আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যতম বিস্ময়কর আবিষ্কার ইন্টারনেটের আবিষ্কার ও ব্যবহার। বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত গতিময়তার এক মাইল ফলক ইন্টারনেট । আবার এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে হ্যাকিং। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই কমবেশি হ্যাকিং শব্দের সাথে পরিচিত। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে হ্যাকিং শব্দটি আরও বেশি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। কিন্তু এই হ্যাকিং কি? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। তাই চেষ্টা করব হ্যাকিং সংক্রান্ত কিছু তথ্য তুলে ধরতে।
মূলত হ্যাকিং হচ্ছে “ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাইবার স্পেসে কোন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার কোন নেটওয়ার্কে বা কম্পিউটারে প্রবেশ করে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গ্রহণ করা, মুছে ফেলা বা এমনভাবে পরিবর্তন করা বোঝায় যা ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকারক হয়।” এবং “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮” এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী
”হ্যাকিং” অর্থ—
“কম্পিউটার তথ্য ভাণ্ডারের কোনো তথ্য বিনাশ, বাতিল, পরিবর্তন বা উহার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাসকরণ বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিসাধন; বা নিজ মালিকানা বা দখলবিহীন কোনো কম্পিউটার, সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশের মাধ্যমে উহার ক্ষতিসাধন।” এখান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, হ্যাকিং বিষয়টি শুধুমাত্র সাইবার স্পেসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এর জন্য কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয় যার মাধ্যমে নেটওয়ার্ক, ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের হ্যাক করা হয়ে থাকে। যে বা যারা এই হ্যাকিং সিস্টেমের সাথে জড়িত তাদের বলা হয় হ্যাকার। হ্যাকাররা সাধারণত বিভিন্ন নেটওয়ার্ক, ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ত্রুটি বের করে সেই ত্রুটির ওপর ভিত্তি করেই হ্যাক করে। এই হ্যাকারদের কাজের উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
i. ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার-এরা নিজেদের জ্ঞানকে খারাপ উদ্দেশ্যে বা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে।
ii. হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার-শুধুমাত্র ভালো উদ্দেশ্যে নেটওয়ার্ক ওনারের সম্মতিক্রমে হ্যাকিং করে।
iii. গ্রে-হ্যাট হ্যাকার-এরা উভয় ধরনের কাজ করে।
সাধারণত হ্যাকাররা বিভিন্ন ধরনের কোডিং এর মাধ্যমে হ্যাকিং করে থাকে। যা key logger নামে পরিচিত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি কোন ব্যক্তি হ্যাকিং করে থাকলে এটি কোন অপরাধ হবে কিনা?
যদি কোন ব্যক্তি সাইবার স্পেসের মাধ্যমে অনুমতি ছাড়া আপনার কোন নেটওয়ার্কে বা কম্পিউটারে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গ্রহণ করে, মুছে ফেলে বা পরিবর্তন করে তাহলে সেটা হবে একটি অপরাধ। যার বিরুদ্ধে আপনি আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারবেন। এ সম্পর্কে “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮“ এর ৩৪ ধারা তে হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ধারাতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং করলে তিনি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং উল্লেখিত অপরাধটি দ্বিতীয় বার সংঘটন করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ (পাঁচ) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।
হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়
হ্যাকিং থেকে বাঁচতে হলে অপরিচিত লিংক বা সাইটে সাইন ইন করা যাবে না যেটা আপনি অপরিচিত কোন ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পেয়েছেন। অপরিচিত সফটওয়ার ব্যবহারের আগে সর্বচ্চো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনার সিস্টেমকে নিরাপত্তা দিতে পারে এমন সফটওয়ার বা এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ইমেইল বা পাসওয়ার্ড আদান প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
লেখকঃ সাজিদ মাহমুদ ভুইয়া, শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট, ইমেইল- shajidmahmud@gmail.com