সব
facebook apsnews24.com
ফরিয়াদির অনুপস্থিতি এবং আসামীর খালাস প্রাপ্তি - APSNews24.Com

ফরিয়াদির অনুপস্থিতি এবং আসামীর খালাস প্রাপ্তি

ফরিয়াদির অনুপস্থিতি এবং আসামীর খালাস প্রাপ্তি

সোয়েব সিহাব

সিআরপিসি ১৮৯৮, ধারা ২৪৭ অনুযায়ী, “সমন যদি নালিশক্রমে হয়ে থাকে এবং আসামীর হাজির হবার জন্য নির্ধারিত তারিখে অথবা পরবর্তী যে তারিখ পর্যন্ত শুনানি মূলতবী থাকে সেই তারিখে ফরিয়াদী হাজির না হয় তাহলে ইতপূর্বে যে বিধানই থাকুক না কেন, ম্যাজিষ্ট্রেট আসামীকে খালাস দিবে; যদি না তিনি অন্য কোন কারণে অন্য কোন দিন পর্যন্ত মামলার শুনানি মূলতবী রাখতে যথাযথ বিবেচনা করেন।তবে শর্ত এই যে, অভিযোগকারী যদি সরকারী কর্মচারী হন এবং তার ব্যক্তিগত হাজিরা প্রয়োজন না হয়, তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট তাকে হাজিরা হতে অব্যাহতি দিবেন, এবং মামলায় অগ্রসর হবেন।”আজকে সিআরপিসির ২৪৭ ধারাটির বিশ্লেষণ এবং এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।১) এরকম একটি ধারা রাখার কারণ কি হতে পারে? এ ধারাটির গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হলো ফরিয়াদি যেন ইচ্ছা করে কালক্ষেপণ করে মামলার দীর্ঘসূত্রতা বাড়াতে না পারে। (এ জব্বার হাওলাদার বনাম আলী আকবর হাওলাদার ও অন্যান্য, ৫২ ডিএলআর ৩২৯, অনুচ্ছেদ ৫)।অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকেই শত্রুতার জের ধরে মিথ্যা মামলা করে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করে এবং পরবর্তীতে আর আদালতে শুনানি করার জন্য নির্ধারিত দিনে হাজির হয় না। এরকম ক্ষেত্রে কোর্ট যদি মনে করে ফরিয়াদি মামলার দীর্ঘসূত্রতা বাড়ানোর জন্য যথাযথ কারণ ব্যতিত কালক্ষেপণ করছে তাহলে আদালত উক্ত আসামীকে খালাস করে দিবেন ধারা ২৪৭ এর অধীনে।(আরও অনেক কারণ থাকতে পারে)২)

এখন প্রশ্ন হলো যদি যৌক্তিক কোন কারণে ফরিয়াদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে কি হবে?যদি ফরিয়াদি যৌক্তিক কোন কারণে নির্ধারিত দিনে উপস্থিত হতে না পারে এবং এর পিছনের কারণটির যথাযথ ব্যাখ্যা থাকে তাহলে আদালত ফরিয়াদির অনুপস্থিতির কারণ দেখিয়ে আসামীকে খালাস করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে শুনানি মুলতবি করে পরবর্তী দিন ধার্য করতে হবে। একটি মামলায় ফরিয়াদি নির্ধারিত দিনে অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি এবং তার আইনজীবীর মাধ্যমে কোর্টে তার না থাকতে পারার পক্ষে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট উপস্থাপন করে, কিন্তু তারপরও ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত আসামীকে খালাস করে দিলে উচ্চ আদালত তার এ আদেশ অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। (এ জব্বার হাওলাদার বনাম আলী আকবর হাওলাদার ও অন্যান্য, ৫২ ডিএলআর ৩২৯)।

এ মামলার মাধ্যমে উচ্চ আদালত বিষয়টিকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ৩) সেশন কোর্টের কি এরকম এখতিয়ার আছে?উত্তর হলো, নেই। কেন নেই সেটি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি।সিআরপিসি চ্যাপ্টার ২০ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কর্কৃক মামলা ট্রায়াল করার বিধানগুলো দেয়া আছে আর চ্যাপ্টার ২৩ এ সেশন কোর্ট কর্কৃক ট্রায়াল করার বিধান। তবে ফরিয়াদির অনুপস্থিতিতে আসামীকে খালাস দেয়ার বিধানটি শুধু চ্যাপ্টার ২০ এর অধীনে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেরই রয়েছে যেটি চ্যাপ্টার ২৩ এ অনুপস্থিত। ধারা ২৪৭ এর অধীনে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চাইলে আসামীকে খালাস দিতে পারেন কিন্তু সেশন কোর্টের জন্য এমন বিধান না থাকায় সে ফরিয়াদির অনুপস্থিতির জন্য আসামীকে খালাস দিতে পারে না, কোর্ট অব সেশন যেটা করতে পারে ধারা ৩৪৪ এর অধীনে শুনানির জন্য সময় বাড়িয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য মুলতবি করতে পারেন। (মোঃ তাহেরউদ্দিন বনাম আবুল কাশেম ও অন্যান্য, ৩৭ ডিএলআর ১০৭, অনুচ্ছেদ ৫,৬ ও ৭)৪) এতক্ষণে বুঝা গেল কোন আদালত ফরিয়াদির অনুপস্থিতিতে আসামীকে খালাস দিতে পারেন।

এবার দেখা যাক আসামীর এ অধিকার শুধু সমন/summon মামলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নাকি ওয়ারেন্ট/warrant মামলায়ও পেতে পারে?ধারা ২৪৭ কে দেখলে সহজেই বুঝা যায় এ ধারায় শুধু সমন মামলার কথাই বলা হয়েছে, ওয়ারেন্ট মামলার বিষয়টি উল্লেখ নাই। কিন্তু একটা ঝামেলা শুরু ১৯৮২ সালের পর থেকে। বিষয়টি বুঝার জন্য একটু ব্যাখ্যার দরকার আছে।১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত সমন মামলার ট্রায়াল ও ওয়ারেন্ট মামলার ট্রায়াল আলাদা আলাদা করে যথাক্রমে চ্যাপ্টার ২০ ও ২১ এর অধীনে ছিলো। কিন্তু ১৯৮২ সালে সিআরপিসি থেকে চ্যাপ্টার ২১ তুলে দেয়া হয় এবং চ্যাপ্টার ২০ এর অধীনে সমন ও ওয়ারেন্ট উভয় মামলার ট্রায়াল করা শুরু হয়। তারপর থেকেই একটা ঝামেলার তৈরি হয় যা পরবর্তী কিছু কেস ল তে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

সিআরপিসি’র অধীনে সমন ও ওয়ারেন্টকে আসামীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য দুটি আলাদা মাধ্যম হিসেবে দেখানো হয়েছে যদিও এ দুই মাধ্যমকে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ১৯৮২ সালের পর থেকে চ্যাপ্টার ২০ কে সমন ও ওয়ারেন্ট উভয় মামলা ট্রায়ালের এখতিয়ার দিলেও সমন বলতে ২৪৭ এর অধীনে ওয়ারেন্টকেও বুঝাবে না। (হাজী হাফেজ মোঃ শামসুল ইসলাম বনাম আব্দুল মাবুদ, ৪১ ডিএলআর ৩২১, অনুচ্ছেদ ৬)২৪৭ ধারার অধীনে শুধু সমন জারির মামলায় আসামী খালাসের অধিকার দাবি করতে পারবে, অন্য ক্ষেত্রে পারবে না। ( সজীব মো. ও অন্যান্য বনাম মোঃ আব্দুল খালেক আকন্দ ও অন্যান্য, ৫১ ডিএলআর এডি ১১৯)১৯৮২ সালের পর থেকে একই চ্যাপ্টারের অধীনে সমন ও ওয়ারেন্ট মামলার ট্রায়াল চললেও শুধু সমন মামলায় এরকম অধিকার রাখাটা কতটা যৌক্তিক!

এ প্রসঙ্গে আদালত বলেছেন ১৯৮২ সালে চ্যাপ্টার ২১ রহিত করে ওয়ারেন্ট মামলা কে চ্যাপ্টার ২০ এর অধীনে করার পরও যেহেতু আইন প্রনয়ণকারী কর্তৃপক্ষ ২৪৭ ধারাটির সমন বিষয়টি সংশোধন করে ওয়ারেন্টকেও যুক্ত করেনি তাই আদালত চাইলেও ২৪৭ এর অধীনে সমন এর সাথে ওয়ারেন্ট মামলাও যুক্ত করতে পারে না। (হাজী হাফেজ মোঃ শামসুল ইসলাম বনাম আব্দুল মাবুদ, ৪১ ডিএলআর ৩২১, অনুচ্ছেদ ৬)এ মামলা থেকে এ বিষয়টি বুঝা যায় ১৯৮২ সালের পর থেকে ২৪৭ ধারার এ বিশেষ অধিকারটি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন রয়েই গেছে। প্রশ্ন রয়ে গেছে ইকুয়ালিটি বিষয় নিয়েও।

সোয়েব সিহাব, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাবি।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj