সব
facebook apsnews24.com
ব্যাংকের কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণঃ বীমা সুবিধা না থাকায় ব্যাংকারদের গলার ফাঁস - APSNews24.Com

ব্যাংকের কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণঃ বীমা সুবিধা না থাকায় ব্যাংকারদের গলার ফাঁস

ব্যাংকের কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণঃ বীমা সুবিধা না থাকায় ব্যাংকারদের গলার ফাঁস

আবু মিছিল

প্রাতিষ্ঠানিক কিছু কিছু সহজলভ্য সুযোগ-সুবিধার কারণে প্রায় সব ব্যাংকারেরই চমৎকার একটি বাড়ি থাকে। ব্যাংকের চাকুরীকে পৃথিবীব্যাপী উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও উচ্চ বেতনভোগী বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকে আলাদা বিশেষ বেতন কাঠামো নেই। তবে অন্যান্য কিছু বাড়তি সুবিধা আছে যার মধ্যে অল্প সুদে কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা অন্যতম। ব্যাংকের চাকুরীতে অনেক ঝক্কিঝামেলা সহ্য করা লাগলেও, মানুষ পারিবারিক আর্থিক সুরক্ষা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকের চাকুরীতে মনোনিবেশ করে থাকে।

সমাজের অন্য পেশাজীবীরাও ব্যাংকারদের পরিপাটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন ও আর্থিক ভিত্তি দেখে তাদের জীবনকে আলোকিত বলে আখ্যায়িত করে থাকে। কিন্তু এই আলোর নিচেও কিছু অন্ধকারের গল্প আছে! যে গল্পগুলো ভয়ংকর অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং হৃদয়বিদারক। জনাব মিসবাহ সাহেব একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে চাকুরী করতেন। চাকরির পাঁচ বছরের মাথায় তিনি আশি লক্ষ টাকা কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণ নিয়ে নিজ জেলা শহরের শহরতলীতে একটি বাড়ি করেন। তাঁর বেতন থেকে ঋণের কিস্তি কাটার পরেও যে সামান্য বাড়ি ভাড়া পেতেন তা এবং অবশিষ্ট বেতন দিয়ে দুই সন্তান, স্ত্রী ও মা-বাবাকে নিয়ে ছয় জনের সংসার খুব দারুণভাবেই চলছিল।

কিন্তু ঋণ নেয়ার আড়াই বছরের মাথায় তিনি হৃদরোগে মারা যান। তাঁর স্ত্রী শিক্ষিত ও বাইরে কর্মোপযোগী হওয়া সত্বেও ঘরে সংসারের কাজে অবদান রাখতেন। তাই তাঁর বাড়তি আয়ের উৎস নেই। উন্নত লোকেশন না হওয়ার কারণে এখন সেই বাড়িতে তেমন ভাড়াটিয়া নেই। ঋণের কিস্তি পরিশোধের কোন উপায় উক্ত কর্মকর্তার উত্তরাধিকারীদের নেই। বাড়িটি ব্যাংকে বন্ধক রাখা। এমতাবস্থায়, তিল তিল স্বপ্নের বুননে বানানো বাড়িটি কি নিহত কর্মকর্তার পরিবার ধারণ করতে পারবে?

এক দিকে স্বজন হারানোর অমোচনীয় বেদনা, অন্যদিকে বাস্তুভিটা হাতছাড়া হবার পায়তারায় বিপর্যস্ত পরিবারটির কথা ভাবুন তো! যে নিশ্চয়তা ও সামাজিক অবস্থানের আশায় তিনি ব্যাংকিংয়ের মতো চ্যালেঞ্জিং চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন, আজ একটি মৃত্যু তাসের ঘরের মত সব উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ যেন, ঘরহারা হওয়ার চেয়ে ঘর না থাকাটাই ভালো ছিল মনে হয়। অসহায়ত্বের সীমা ছাড়ানো দিনগুলোতে মানুষের আরো বেশি আশ্রয় ও নিশ্চয়তা দরকার। অথচ কর্তৃপক্ষ সামান্য নজর দিলেই এসব কালো দিক আলোয় ঝলমলে হতে পারে। প্রতিটি ঋণকে বীমার আওতায় আনলে ঋণগ্রহীতা ও তাঁর পরিবার একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন পেতো।

বীমার প্রিমিয়াম ঋণের কিস্তির সাথে যুক্ত হলেও ব্যাংকাররা আপত্তি করবে বলে মনে হয়না। কিছু কিছু বেসরকারি ব্যাংকে ঋণগুলো বীমার আওতায় আনা হয়েছে ফলে তারা এর সুফল পাচ্ছে। তাই এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছাই যথেষ্ট। এতে প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার বাড়বে না। কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণ অন্যতম নিরাপদ ঋণ হিসেবে খ্যাত যার আদায়ের হার সর্বাধিক। তাই ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে অবিলম্বে সকল স্টাফ লোন বীমা সুবিধার আওতায় আনা প্রয়োজন।

লেখকঃ সমাজকর্মী ও কলামিস্ট।

মতামত লেখকের ব্যক্তিগত এজন্য তিনিই দায়বদ্ধ থাকিবেন।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj