ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর
ধরা যাক আপনি কখনো জমিজমার দলিলের ভাষা বোঝার তেমন কোনো চেষ্টা করেননি।
কারণ, কখনো দরকার হয়নি।
আর তাছাড়া জমিজমার দলিল পড়া তো আর হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ার বা নাটক দেখার মতো কোনো আনন্দময় অভিজ্ঞতা না।
হঠাৎ ঠেকায় পড়ে পারিবারিক জমির ভেজাল সামলানো কিংবা অন্য কোনো কারণে আপনি জমিজমার দলিল ঘাটতে বাধ্য হলেন।
এসব পড়তে যেয়ে হঠাৎ আবিষ্কার করলেন যে এগুলো এক অদ্ভুত ভাষায় লেখা।
অক্ষর বাংলা হলেও এটি ভর্তি অজস্র আজব শব্দ যেমন
পিং, জং, মং, দং, জেএল নং, মৌরশি, তৌজি, ডিং, কানি, গন্ডা, অযুতাংশ, দ্রোন, কাহন, রেণু, ধুল, দন্ত, কন্ঠ, পণ, কাক,তিল, সাই কানি, কাচ্চা কানি/ মঘী কানি /তিপরা কানি/ ছোট কানি এরকম অনেক শব্দে।
আর দলিল ও কাগজপত্রে ৲ ৴ ৵ ৶ ৷ ৸ ৹ ৺ ৻ ॥
এই রকম সব বিচিত্র সাংকেতিক অক্ষর দিয়ে ভরপুর।
কিছু পুরাতন দলিলের শুরুতে আবার লেখা –
“তস্য তস্য পত্রমিদাং কার্যাঞ্চাগে” জাতীয় বিভিন্ন রহস্যময় কথা।
আর হাতের লেখা ?
সেটাও আরেক ভয়ানক হিজিবিজি আর ঝাপসা জিনিস।
পড়তে গিয়ে চোখের অবস্থা খারাপ।
মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এসব দলিল কেন এতো জটিল ভাষা আর সাংকেতিক অক্ষরে ভরা।
আসল ঘটনা হলো –
এসব দলিলের ভাষা হচ্ছে সংস্কৃত, ফারসি ও অতি প্রাচীন বাংলা ভাষার এক ঐতিহাসিক মিশ্রণ। হিন্দু যুগের সংস্কৃত ভাষা আর নবাবি আমলে ফারসী ছিলো সরকারি ভাষা।
ফারসী ভাষার বদলে ইংরেজীকে ১৮৩৭ সালে সর্বস্তরে সরকারি ভাষা হিসেবে চালু করলেও দলিল দস্তাবেজে ফারসী ও সংস্কৃতের প্রভাব রয়ে যায়।
দলিলের ভাষা বাংলা হলেও তা পুরোপুরি বোঝা সবার পক্ষে সম্ভব না ।
এসব বিশেষায়িত বাংলা শব্দ 🇧🇩 বোঝা কি আসলেই সহজ?
অনেকেই শুনলে বিশ্বাস করবেন না যে বাংলা ভাষাও কখনো এতো কঠিন হতে পারে।
দুটো দুটো করে চারটা প্রাচীন বাংলা ভাষার লাইন বলি।
একটু দেখেন, বাংলা ভাষায় লেখা নিচের লাইনগুলো বুঝতে পারেন কিনা।
🌅🌅🌅🌅🌅🌅🌅🌅🌅🌅🌅🌅🌅
“আলি এঁ কালি এঁ বাট রুদ্ধেলা,
তাদেখি কান্হ বিমনা ভৈলা।”
এবং
“উষ্ণা উষ্ণা পাবত তোহিঁ
বসই সবরী বালী।”
⛰⛰⛰⛰⛰⛰⛰⛰⛰⛰⛰⛰⛰
যারা এর অর্থ কয়েকবার পড়েও বুঝতে পারেননি বা পারবেন না বলে মনে করছেন তাদের জন্য এর অর্থ বলে দিচ্ছি।
আলি এঁ কালি এঁ বাট রুদ্ধেলা = আলি অর্থাৎ আলো, কালি অর্থাৎ অন্ধকারে রূপান্তরিত হয়ে বাট অর্থাৎ রাস্তা, “রুদ্ধেলা” বা বন্ধ হয়ে গেছে।
বাট (রাস্তা) শব্দটি আমরা “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে ” গানে শুনেছি কিংবা “বাটে পড়া” এভাবেও শুনেছি।
এসব আনকমন শব্দ রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল যেরকম পরিপূর্ণ জ্ঞান নিয়ে চরম দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতেন তার গভীরতার মাত্রা ভাসাভাসা শোনার সময় অধিকাংশ মানুষই হয়তো সেভাবে কল্পনাও করেননা।
এখানেও বাট মানে পথ।
তাদেখি কান্হ বিমনা ভৈলা = তাই দেখে কান্হ ( এই অংশের লেখক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কান্হ) হলেন বিমনা ( উদাসীন/ বিষণ্ণ)
অপর দুই লাইনের অর্থ –
“উষ্ণা উষ্ণা পাবত তোহিঁ
বসই সবরী বালী।”
= উঁচু উঁচু পর্বত যেখানে বসে আছে “শবরী” বালিকা।
( শবরী হচ্ছে শবর এর স্ত্রী লিঙ্গ। শবর হচ্ছে ভারতবর্ষের প্রাচীন এক জাতি যারা জঙ্গলে বাস করে মূলতঃ পশু শিকার, গাছ কাটা ইত্যাদির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো। কমেন্টস এর ঘরে এদের বিষয়ে একটা লেখার লিংক দেওয়া হলো।)
এই অংশগুলি বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ থেকে নেওয়া যেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এবং এশিয়াটিক সোসাইটি ও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজ দরবারের লাইব্রেরি থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে বের করেন।
অতি প্রাচীনকালের বাংলা ভাষা, হিন্দু, সুলতানী, মোঘল, নবাবি ও ব্রিটিশ আমল মিলিয়ে ঐতিহাসিক বিবর্তনে গড়ে ওঠে আমাদের এখনকার আইন এবং জমিজমা সংক্রান্ত ভাষা।
এসব দলিলের ভাষা যে আইনের ডিগ্রিধারী সবাই খুব ভালোমত জানেন তাও না।
এমনকি সকল আইনজীবীও এই ভাষা খুব ভালোমত জানেন না।
যারা এই ধরণের কাজ বা মামলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আইনজীবী তারা কেউ এই দালিলিক ভাষা ও বিষয়গুলো মোটামুটি বোঝেন আর খুব অল্প সংখ্যক আইনজীবী এগুলো গভীরভাবে বোঝেন।
এলাকা ভেদে দলিলের বিভিন্ন শব্দ ও পরিমাপের বিষয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।
আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আইন পড়ানোর সময় এসব বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা দেওয়া হয়না। অবশ্য শিক্ষকরাও সবাই যে এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাও না।
এসব বিষয়ে প্রায়োগিক ধারণা না থাকায় আইনের ছাত্র ছাত্রীরা আইন পেশায় এসে হঠাৎ এসব হিজিবিজি দলিলের পাহাড় আর ভয়ঙ্কর জটিল ভাষা দেখে অথৈ সাগরে পড়ে যায়।
এমনকি আমাদের দেশে যারা সরাসরি আইনের ছাত্র থেকে আদালতের বিচারক নিযুক্ত হন, তারাও হঠাৎ করে জটিল সব সিভিল মামলার বিচার করতে গিয়ে এসব ঐতিহাসিক ভাষায় লেখা প্রাচীন জটিল দলিলের বিশাল স্তূপ নিয়ে যথেষ্ট অসুবিধার মধ্যে পড়েন।
এই দেশে তাই জমিজমার মামলা চলতে থাকে বহু বছর ধরে।
আগ্রহীদের জন্য জমিজমার দলিলে থাকা অল্প কিছু কমন শব্দের অর্থ নিচে দিলাম।
পিং = পিতা।
জং = জওজে বা স্বামী।
নিং বং = নিরক্ষর বকলম।
দং = দখল।
ডিং = ডেসিমাল বা শতক বা শতাংশ (১ শতক = ৪৩৫.৬ বর্গফুট)
কাতে = মধ্যে।
জমিজমার দলিলপত্র বিষয়ক বেসিক শব্দ এতো বেশী না।
কিন্তু সকল প্রকার রেকর্ড ও দলিলের ঐতিহাসিক এবং আঞ্চলিক সব শব্দ শেখা প্রায় অসম্ভব।
কেনো তা একটু ব্যাখ্যা করি।
এক গবেষণায় দেখা গেছে এরকম বিশেষায়িত শব্দের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার (৩৫০০/-)।
আরো সমস্যা হচ্ছে এসব জমিজমা ও রেকর্ডের কঠিন সব শব্দ এক করে লেখা কোনো বই আপনি বাজারে পাবেন না।
মহান ভাষাবিদ ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান লিখেছিলেন কিন্তু এই বিশেষায়িত শব্দগুলোর বিষয়ে কোনো আলাদা অভিধান লিখে যাননি।
এই বিষয়ে বাংলাদেশের একমাত্র অভিধানটি লিখেছিলেন বিশিষ্ট গবেষক এবং প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তা জনাব কাবেদুল ইসলাম।
বইটির নাম “ভূমি ও ভূমি রাজস্ব বিষয়ক শব্দকোষ”।
অতিশয় দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এই চরম গুরুত্বপূর্ণ বইটি এখন আউট অফ প্রিন্ট।
এই বই ঢাকার সব উল্লেখ যোগ্য দোকানে অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও না পেয়ে রকমারিতে খোজ করলাম।
সেখানেও না পেয়ে পরে সরাসরি বাংলাবাজারে ঐ প্রকাশনীর অফিসে গিয়েছিলাম এবং তাদের গুদামেও খোজানো হয়েছে।
কিন্তু বইটি প্রকাশকরা অর্থাৎ মাওলা ব্রাদার্স দিতে পারেনি।
আর দলিলের সাংকেতিক অক্ষর বিষয়ে ভালোই অগ্রগতি হয়েছে।
এখন মোবাইলের বাংলা কি বোর্ড দিয়েও দেখি দলিলের অতি গুরুত্বপূর্ণ সব সাংকেতিক অক্ষরগুলো লেখা যায়।
যেমন নিচে একটু খেয়াল করে দেখুন।
নিচের প্রথম চারটা অক্ষর নতুন।
পরের অক্ষরগুলো শুধু প্রথম চার অক্ষরের কম্বিনেশন বা জোড়াতালি।
সুতরাং প্রথম চারটা কোনোরকমে শিখতে বা মনে রাখতে পারলে পরেরগুলো শুধু জোড়া দিয়ে লেখা বা বোঝা সহজ হয়ে যায়।
৴ = ১ আনা। ( দেখতে শুয়ে পড়া ওয়ান এর মতো)
৵ = ২ আনা। ( দেখতে উপুড় হয়ে থাকা ২ এর মতো)
৶ = ৩ আনা। ( দেখতে আক্রমণরত ঈগলের নখের মতো)
৷ = ৪ আনা বা ১ চোখ। ( ওয়ান বা আলিফের মতো দেখতে)
৷৴ = ৫ আনা। ( খেয়াল করেন, চার এবং এক এর অক্ষর পাশাপাশি রেখে যোগ হয়েছে)।
৷৵ = ৬ আনা (৪ ও ২ এর সাইন পাশাপাশি, মানে ৪+২ )
৷৶ = ৭ আনা (৪ ও ৩ এর সাইন পাশাপাশি, মানে ৪+৩ )
৷৷ = ৮ আনা (পাশাপাশি দুইটা চারের সাইন, মানে ৪+৪)
৷৷৴= ৯ আনা (পাশাপাশি দুইটা চারের সাইন এবং পাশে এক এর সাইন। মানে ৪+৪+১)
৷৷৵ = ১০ আনা (৪+৪+২)
এগুলো তথা জমিজমার দলিলের ভাষা সবার পক্ষে খুব ভালোমত জানা সম্ভব না।
তবে সবারই অন্তত প্রাথমিক হলেও এসব বিষয়ে কিছু ধারণা রাখা উচিত।
এসব বিষয়ে একেবারে পুরোপুরি অজ্ঞ থাকার জন্য শিক্ষিত মানুষদেরও ভয়ঙ্কর সব বিপদে পড়তে হয় বা প্রতারণার শিকার হতে হয়।
আপনি যথেষ্ট উচ্চশিক্ষিত হলেও এটি এমন একটি বিষয় যা অন্য বিষয়ের জ্ঞান দিয়ে কখনোই বুঝতে পারা যাবে না।
এদেশে আইনজীবীর পরামর্শ মানুষ সাধারণত নেয় কেবলমাত্র চরম বিপদে পড়ে পরিস্থিতি একেবারে ICU তে চলে যাবার পর।
কোন বিষয়ে কনফিউশনে ভুগলেও দেখা যায় কয়েক টাকা ফি এর ভয়ে মানুষ আইনজীবীদের এড়িয়ে থাকার কারণে দীর্ঘমেয়াদি মামলার ফাঁদে বা বড় ধরণের বিপদে পড়ে যায়।
আর কেউ দলিল বা কাগজপত্র ছাড়া হঠাৎ করে আইনজীবীর কাছে জমির জটিল সমস্যার বিষয়ে ফাও বুদ্ধি চাইলে সেই আইনী পরামর্শের মানও হয় সেইরকম দায়সারা গোছের।
কিছু মানুষের বদ্ধমূল ধারণা যে আইনগত পরামর্শের জন্য টাকা বা কনসালটেন্সি ফি কেন দেবো, এগুলো তো আইনজীবীরা জানেই।
সুতরাং কয়েক মিনিটের পরামর্শের জন্য আবার কিসের ফি ?
অথচ এগুলো জানবার জন্য একজন আইনজীবীকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর লেগে থেকে অজস্র বই পত্র আর দলিল দস্তাবেজ ঘাটাঘাটি করতে হয়।
হয়তো নিজেরাও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসা করে প্রশ্নের উত্তর খুজতে হয়।
সেই বহু দিন, বহু মাস আর বহু বছরের দীর্ঘ পরিশ্রম কিংবা নিরস প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কঠোর শ্রমের বিষয়ে অনেকেই ধারণা না থাকার ফলে আইনজীবীদের পরামর্শকে হেলাফেলার চোখে দেখেন কিংবা সামান্য ফি এর কথা শুনেও সামর্থ্যবান অনেক মক্কেলও বিনাপয়সায় কাজ সারতে চান।
যদি কোন বিষয়ে ছোট খাট বা দুই চার কথার আইনী বুদ্ধি হয় সেটা আলাদা কথা।
এসবের জন্য ফি লাগেনা।
এগুলো এমনি দেওয়া যায়।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এসবের উত্তর দেবার জন্য একগাদা ঝাপসা হিজিবিজি দলিলের ফটোকপির স্তূপ ঘাটা থেকে শুরু করে ব্যাপক বইপত্র ঘাটাঘাটি করতে হয়।
কোন কোন বিশেষ মামলার ক্ষেত্রে কেস ল খোঁজার বিষয়টা হয়ে দাঁড়ায় খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মত।
সুতরাং সব আইনজীবীরা মোটামুটি সব আইনই তো জানেন, আর জানতে চাইলেই সাথে সাথে যেকোনো বিষয়ে অনায়াসে বা বিনা পরিশ্রমে তাৎক্ষণিক উত্তর দিতে পারবেন – এই ধারণা একেবারেই ভুল।
একজনকে দেখলাম, আইনজীবীর ফি আর রেজিস্ট্রেশনের কয়েক হাজার টাকা বাচাতে গিয়ে সাদা কাগজে নিজের বুদ্ধিতে লিখে চুক্তি করে ষাট লাখ (৬০,০০০০০/-) টাকা গচচা দিয়েছেন !!!!!!!!!!!
যথেষ্ট প্রমাণ না থাকার কারণে পরে আদালতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করেও ওনার লাভ হয়নি।
এরা দরকারে কোটি টাকা লস করবে, কিন্তু তাও আইনজীবীর সাথে কয়েক হাজার টাকা ফি দেবার ভয়ে কথা বলবেনা।
মানুষ উকিল ধরে শুধু বিপদে পড়ার পর।
অথচ বড় কোনো কাজে হাত দেওয়ার আগেই আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কোনো অসুখ হলে মানুষ যত সহজে চিকিৎসকের কাছে ভিজিট দিয়ে পরামর্শে নেবার জন্য যায়, আইনজীবীদের কাছে তা আসেনা।
নিজের বুদ্ধিতে সব করতে গিয়ে অনেক সময়ই জট পাকিয়ে সাংঘাতিকভাবে প্রতারিত হয়।
মামলা ছাড়াও যে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যার বিষয়ে পরামর্শ নিতে বা ভবিষ্যতের বড় বিপদ এড়াতে আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া যায়, সেই কালচার এদেশে এখনো গড়ে ওঠেনি।
আইনগত জটিলতায় পড়ে একাধিক আইনজীবীর কাছে হুটহাট করে কাগজ পত্র ছাড়াই ফাও বুদ্ধি চেয়ে বেড়ানো কিংবা সেসব সমস্যার বিষয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী মক্কেলরাই অতি চালাকির গলায় দড়ি জাতীয় অবস্থায় পড়েন।
এছাড়া কিছু মক্কেল আছেন যারা মামলায় জেতার বিষয়ে ১০০% গ্যারান্টি দাবী করে এবং বিচারক হাতে আছে কিনা এই টাইপ কথা জানতে চায় । গ্যারান্টি না পেলে বা বিচারকের সাথে গোপন কানেকশন জাতীয় কিছু নাই বললে এরা অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে চলে যায়। এরা আইনজীবির পেশাগত জ্ঞান বা দক্ষতার জন্য কয়েক হাজার টাকাও খরচ করতে রাজি না, কিন্তু সব কাজেই বড় অংক ঘুষ দেওয়ানোর জন্য এরা অস্থির হয়ে থাকে। এদের বোঝানো যায় না যে, টাকা খরচ করলেই সব হয়না।
এই অতি চালাকরাই টাউট, দালাল, প্রতারক বা ভুয়া আইনজীবীদের খপ্পরে পড়ে, তখন এদের টাকা-মামলা আম-ছালা সবই যায়। এদের অতি চালাকি এবং টাউট প্রতারকদের সেই অতি চালাকির সুযোগ নেবার কারণে তখন আসল আইনজীবীদের বদনাম হয়।
এসব বিষয়ে কেউ একেবারে অজ্ঞ থাকলে, হেলাফেলা করলে বা হাত ঝাড়া দিয়ে উড়িয়ে দিলে, ভাগ্যের ফেরে দলিল, রেকর্ড আর নকশার প্যাচে কোনো একদিন হয়তো নিজের পারিবারিক জমিজমা রক্ষা করতেই ব্যর্থ হবেন।
কথাতেই আছে Prevention is better than cure.
কোনো আইনজীবী এই বিষয়ে ধৈর্য ধরে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারলে তাদের জন্য এই ধরণের মামলা বা কাজ পাবার এবং ভালো করার চমৎকার সম্ভাবনা রয়েছে।
লেখা: ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর,
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।