীকার করেছেন। অধ্যাপক চার্লস লিবার একজন আমেরিকান রসায়নবিদ এবং ন্যানোসায়েন্স এবং ন্যানো টেকনোলজির বিশেষজ্ঞ। ধারনা করা হচ্ছে করোনা ভাইরাসটি মূলত বায়ো অ্যাটাকের পরিকল্পনার জন্যই আবিষ্কার করা হয়েছিল যেখানে চার্লস লিবারের হাত রয়েছে।
বর্তমান বিশ্বের যেসব দেশ আক্রান্ত তাদের দেশে রোগীর আর মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় চীনকে নিয়ে , যেখানে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক লোকের বসবাস সেখানেই প্রথম আঘাত হানে করোনা ভাইরাস , কিন্তু অতিদ্রুত কীভাবে তারা করোনার নিয়ন্ত্রন করে ফেল্লো? তাহলে কি বলবো সমাধান তাদের কাছে আগে থেকেই ছিল ? এ ক্ষেত্রে রাজা কৃঞ্চচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়ের কথা মনে পড়ে যায়। বাংলার প্রসিদ্ধ নগরী নদীয়ার রাজা কৃঞ্চচন্দ্র (১৭১০-১৭৮৩) তার সভাসদগনের মধ্যে গোপাল ভাঁড় ও একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। একদিন রাজা কৃঞ্চচন্দ্র তার বিজ্ঞানীকে ডেকে বল্লেন – এমন কিছু একটা আবিষ্কার করো যা দিয়ে স্পর্শ করলেই সব সোনা হয়ে যাবে। গোপাল ভাঁড় বিজ্ঞানীকে বল্লেন- তা থেকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসার ওষুধ ও তৈরী করে রেখো। স্বভাবতই গোপাল ভাঁড় একটু চিকন বুদ্ধির ছিলেন।
তো যেই কথা সেই কাজ , বিজ্ঞানী তরল আবিষ্কার করে দিল রাজাকে এবং বল্লো, এটা দিয়ে যা, স্পর্শ করবেন তাই সোনা হয়ে যাবে। রাজা মহা খুশিতে তাই করতে লাগলেন, এমন কাজ রাজাকে বেকায়দায় ফেলে দেয় যখন দেখলেন , তার খাবারে হাত দিলেও সোনা হয়ে যাচ্ছে আবার রানীর শরীরে হাত দিলেও রানীর এক পাশ সোনায় পরিণত হয়ে যায় , এই বিপদে রাজা যেন নিজের অস্তিত্বই হারিয়ে ফেলবেন। তাই এ থেকে মুক্তির জন্য তিনি গোপাল ভাঁড়কে ডাকলেন , অতঃপর গোপাল ভাঁড়ের বুদ্ধিতেই রাজার সবকিছু আবার পূর্বাবস্তায় ফিরে এলো। চীন কি তাহলে এভাবেই বেচে গেল কি-না। যদিও চিনের বিদেশমন্ত্রীর মুখপাত্র লিঝিয়ান ঝাও এর দাবি- -করোনা আক্রান্ত মার্কিন সেনারা উহানে আসেন মিলিটারী ওয়ার্ল্ড গেমে যোগ দেওয়ার জন্য আর ওখানে তাদের থেকেই তা চিনে ছড়িয়ে পড়ে।”
তবে কীভাবে তারা এত দ্রুত পরিত্রান পেল ? এ প্রসঙ্গে একজন চীনা বিশেষজ্ঞ বলেন যে, -“গরম পানি থেকে বাষ্প নিঃশ্বাসের ফলে করোনা ভাইরাস শতভাগ মারা যায়, করোনা ভাইরাস গরম জলের বাষ্পে দাঁড়াতে পারে না , এমন কি ভাইরাসটি নাক, গলা ও ফুসফুসে গেলেও।” এদিকে গোটা বিশ্বে এ ভাইরাস নিয়ে হচ্ছে বিস্তর গবেষণা, শক্তিশালী দেশগুলো জীবাণূ অস্ত্রের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে একে অন্যের উপর দায় চাপাচ্ছে । জীবাণূ অস্ত্র হউক আর যেভাবেই আসুক এ থেকে বাঁচার জন্য প্রাণ-পণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা এবং তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ এপ্রিলে ২০২০ খ্রিঃ; ১ম মানব শরীরে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারা গিলবার্টের নেতৃত্বে দুই জনের শরীরে এ ট্রায়াল দেওয়া হয়। এদের মধ্যে একজন হলেন এলিসা গ্রানাটো, তিনি বলেন- ‘আমি একজন বিজ্ঞানী, তাই আমি বৈজ্ঞানিক এই প্রক্রিয়াটিকে সহায়তা করতে চেয়েছি। সারা গিলবার্ট ও তার টিম ইবোলার মতো কঠিন ভাইরাসের জন্যও কাজ করে সফল হয়েছেন এবং এসব নিয়ে বহুদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি টাইমস অফ লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষৎকারে বলেন, ‘আমি ৮০% আত্মবিশ্বাসী’ করোনা ভ্যাকসিনের কর্মক্ষমতা নিয়ে। আমরাও আশাবাদী , আমরা যেন শতভাগ সফলতা পাই।
আশাকরি অতিদ্রুতই এ থেকে পরিত্রান পাবো আমরা । এ জন্য আমাদের অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। আশার কথা হলো, ভ্যাকসিনটি কার্যকরী হলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর সব মানুষের জন্য দ্রুততম সময়ে এটি উন্মুক্ত করবে। মার্টিন লুথার কিং এর মতো বলতে গেলে ” পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত বড় অর্জন হয়েছে, তার পেছনে আশা ছিল সবচেয়ে বড় শক্তি।” আমরা লকডাউনে সচেতন থেকে প্রহর গুনছি, অন্ধকার দূরভীত হয়ে আলোর অপেক্ষায়….।
লেখকঃ মোঃ আল আমিন প্রধান, শুল্ক কর্মকর্তা, জাতীয় রাজস্ববোর্ড।