রিয়াজুল করিম।
হয়তোবা থেমে যাবে কোলাহল, আর শব্দ হবেনা রাস্তাঘাটে টুংটাং রিক্সা বা সাইকেলের আওয়াজ!
সকাল বেলা,স্ত্রী’দের কর্তার নাস্তার তাড়া থাকবে না। থাকবে না তাড়া বাচ্চাদের স্কুলের জন্য তৈরী করে দেবার!
এমনটি আর নাও হতে পারে,
নায়রি কখনও যাবে না তার বাবার বাড়ীর গ্রামের ছাঁয়া ঘেরা ঐ পথে।
হতেই পারে গাছের ডালে আর শালিকের নাচ দেখার কেউ থাকবে না!
থাকবে না কেউ পদ্মা নদীর পাল তোলা নৌকার দিকে চেয়ে,আমার বাবা ফিরবেন আজ সন্ধায়।
প্রিয়তমা তার সখার প্রিয় সাজে সেজে হয়তো অপেক্ষা করছে,অনেক দিন বাদে আজ ফিরবে সে ঘরে!
কিন্তু না!
সব আজ কেমন যেনো উলটপালট হয়ে গেলো!
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে তার রূপের বাহার নিয়ে।
সবুজ বনানী ঠিকই সেজেছে তার সেই চির পছন্দের সেই সবুজ সাজে।
পাখিরা প্রতিদিনের মতই গেয়ে চলেছে কর্মচঞ্চল মূখর করার গান।
নদী ছুটে চলছে তার আপন গন্তব্যে!
ফুল ঠিক-ই ফুটেছে সবুজ পাতার ভাঁজে ভাঁজে!
কিন্তু কি লাভ?
আজ পৃথিবী বড্ড বেশী ক্লান্ত,তার অনেক পরিচিত মুখ হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে।
সবাই হয়তো আবার স্বাভাবিক হওয়ার কঠিন লড়ায়ে নিজেকে দাড় করাবে!
কিন্তু তাতে কি?
সেই প্রিয় মুখ গুলোর সাথে কি আর হাজারও চেষ্টা করলেও দেখা হবে?
কত বাবা ফিরবেন সন্তানের সেই পছন্দের আইসক্রিম হাতে নিয়ে
ফিরবেন সন্তান তার বাবার সাদা পাঞ্জাবির কাপড় নিয়ে।
প্রিয়তম ফিরবেন,
তার প্রিয়তমার জন্য একটি ফুটন্ত তপ্ত গোলাপের থোকা নিয়ে।
কত প্রিয়তমা রান্না করে বসে ঘড়ির কাঁটার দিকে চেয়ে চেয়ে প্রতিটি সেকেন্ড অপেক্ষার প্রহর গুনবেন!
কি লাভ?
হয়তবা সব-ই হয়ে যাবে এই শতাব্দীর কঠিন এক স্বপ্ন ভাঙ্গার ইতিহাস!
এই ইতিহাসও একদিন হারিয়ে যাবে হাজারও ইতিহাসের ভিড়ে।
কিন্তু আমরা মানুষ সব হারাবো শুধু নিজেদের সামান্য ভুলের জন্য-ই।
সেদিন মনে হবে,
আহ্ একটু যদি সচেতন হতাম,তবে আজ এমন পরিনতি আমাদের হতো না।
আমরা হেরে গেছি নিজের অবৈধ লালসার কাছে।
আমরা হেরে গেছি সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষার কাছে।
আমরা হারিয়ে ফেলেছি দুনিয়া।
হারিয়ে ফেলেছি আপন জনের ভালোবাসা।
হারিয়ে ফেলেছি আখিরাত!
আমরা কি পেলাম।
দুনিয়াতে কত কষ্ট করে কত কিছু অর্জন করেছিলাম,সব রেখে আসতে হয়েছে।
যাদের জন্য কত কিছু করেছি
তারা কেউ আমাদের একটি বারের জন্যও খোঁজ করছে না।
কত ওয়াজ শুনেছিলাম সময়ের অভাবে আমল করতে পারি নাই।
শুক্রবারে মসজিদে ইমাম সাহেব কত বয়ান করেছে,সতর্ক করেছে মরতে হবে,
সেখানে কেউ আপন থাকবে না।
স্ত্রী,পুত্র,কন্যা,মা-বাবা সবাই এড়িয়ে যাবে,
পরিচয় অস্বীকার করবে।তোমার নিজের বলতে তাই
যা তুমি নিজে তোমার মৃত্যুর আগেই পাঠিয়ে দিয়েছো এবং আরও কিছু হতে পারে যা রেখে এসেছো এবং তা তোমার মালিকের উদ্দেশ্য কাজে লাগছে।
যা থেকে মানুষ কল্যান লাভ করছে।
করোনা কিন্তু সেই কথাটি-ই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
কেউ তোমার না।
তুমি নিজেই শুধু তোমার!
যা করতে হবে
সব নিজের আখিরাত ঠিক রেখেই করতে হবে।
আখিরাত নষ্ট করে যারা দুনিয়ার সুখ-শান্তি খুজবে তারা সবচেয়ে বড় পাগল।
দুনিয়ার সুখ-শান্তি ক্ষনস্থায়ী।
অতি ক্ষনস্থায়ী,
এই অতি ক্ষনস্থায়ী সময়টা যারা যথার্থ কাজে লাগাতে পারবে
তারাই চিরস্থায়ী সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
তাছাড়া সবাই ব্যার্থতার গ্লানি নিয়ে চিরস্থায়ী অশান্তির জায়গা জাহান্নামের বাসিন্দা হতে হবে।
এখানে তাদের শুধুই আফসোস ছাড়া আর কিছু-ই করার থাকবে না।
যদি খুব সহজ করে বলি তবে বলতে হয়।
নিজের ইচ্ছাকে বন্দি করে সেই জায়গায় আল্লাহ’র ইচ্ছাকে প্রতিস্থাপন করেই নিজের আখিরাতের সুরক্ষা করতে হবে।
আল্লাহ যেখানে যা বলেছেন
সে-টা-ই মানতে হবে
কোন যুক্তি,তর্ক ছাড়া-ই।
কারন যুক্তি-তর্ক মানুষকে অনেক সময়-ই গুমরাহ করে দেয়।
সর্বোপরি কথা হলো, দুনিয়ার লাভক্ষতির হিসাব মিলিয়ে আখিরাত নষ্ট তারা-ই করবে,
যারা বোকার রাজ্যের রাজা!
রিয়াজুল করিম, কবি, লেখক ও হোমিওপ্যাথি প্রাকটিশনার, কুষ্টিয়া । মোবাইল- ০১৭৩৩-১৮৪৬৯৯