কোর্ট প্রতিবেদক/এপিএসনিউজ
আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ থাকার পরও ধর্ষণ মামলায় জামিন দেয়ায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কামরুন্নাহারকে তলব করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আগামী ২ এপ্রিল তাকে সকাল ৯টার সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে, আসামি আসলাম শিকদারের জামিন বাতিল করা হয়েছে। তাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় আসামিপক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল বিভাগের আদেশ থাকার পরও আসামিকে জামিন দেয়া আদালত অবমাননার শামিল। এভাবে আদেশ দেয়া হলে নিম্ন আদালতে শৃঙ্খলা থাকে না।’
জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর হাতিরঝিল থানায় ধর্ষণের অভিযোগে আসলাম সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় ওইদিনই আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্ত শেষে একই বছরের ১৪ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এরপর গতবছর ৬ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয় ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। এ অবস্থায় আসামির আবেদনে হাইকোর্ট গতবছরের ১৮ জুন তাকে জামিন দেন। এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির কাছে আবেদন করা হয়।
এ আবেদনে চেম্বার জজ আদালত ২৫ জুন জামিন স্থগিত করেন। পরবর্তীতে এই স্থগিতাদেশ বাড়ানোর জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এই আবেদন বিচারাধীন। এ অবস্থায় গত ২ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আসামি আসলাম সিকদারকে জামিন দেয়। এই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের ওপর শুনানিকালে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হয়। শুনানিকালে আদালত তাৎক্ষণিকভাবে মামলার নথি তলব করেন। এরপর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে নিম্ন আদালত থেকে মামলার নথি আনা হয়। নথি আসার পর তা পর্যালোচনা করেন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। এরপর আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, এ মামলায় ট্রাইব্যুনাল ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ওই আসামির জামিনের আবেদন খারিজ করে। এরপর আসামি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলে হাইকোর্ট জামিন না দিয়ে ৪ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ৩০ জানুয়ারি দিন রাখা হয়। কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই বিচারক বদল হয়। নতুন বিচারক হিসেবে বেগম মোছা. কামরুন্নাহার গত ২৮ জানুয়ারি যোগ দেন। নতুন বিচারক আসায় নতুন করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২ মার্চ দিন রাখা হয়। নির্ধারিত দিনে মামলার বাদীর আবেদনে আবারও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ১২ এপ্রিল দিন রাখা হয়েছে। ওদিকে আসামির আবেদনে গত ২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল তাকে জামিন দেন। এই জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এনএস/এপিএসনিউজ