সব
facebook apsnews24.com
স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ ও স্বাস্থ্য-সেবা দানকারীরা, ভাবছে না কেউ - APSNews24.Com

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ ও স্বাস্থ্য-সেবা দানকারীরা, ভাবছে না কেউ

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ ও স্বাস্থ্য-সেবা দানকারীরা, ভাবছে না কেউ

নুরন্নবী সবুজ

একজন সাধারণ ব্যক্তির অতি মাত্রায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরুনোর উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কিছু পেশা ও পেশার সাথে জড়িত মানুষ তারা ছুটি পাইনি বরং তাদের দ্বায়িত্ব ও কাজ অনেক বেড়েছে আর তার চেয়েও যা বেড়েছে তা হলো কাজ করার ঝুকি। পুলিশ, আর্মি বা ডাক্তাররা তাদের দ্বায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছেন তাদের সাধ্যমত। ব্যাংকাদের প্রতিও সরকার বিশেষ ভাবে নজর দিয়েছেন। কিন্তু এতো কথার ভিড়ে আমরা যাদের কথা ভুলে গেছি বেমালুম তারা হলো রাতদিন খেটে চলা সাহসী এক ঝাক জীবন যোদ্ধা মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ। এরা বরাবরের মত সুবিধা বঞ্চিত।

কথায় আছে মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না। এনারাও চিকিৎিসক ও চিকিৎসা পেশার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও তাদের মূল্যায়ন নেই বললেই চলে। সম্প্রতি ব্যাংকারদের দ্বায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ সুবিধা তৈরী করা হয়েছে। সরকারী প্রণোদনার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে যাচ্ছে। দিনের কর্ম সময় ৮ ঘন্টার দাবীতে ১৮৮৬ সালে শিকাগোর শ্রমিকরা প্রাণ দেয় এবং ৮ ঘন্টা কর্ম ঘন্টা আইনের মাধ্যমে স্বিকৃত পায় । কিন্তু মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ দের ৮ ঘন্টার বেশী কাজ করতে হয় বরাবর কোন বিশেষ কোন সুবিধা ছাড়াই । তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে হয়ত রোগের ঔষুধ পত্র এতো বেশী সহজ লভ্য হতো না।

তাই তারা মাঠ পর্যায়ে অবিরত কাজ করে চলে। রোদ বৃষ্টি বা ঝড় তাদের সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত। এই পেশায় কাজ ও দ্বায়িত্ব অনেক বেশী কিন্তু প্রাপ্তি অনেক কম। বর্তমানে করোনা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশে এমনিতেই ডাক্তাররা আর সর্দি , কাশি বা শ্বাস কষ্টের রোগী দেখা কমিয়ে দিয়েছেন । তার উপর সামপ্রতিক সময়ে একজন ডাক্তারের মৃত্যু এই আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে তুলছে। আর তাই যে আক্রান্ত তার সেবা যেমন নিশ্চিত করা যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা তাদের সেবা দিবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।আমরা যদি সেবা দানকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে সেটা আমাদের বড় ব্যার্থতা হয়ে থাকবে।

ঔষুধ কোম্পানিগুলো তাদের লাভ আর ব্যবসার জন্য মাঠ পর্যায়ে হাজার হাজার মানুষকে কাজে লাগিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে তারা কিছু ভাবছে বলে মনে হয় না। একটি স্বাবলম্বী জীবনকে ঘিরে অনেক জীবন অবলম্বন করে, টিকে থাকে। ব্যাংকাররা করোনা আক্রান্ত হলে ৫-১০ লক্ষ টাকা দেবার কথা বলা হয়েছে । জীবিত থাকা অবস্থায় যদি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না যায় তাহলে মারা যাবার পর বা আক্রান্ত হবার পর তারা সে টাকা দিয়ে কি করবে তারা? তবুও কথা থাকে পেশা হিসেবে তো শুধু ব্যাংকার বা ডাক্তার গণই ঝুকির মধ্যে নাই বরং নার্স, ঔষুধ বিক্রেতা বা হাসপাতালের প্রত্যেক কর্মচারী ঝুকির মধ্যে আছে ।

তাদের জীবন ও শ্রমের কি কোন মূল্য নেই ? তাদের পরিবার কি তাদের ভালোবাসে না? যখন সামাজিক দুরুত্ব নিয়ে মুখে ফেনা তোলা হচ্ছে ও ৬ টার পর বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ করা হচ্ছে তখনো জীবন ও জীবিকার তাগিদে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের বাইরে যেতে হচ্ছে। তাদের সামাজিক ভাবে যেমন মূল্যায়ন করা হচ্ছে না তেমনি রাষ্ট্রও খুব বেশী তাদের প্রতি সদয় বলে মনে হয় না।ভাবখানা এখন মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের করোনা হবে না আর হলেও কার কি এসে যায়। কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার জন্য হাজার হাজার পরিবার ও ব্যক্তিকে ঝুকির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে তার দায়ভার কে নিবে। তারা চাইলেই অন্তত নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি জোর দিয়ে তাদের সেবা মূলক কাজ চালাতে পারে। হয়ত ঔষুধ কোম্পানির কাজ আপাতত স্থগিত রাখা সম্ভব হচ্ছে না তাই বলে কি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না? সদিচ্ছা থাকলে যারা ঝুকি নিয়ে কাজ করছে তাদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

এটা না করতে পারলে আমরা যার ভয়ে এতো কিছু করছি সে তো আমাদের আরো পেয়ে বসবে। সরকারীভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ।এই প্রণোদনার একটি বড় অংশ যাওয়া উচিত ছিলো যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ও কাজ করতে হবে তাদের নিরাপত্তার জন্য । সংক্রমক রোগ বলে আগে এর বিস্তার রোধে করতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিশ্চিত করা জরুরী তারপর সেবা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সেবা নিশ্চিত করতে যাওয়া একরকম ছাইয়ে ঘি ঢালার মত। শুধু একমুখী চিন্তা করে বহুমুখী সুবিধা পাওয়া সম্ভব না।

সংক্রমক রোগের ঝুকির কারনে সংক্রমক রোগ ( নির্মূল ও প্রতিরোধ ) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী পুরো বাংলাদেশকে ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশের এহেন পরিস্থিতিতে যারা আমাদের জীবন বাচানোর প্রয়োজনীয় ঔষুধ সরবরাহ ও যারা সেবা দানের কাজ করছে তাদের পেশাও ঝুকিপূর্ণ কোন না কোন ভাবে। আর তাই তাদের নিরাপত্তা জোর দার করা সময়ের দাবী। আর নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের এই মহান কাজের স্বিকৃতিও দেয়া আমাদের কর্তব্য।

লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ, আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট। mdnurunnobiislam379@gmail.com

মতামতের জন্য লেখকই দায়ী থাকবেন।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj