নাসির আহমেদ
বিচারপ্রার্থী মানুষের প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস,
আইনজীবীর দেওয়া অন্তিম আশ্বাস,
বিচারকের প্রতি অগাধ বিশ্বাস…
এই তিনের সাথে চলতে থাকে মামলার কার্যক্রাম। কখনওবা আকাশের তাঁরাসম আইনের ধারায় পেঁচিয়ে যায় সমস্ত প্রক্রিয়া। বাধাগ্রস্ত হয়ে যায় ন্যায়বিচার, ভারী হতে থাকে বিচারপ্রার্থী মানুষের দীর্ঘশ্বাস। আইনজীবীর দেওয়া আশ্বাসে মরিচা পড়তে শুরু করে কারণে বা অকারণে।
বিচারকের দিকে অগাধ বিশ্বাস নিয়ে বিচারপ্রার্থী মানুষের তাকিয়ে থাকা অনেকটা যুদ্ধবিধ্বস্ত মজলুম জনপদের মতো মনে হয়। আইনের প্যাঁচে মামলা বিলম্বিত হওয়া দেখে তাদের মনের পৃথিবীটা ছোট হতে শুরু করে। একরাশ হতাশা নিয়ে ভাবতে থাকে স্রষ্টা তাঁর অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে সমাধান এনে দিক। এসব কারণে এক একটি মামলার পক্ষগণ কি যে ভোগান্তির শিকার হয় তা বলা বাহুল্য।
গতকাল ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১, আমার নিজ এলাকা ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞ বিচারক, যুগ্ম জেলা জজ জনাব তাজুল ইসলাম স্যারের সাথে সময় কাটালাম।
স্যারের এজলাসে বিচার প্রক্রিয়া দেখলাম, অনুধাবন করলাম। স্যারের সাথে দেখা হওয়ার আগে বিচারপ্রার্থী কিছু মানুষের কাছে স্যারের অনেক সুনাম শুনেছিলাম তিনি খুব আন্তরিকতার সাথে বিচারকাজ পরিচালনা করেন। কাল স্যারের এজলাসের সামনে মামলার হাজিরা দিতে আসা বিচারপ্রার্থী কিছু মানুষের কাছেও স্যারের আন্তরিকতা ও সকলকে রেসপেক্ট করার বিভিন্ন প্রশংসা শুনলাম। আমি একটা সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখি যেই জীবনটা হবে সকলের জন্য অনুপ্রেরণা।
কাল সারাদিন শ্রদ্ধেয় স্যারের সাথে সময় কাটিয়ে অনুধাবন করলাম আমার দেখা সেই স্বপ্নটার মতো করে সাজিয়ে তুলেছেন স্যারের নিজের জীবন। অহংকারমুক্ত সদা হাস্যজ্বল দায়িত্ববান মানুষের চেয়ে সুন্দর জীবন আর কি হতে পারে!
এ-তো বললাম একজন বিচারকের আন্তরিকতার কথা। কিন্তু প্রতিটি মামলার কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে থাকে অসংখ্য প্রক্রিয়া। সকল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের সততা, আন্তরিকতা না থাকলে দূর্ণীতিগ্রস্থ মানুষের ঘাত প্রতিঘাতে বাধাগ্রস্ত হতে থাকে মামলার কার্যক্রম। আইনজীবী থেকে শুরু করে আদালতের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ – প্রশাসন সহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতা দ্রুত বিচার করতে সহায়তা করে বিচাররকে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় বিচারকের নামে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ার ভয় দেখিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি করানোর কথা বলে টাকাপয়সা আদায়ের জন্য কর্মচারীরা বিচারপ্রার্থী মানুষকে ভোগান্তি দেয়। বিচারপ্রার্থী মানুষেরা বিচারকের সাথে সরাসরি কথা বলার তেমন সুযোগ না পাওয়াতে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের ভীতি প্রদর্শনের বৃত্তান্ত চাপা পড়ে থাকে বিচারপ্রার্থী মানুষের মনে। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হয়ে চেলেছেন অনেকে। এসব অভিযোগ দেশব্যাপী বিদ্যমান হলেও আশার আলো ফুটেছে খুব কম।
আমি সেদিনের স্বপ্ন দেখি, যেদিন দেশের অন্তত ৮০% মানুষ আমার দেখা স্বপ্নের আত্মপ্রকাশ করবে নিজেদের জীবনে। যেদিন ভালো মানুষদের ভয়ে কেউ অন্যায় কাজে দুঃসাহস দেখাবেনা। বিচারপ্রার্থী মানুষের দীর্ঘশ্বাস হালকা হয়ে যাবে। আইনজীবীর দেওয়া আশ্বাসে হতাশ হবেনা কেউ। বিচারকের উপর বিশ্বাস হারাবেনা খারাপ মানুষের অপবাদে। সেদিন থেকে আদালত হবে সকল বিচারপ্রার্থী মানুষের অগাধ বিশ্বাসের জায়গা।
লেখকঃ নাসির আহামেদ
এলএলবি অনার্স, এমএলএম
এসোসিয়েট, চেম্বার অব জুরিস্ট, ঢাকা।
Email: nasir.goodlawyer@gmail.com