মোঃ হাফিজুর রহমান
করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বেই এখন এক আতংকের নাম। ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে ব্যাপক হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের হার। ইতিমধ্যে ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে করোনা আক্রান্ত হয়ে। আক্রান্তের মোট সংখ্যা ১২ লক্ষ ৭২ হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত ৯ জন মারা গেছে এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। আক্রান্তের সংখ্যা ৮৮ তবে আশার বিষয় এর মধ্যে ৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন।
সমগ্র পৃথিবী এখন লক ডাউনে চলে গেছে। একেবারেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বিশেষ করে উৎপাদন। যদিও সৌখিন পণ্যসমূহ বাদে ভোগ তার আগের অবস্থা তেই আছে। বাংলাদেশ একটি সদ্য উন্নয়নশীল দেশ যার প্রবৃদ্ধির হার এশিয়ার মধ্যে সেরা। এডিবি আশা করছে করোনা যুদ্ধের পর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আগের অবস্থানেই থাকবে। বাংলাদেশ মূলত কিছু কিছু খাদ্য পণ্যের ব্যাপারে আমদানি নির্ভর বিশেষ করে ভারতের উপরে। বিদেশী পণ্য আমাদের দেশে না আসলে দ্রব্যমূল্য কতটা অস্থিতিশীল হতে পারে পিয়াজ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
আমাদের খাদ্যাভ্যাস ইউরোপ-আমেরিকার মতো নয়। আমরা পুরোপুরি ভাত, মাছ, মাংস, ডাল ও সবজির উপর নির্ভরশীল। ফাস্টফুড বা প্যাকেট জাতীয় খাদ্য দ্রব্যে আমরা অভ্যস্ত নই। যদিও সরকার বলছে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ভয়ের কোন কারণ নেই। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সারা বিশ্বের জন্যই করোনা জনিত সময়ের অর্থনৈতিক ক্ষতির পুনরুদ্ধার চ্যালেঞ্জের বিষয় হবে।আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে উৎপাদনশীল খাত সমূহের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এখন প্রয়োজন ব্যাপকভিত্তিক সমন্বয় বিশেষ করে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিভাগের সাথে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামের কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন অব্যাহত রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ অতি আবশ্যক।
প্রথমতঃ কৃষক বা উৎপাদকদের করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ উৎপাদকদের মধ্যে যাদের খাদ্য সঙ্কট আছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
তৃতীয়তঃ জরুরিভিত্তিতে উৎপাদকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ ও প্রয়োজনীয় উচ্চফলনশীল বীজ সরবরাহ করতে হবে।
চতুর্থতঃ কৃষকদের সুদ মুক্ত ঋণ বা আর্থিক উন্নয়নের প্রনোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।
পঞ্চমতঃ যার যেটুকু কৃষিজমি বা পতিত জমি আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ষষ্ঠঃ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যের চাষাবাদ কমিয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য শস্য উৎপাদনের অনুপাত বাড়াতে কৃষকদের মনোযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সপ্তমতঃ উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ গুদামজাতকরনের সুবিধা তৈরি করতে হয়।
অষ্টমতঃ উৎপাদকের উৎপাদিত পণ্য বা খাদ্যশস্য যাতে বিক্রি করতে পারে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বাজার নির্দিষ্ট সময়ে খোলার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন তা না হলে তারা হতাশ হয়ে পরবে।
সরকারের মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে বাজারে মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ব্যাংকসমূহের CRR ও SLR এর অনুপাত কমেছে। যার ফলে ব্যাংক সমূহের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়বে। এমতাবস্থায় ভবিষ্যতে যদি খাদ্য সংকটের সৃষ্টি হয় তবে বাজার ব্যবস্থাপনায় মূল্যস্ফীতি একটি স্বাভাবিক রূপ নিতে পারে। তাই যুগপতভাবে করোনা যুদ্ধের সাথে সাথে ভবিষ্যৎ সঙ্কট মোকাবেলায় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রত্যাশা। তিনি যেমন করে আমাদের দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যেভাবে করে করোনার তীব্রতা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিচ্ছেন ঠিক সেভাবেই আমাদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আমাদের দেশকে সঠিক রাস্তায় রাখতে পারবেন।
লেখকঃ মোঃ হাফিজুর রহমান, শিক্ষক, মার্কেটিং বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ-৮১০০।