জামাল উদ্দিন
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের কারাগার থেকে শিগগির মুক্তি পাচ্ছেন প্রায় এক হাজার বন্দি। তাদের মুক্তির বিষয়টি এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে বন্দিদের সঠিক সংখ্যা এবং ঠিক কবে নাগাদ এসব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া শুরু করা যাবে সেটি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়াগুলো শেষ হলেই মুক্তি দেওয়া শুরু করা হবে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কারাবন্দিরাও ঝুঁকির বাইরে নেই। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গত ৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন হত্যা, ধর্ষণ ও এসিড মামলাসহ গুরুতর মামলার আসামি বাদে দীর্ঘদিন জেলখাটা ও লঘু অপরাধে দণ্ডিত আসামিদের মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারা কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেয়।
নির্দেশনা পেয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মামলার প্রায় দেড় হাজার আসামির তালিকা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই তালিকা থেকে বিধি ও নীতিমালা অনুযায়ী চিহ্নিত করে দেয় কোন কোন মামলার আসামিদের মুক্তি দেওয়া যাবে না। সেই তালিকা এখন কারা কর্তৃপক্ষের হাতে। নতুন করে তালিকাটি চূড়ান্ত করে আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই বন্দিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করা হবে।
হাজতিদের একটি তালিকা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। ওই তালিকায় প্রায় ১৪ ধরনের আসামির নাম ছিল। সব ধরনের মামলার আসামিদের নামই সেখানে রাখা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমরা প্রায় দেড় হাজার আসামির একটি তালিকা পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে কিছু বাদ দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাদ পড়া বন্দিদের মধ্যে রয়েছে, মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, পরে আপিলের রায়ে যাবজ্জীবন হয়েছে। যারা শিশু হত্যা করেছে, ধর্ষণ ও অপহরণের পর হত্যা করেছে, এসিড নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি, অস্ত্র আইনে মামলার আসামি-এমন মামলার আসামিদের মুক্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের আসামিরা এই মুক্তির নীতিমালায় আসবে না। আইন মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে।
এছাড়া একাধিক মামলার আসামি, যাদের সাজা হয়েছে কিন্তু আপিল চলমান, তাদেরও তো আমরা ছাড়তে পারি না।
কারা অধিদফতরের এই শীর্ষ কর্মকর্তা আরও বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী আসামিদের চিহ্নিত করতে কিছুটা সময় লেগেছে। কারণ, ১০ জন বন্দিকে মুক্তি দিয়ে দিলাম। দেখা গেলো সেখানে উল্লেখিত মামলার দুই জন আসামি ছাড়া পেয়ে গেছে- এটা হবে খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। সেজন্য আমরা খুব সতর্কভাবে কাজ করছি। তবে কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগির মুক্তি দেওয়া শুরু করা যাবে।
কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, জামিনযোগ্য অপরাধ কিন্তু বিচারাধীন মামলা, সেসব মামলার আসামিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়েও কাজ চলছে। তবে একটু সময় লাগবে। প্রথমে আমরা কারাবিধির ৫৬৯ বিধিতে যাদের মুক্তি দেওয়া যাবে, সেটি নিয়েই সবার আগে কাজ করছি। এ তালিকা অনুযায়ী এক হাজারের কিছু কম আসামি মুক্তি পাবে। সেই তালিকা চূড়ান্ত করে আমরা দুই একদিনের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারবো। আর বাকিগুলো একটু পরে হবে। হয়তো একটু সময় লাগবে।
তিনি বলেন, এক বছর সাজাপ্রাপ্ত যারা, তাদের মুক্তির বিষয়েও কাজ মোটামুটি এগিয়েছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে সময় বলা যাচ্ছে না, কবে নাগাদ তাদের মুক্তি দেওয়া যাবে।
কারাবিধির ৫৬৯ বিধি অনুসারে কোনও বন্দি তার সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ সম্পন্ন করলে সেই বন্দির বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ না থাকে, তবে সরকার চাইলে বিশেষ সুবিধায় তাকে মুক্তি দিতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব শহীদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বন্দি মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিছু আইনি বিষয় রয়েছে। সেগুলো শেষে কবে নাগাদ মুক্তি দেওয়া শুরু করা যাবে সেটা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তবে দ্রুত কাজ চলছে। সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন।
এপিএস/১৯এপ্রিল/টিআইএস