মো: শামসুদ্দোহা
“সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমর উক্তিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুব আক্ষেপ নিয়ে উচ্চারণ করেছিলেন মনে পরে?
আমরা যে এখন মানুষ হতে পারিনি তা প্রকাশ পায় বাঙালি জাতির বিভিন্ন দুর্যোগের সময়। এখন একটা দুর্যোগ চলছে করোনা দুর্যোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলায় তার ৩১ দফা নির্দেশনা ঘোষণা করেছেন। আমি মনের উতসুকতা থেকে ৮ জন নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষিত এবং ১২ জন নিম্ন পেশার মানুষের উপর সার্ভে করি তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ছিল, প্রধানমন্ত্রী যে ত্রাণের আশ্বাস দিয়েছে সে ত্রাণ কি আপনি পেয়েছেন বা পাবেন বলে মনে করেন? কেন আপনি মনে করেন পাবেন বা পাবেন না? তাদের উত্তরে আসলে আমি একটু হতাশ হয়েছি । এর মধ্য ১৬ জন বলেছে পূর্বে বহুবার ত্রাণ দেয়া হলেও তাদের হাত পর্যন্ত ত্রাণ এসে পৌঁছায়নি। আর বাকী ৪ জন বলেছে তারা আগে যা ত্রাণ পেয়েছেন তা খুবি সামান্য। তাদের অনেকেই একটি আশংকা করেছেন” ত্রাণ হয়ত আসবে কিন্তু আমরা পাব না”।
এই যে উক্তিটা “ত্রাণ হয়ত আসবে কিন্তু আমরা পাব না” এটাকে একটা সাধারণ উক্তি হিসেবে দেখা যাবে না। কারণ এই উক্তিতে একটা আস্থাহীনতা রয়েছে জনপ্রতিনিধিদের উপর , আর একটা ব্যাপার হল ত্রাণ নিয়ে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেই তাদের এই হতাশামূলক উক্তি। তাদের এই ভবিষ্যৎ বাণী আবারও সত্য হতে যাচ্ছে। কারণ প্রত্যেকদিন জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে চাল চুরির যে সংখ্যা পত্রিকায় আসতেছে তাতে সঠিক ভাবে হিসেব করলে, এইটুকুন বলতে পারি এরা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম।
ইতিহাস বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাড়ে সাত কোটি কম্বল এনেছিলেন, সাড়ে সাতকোটি জনগণের জন্য। সেই জনগণের একজন সে ,তার জন্য ও একটা কম্বল বরাদ্দ ছিল। তিনি তার কম্বলটা কিন্তু আগে রাখেন নাই। তিনি চেয়েছিলেন সাধারণ জনগণের হাতে যে মাধ্যম দিয়ে কম্বল খানা পৌঁছাবে তার হাতে সেই মাধ্যম দিয়ে দেশের একজন সাধারণ নাগরিকের প্রাপ্যর ন্যায় তার কম্বলটা আসুক। তিনি কিন্তু তার কম্বল পান নাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আজ ১৮ কোটি মানুষের জন্য ১৮ কোটি বস্তা চালের ব্যবস্থাও করে আর একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সে যদি তার প্রাপ্য একবস্তা চাল পেতে চায় , আমার মনে হয়, এই মাধ্যম দিয়ে চাল তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাবে না। ২০০৭ সালে সিডরের পরে অনেক জনপ্রতিনিধি আবার আবার সিডর আসার জন্য প্রার্থনা করেছেন কারণ জনগণের ক্ষতি হলেও ত্রাণে তো তাদের পেট ফেঁপে ফুলে উঠে। এখন যে হারে চাল চুরি হচ্ছে, তাতে তারা আবার করোনা আসার জন্য প্রার্থনা করে বসলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। এবার আসি মদ্দা কথায় ২০১৯ সালের বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে হত দরিদ্রের সংখ্যা ২ কোটি ৪১ লক্ষ যাদের প্রতিদিনের ইনকাম মাত্র ৬১ টাকা ৬০ পয়সা।
আর ৬ কোটি ২১ লক্ষ মানুষ দরিদ্রতার ঝুঁকিতে। তর্কের খাতিরে ৬ কোটি সংখ্যাটা বাদ দিলাম বাকী যে ২ কোটি ৪১ লক্ষ তাদের আয়ের ইনকাম কিন্তু এখন বন্ধ। তারা আজ অই ত্রাণের দিকে তাকিয়ে।এই পরিস্থিতি যদি আগামী ১০ বা ১৫ দিন অব্যাহত থাকে অনেক বাবা মায়ের সন্তানকে খাবার না দিতে পেরে তীব্র কষ্টে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে । অনেক সন্তান খাবারের অভাবে মারা যাবে। অনেক যুবক অসৎ উপায়ে খাবার খুঁজতে বাধ্য হবে । অনেক যুবতীকে হয়ত খাবারের জন্য নিজের সতীত্ব দিতে হবে। কিছু লোকের কথা বললাম আর অনেক লোক হয়ত খাবারের অভাবে মরণের জন্য অপেক্ষা করবে। প্রায় আড়াই কোটি লোক যদি খাবারের জন্য ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ,খুন সহ অন্য সকল অপরাধে লিপ্ত হতে শুরু করে । তাহলে সমাজের কি রূপ অবস্থা হবে একটু ভাবুন তো।
কি হতে পারে ত্রাণ বিতরণের বিকল্প মাধ্যমঃ
প্রথমত, যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী মাঠে আছে, তাই ত্রাণ বিতরণ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ পুলিশ, সেনাবাহিনী সহ অন্য সকল বাহিনীর সমন্বয়ে ত্রাণ বিতরণের জন্য একটা যৌথ ফোর্স ঘটন করা যেতে পারে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে অনেক সোশ্যাল এক্টিভিস্ট আছে তাদের সহ বিভিন্ন পেশাজীবী যেমনঃ শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক সহ অন্য অন্য সকল পেশাজীবীদের একটা যৌথ প্লাটফর্ম করে তাদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা যেতে পারে।
চতুর্থত, বাংলাদেশে বর্তমানে ৪০ টির অধিক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র এবং শিক্ষকদের দিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা যেতে পারে কেননা ওই ছাত্র- শিক্ষক জানে ওই কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরের ঘামের পয়সায় এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে , তারা না বাঁচলে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাঁচবে না। আসুন এই প্রতিজ্ঞা করি ,আগামী দিনের নতুন সূর্যটা ১৮ কোটি মানুষের সবাইকে নিয়ে দেখতে চাই।
লেখকঃ মো: শামসুদ্দোহা শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ ।
লেখকের ব্যক্তিগত মতামত তিনি নিজেই দায়বদ্ধ থাকিবেন।