কোন কাজ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য দুইটি উপাদান থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রথমত কাজ করার জন্য পরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা। ঠিক তেমনই কোন অপরাধ সংগঠনের জন্য প্রথমে পরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ‘ক’ ‘চ’ এর বাসায় ডাকাতি করার জন্য পরিকল্পনা করে এবং সে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার চার বন্ধু ‘খ’, ‘গ’, ‘ঘ’ এবং ‘ঙ’ সাথে নিয়ে ‘চ’ এর বাসায় ডাকাতি করতে যায়।” আলোচ্য উদাহরনে ক ডাকাতি এর উদ্দেশ্য একটি প্লান তৈরি করে যা অপরাধ সংগঠনের প্রথম শর্ত দুষ্টমন বা মেনসরিয়া পুরন করে। অতঃপর ‘ক’ তার চার বন্ধকে সাথে নিয়ে ‘চ’ এর বাসায় ডাকাতি করতে যায় যা অপরাধ সংগঠনের দ্বিতীয় শর্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের বাস্তবায়ন বা এক্টাসরিয়া পুরন করে।
‘ক’ তার চার বন্ধু কে নিয়ে ডাকাতি শেষে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয় এবং পুলিশ তাদের কে আদালতে বিচারের জন্য চালান করে। বিচারকার্য শুরু হলে ‘ক’ এর চার বন্ধুদের মধ্যে কোন একজন দাবি করে যে সে উক্ত অপরাধের সাথে জড়িত নয় কিন্তু তার বাকি বন্ধুরা মিলে ওই অপরাধ সংগঠন করেছে। এমতাবস্থায় ওই ধরনের স্বীকারোক্তির আইনগত ভিত্তি কি হতে পারে?
এই সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনে বিস্তারিত বলা হয়েছে। সাক্ষ্য আইনের সাধারণ নিয়ম হল যে ব্যক্তি স্বীকারোক্তি প্রদান করে উক্ত স্বীকারোক্তি তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে অন্যকোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারা এই নিয়মের ব্যতিক্রম। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারার বিষয়বস্তু হচ্ছে “যে স্বীকারোক্তী উক্ত স্বীকারোক্তিকারক ও তাহার সহিত একই অপরাধে যৌথভাবে বিচারাধীন ব্যাক্তিকে প্রভাবিত করে তাহা বিবেচনাঃ যেখানে একই অপরাধে একাধিক ব্যাক্তির যৌথভাবে বিচার হইতেছে এবং তাহাদের মধ্যে একজনের দোষস্বীকার , যা দ্বারা সে নিজেকে ও অন্যকে জড়িত করিয়াছে, তাহা প্রমাণ করা হইয়াছে, সেখানে আদালত উক্ত দোষ স্বীকার কারী ও অপর ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সেই দোষ স্বীকার বিবেচনা করিতে পারেন”। অর্থাৎ শুধুমাত্র একজন সহআসামীর স্বীকারোক্তি সাক্ষ্য হিসেবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
৩০ ধারা অনুযায়ী কোন স্বীকারোক্তি সহ-অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে। যদি একের অধিক ব্যক্তিকে একই অপরাধের জন্য বিচার করা হচেছ, সেখানে কোন একজন অভিযুক্ত নিজেকেসহ অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জড়িয়ে কোন দোষ স্বীকারোক্তি প্রদান করলে উক্ত স্বীকারোক্তি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হলে তা স্বীকারোক্তি প্রদানকারীসহ অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এই ধারার মুল উপাদান হচ্ছে –
Ø একই অপরাধের জন্য যৌথভাবে বিচার করা হচেছ।
Ø অভিযুক্ত ব্যক্তির নিজেকেসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের জড়িয়ে কোন দোষ স্বীকার করা।
এই দুইটি শর্ত পুরন করলে সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী কোন স্বীকারোক্তি সহ-অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে।
লেখকঃ সাজিদ মাহমুদ ভুইয়া
শিক্ষানবিশ আইনজীবী
ঢাকা জজ কোর্ট
ইমেইল- shajidmahmud@gmail.com