লেখকঃ নাসির আহামেদ।
———— 🤏🌹👌————
নারী যখন সাবলম্বী হয়ে বুঝতে পারে আরেক জনের অঘোষিত কয়েদ খানায় থাকার চেয়ে নিজের মতো থাকা ভালো তখনই সে ডিভোর্সের মতো জঘন্য সিদ্ধান্ত নেয়।
আমার মন বলে পৃথিবীর কোনো মানুষ খারাপ হয়ে জন্ম নেয়না। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সে স্বেচ্ছায় খারাপ হয় অথবা কেউ খারাপ হতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেসব খারাপ মানুষগুলোর সাথে সুন্দর ব্যবহার করে তাকে পরিবর্তন করতে চেষ্টা করে কয়জন!
আমার এই ছোট্ট জীবনে পৃথিবীর টপ লেভেলের ভালো মানুষ এবং সবচেয়ে খারাপ মানুষ উভয়ের সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আজকে এমন একজন খারাপ মানুষের গল্প বলবো যাকে না দেখলে আমার জীবনের বড় একটি অপূর্ণতা থেকে যেতো।
আদালত প্রাঙ্গনে একবার এক নিকৃষ্ট দানবের সন্ধান পেয়েছিলাম, নাম তার জুম’য়া। লোকে তাকে জারজ বলে ডাকতো। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তারই জন্মদাতা পিতা মিথ্যা চুরির মামলা দিয়ে থানায় সোপর্দ করেছিল। যাইহোক, আমার নিজ চোখে দর্শন করা তার কিছু কাহিনি বলি-
গারদের ভিতর একজনের সাথে তর্ক করে কানের উপর দিছে একটা থাপ্পড় বসিয়ে। এরপর সেই ভিকটিমের পরিচিতরা পাকড়াও করে মারতে গেলো। যিনি প্রথমে সামনে গেছে, তার কোমর ধরে উপরে তুলে অন্যদের বলছে এরপর কে আসবি আয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশও লকাপ খুলে ভিতরে যেতে সাহস পায়না। কারণ, সে নাকি আগে একবার জেলখানার সুবেদারকে কুপিয়ে জখম করেছিল। কাজেই তখন গারদের পরিস্থিতি থমথমে। এমন সময় একজন লোক সামনে এগিয়ে এসে মিনতির সুরে বলছে, “জুম’য়া ভাই.. এটা তুমি কি করছো? এভাবে ধরে রাখলে মরে যাবে তো! হাতমুখ ধুয়ে আসো আমার সাথে বিরিয়ানি খাবে।”
আমি খুব আশ্চর্য হলাম। সামান্য একটা কথার মাধুর্যে চোখের সামনে পাথরের মতো শক্ত হৃদয়টা গলে গেছে। তখন সে বলছে, ভাই.. আপনার কথা খুব ভাল লাগলো তাই আজ ছেড়ে দিলাম। নয়তো ওরে এই ফ্লোরে আছাড় মারতাম।
গারদের সামনে দাড়ানো আমরা, আইনজীবীরা, পুলিশ ভায়েরা সবাই এ দৃশ্য দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আইন জগতে পা দিয়ে শিখে গেলাম সকল মানুষের মন জয় করার রহস্য। সকালে একজনের উপর প্রচন্ড রাগ হলে দুপুরেই সব ভুলে যায়। যার সাথে সবাই মিশতে ভয় পায় আমি তার কাছে যেয়ে জুম’য়ার কাহিনী প্রাকটিস করি। তারপর চিন্তা করি মানুষের জীবনটা আসলেই খুব সুন্দর। আমাদের একে অপরের অমার্জিত ব্যবহার, ভুল বুঝাবুঝি, অপরের বদ পরামর্শ এই সুন্দর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে।
তাই আসুন একে অপরকে সম্মান করে বাঁচতে শিখি। অন্যকে দোষারোপ করার চেয়ে নিজেকে সংশোধন করি। মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে “রেসপেক্ট” এর জায়গাটা পরিচ্ছন্ন রাখি।
যেহেতু বিবাহ হলো স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে একটি দেওয়ানী চুক্তি তাই কোনো নারী স্বাবলম্বী হলে তাকে আগের মতো না দেখে তার সাথে চুক্তি আপডেট করুন। অফিসের কোনো কর্মকর্তা যত বেশি দক্ষতা অর্জন করে তার প্রতি কোম্পানির গ্রহণযোগ্যতা, বেতন-সুবিধাদি তত বাড়িয়ে দেয় নয়তো তাকে ধরে রাখা অসাধ্য হয়ে যায়। তেমনি কোনো নারী স্বাবলম্বী হয়ে গেলে তাকে অবাধ্য না বানিয়ে তার সাথে চুক্তি আপডেট করুন। তার প্রতি রেসপেক্ট বাড়িয়ে দিন, তাকে বুঝতে দিন আপনার জীবনে সে অদ্বিতীয়া। হ্যাঁ এটা বলা সহজ কিন্তু করাটা কঠিন কারণ আমাদের হৃদয় ভেঙে চুরমার হলেও মাথা নোয়াবার নয়!
লেখকঃ নাসির আহামেদ
এলএল.বি অনার্স, এলএল.এম
লিগ্যাল এসোসিয়েট, ডকুমেন্টেশন এবং
ড্রাফটিং বিভাগ, চেম্বার অব জুরিস্ট, ঢাকা।
Email: nasir.goodlawyer@gmail.com
Website: nasir.goodlawyer@gmail.com