আমার এক বন্ধু হিসাববিজ্ঞানে অনার্স- মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। চাকরির বাজার সহজলভ্য না হওয়ায় সে অনেকটাই হতাশ। বয়স ৩০ ছুঁই ছুঁই কিন্তু ভালো চাকরি না পাওয়ায় পাত্রীপক্ষের লোকজন বিভিন্ন অজুহাতে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমি তার কাছে ডিপ্রেশনের বাস্তবতা খুঁজতে যাই। সে হিসাববিজ্ঞানে পারদর্শী হলেও নিজের জীবনের হিসাব মিলাতে পারিনি। তাইতো কথার মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে এই জীবনে বেঁচে থেকে কি-বা লাভ!
বিভিন্ন কারণে হতাশ হয়ে নারী-পুরুষের Suicide বা আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। কিছু মানুষ আছে যারা কারর উপর অভিমান করে প্রতিশোধ স্বরূপ নিজের জীবন শেষ করে দিতে সুইসাইড করে থাকে। কিন্তু কিছু মানুষ অভিমান ছাড়াই সুইসাইড করে। এদের ইহকালে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া বেটার মনে হওয়ার পর যখন নিজের অবস্থা বিবেচনা করে অনুধাবন করে পরকালেও বেহেশতে যাবার সম্ভাবনা নাই, তখন সে সুইসাইডের মতো জঘন্য কাজ করে অন্তত দুনিয়ার ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত করিয়ে দেয়। এভাবে যারা সুইসাইড করে তারা অধিকাংশ নিতান্তই জ্ঞানী মানুষ। কিন্তু এত জ্ঞান থাকার পরেও নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার মতো অজ্ঞতা তাদের হৃদয়ে কিভাবে বাসা বাঁধে!
আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী রয়েছে ডিপ্রেশন। অনেকে বলে থাকে স্রষ্টার সাথে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হলে শুধু তারাই ডিপ্রেশনে ভোগে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত মতবাদ অনুযায়ী ডিপ্রেশন মূলত এক ধরণের মানুষিক রোগ যা সেই মানুষটির স্বাভাবিক জীবনটা কারণে বা অকারণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিনের ঝামেলা, মানুষিক আঘাত, অফিসের কাজের চাপ বা ব্যবসায়িক কাজের চাপের কারণে ডিপ্রেশন তৈরি হয়। এভাবে দীর্ঘদিন মানুষিক চাপে থাকতে থাকতে একসময় যখন অযথাই মানুষিক চাপ তৈরি হয় এবং তা থেকে নিজেকে মুক্ত করা অসাধ্য মনে হয় তখন এমন ডিপ্রেশন মূলত এক ধরণের মানুষিক রোগ। এমন মানুষিক রোগ থেকে নিরাময়ের জন্য আশেপাশের ঘনিষ্ঠ মানুষের সাথে অধিক সময় কাটানো প্রয়োজন।
এবার আত্মহত্যা সম্পর্কিত আইনকানুন জেনে রাখতে পারেন। দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর ৩০৯ ধারা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করিবার উদ্যোগ করে এবং অনুরূপ অপরাধ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করে, সেই ব্যক্তি বিনাশ্রম কারাদণ্ডে যাহার মেয়াদ এক বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত
হবে ।
অপরদিকে, কোন ব্যক্তিকে আত্মহত্যা করতে সহায়তা করলে একই আইনের ৩০৬ ধারা মোতাবেক দশ বৎসরের কারাদন্ডে দন্ডিত হবে তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে। কিন্তু ৩০৫ ধারা মোতাবেক আঠার বৎসরের কম বয়স্ক কোন ব্যক্তি, কোন উন্মাদ ব্যক্তি, কোন বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি, কোন জড় বুদ্ধির ব্যক্তি অথবা কোন প্রমত্ততাগ্রস্ত ব্যক্তি আত্মহত্যা করিলে, অনুরূপ আত্মহত্যা অনুষ্ঠানে সহায়তাকারী ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে, কারাদণ্ডে বা অনধিক দশ বৎসরকাল মেয়াদী কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবে।
লেখাঃ আত্মহত্যা কারা করে, কেনো করে?
লেখক: নাসির আহামেদ
এলএল.বি অনার্স, এলএল.এম
লিগ্যাল এসোসিয়েট, চেম্বার অব জুরিস্ট, ঢাকা।
Email: nasir.goodlawyer@gmail.com