সব
facebook apsnews24.com
সংবিধান ও সাক্ষ্য আইনের কিছু বিধানের মধ্যে মিল অমিল - APSNews24.Com

সংবিধান ও সাক্ষ্য আইনের কিছু বিধানের মধ্যে মিল অমিল

সংবিধান ও সাক্ষ্য আইনের কিছু বিধানের মধ্যে মিল অমিল

নূরন্নবী সবুজ

সংবিধান এবং সাক্ষ্য আইন বাংলাদেশের সব আইনের বৈধতা যাচাই করা হয় সংবিধানের বিধান দ্বারা। সংবিধানের কোন বিধান যদি কোন আইনের বিধানকে সমর্থন না করে তাহলে তার বৈধতা যাচাই করে বাতিল,সংশোধন,বিয়োজন বা প্রতিস্থাপন করা যায় । দেশের স্বার্থে দশের স্বার্থে সংবিধান এবং অন্যান্য আইনগুলোর ব্যবহার উপযোগিতা যাচাই করা আইনের সমতা নীতির মাঝেই পড়ে। সংবিধানের ৭(২) নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে এই সংবিধান জনগণের চূড়ান্ত ইচ্ছার প্রকাশ এবং দেশের সর্বোচ্চ আইন। আরো বলা হয়েছে অন্য কোন আইন বা আইনরে বিধান সংবিধানের কোন বিধানের সাথে অসামঞ্জস্য হলে তা বাতিল হবে। কোন আইনরে পুরোটা সংশোধন বা বাতিল করতে হলে যেমন করতে হবে তেমনি কোন বিধান বা অংশ বাতিল বা সংশোধন করতে হলে তাও করা যাবে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(৫) নং অনুচ্ছেদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ১. কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না ২. নিষ্ঠর দন্ড দেয়া যাবে না ৩. লাঞ্চনাকর দন্ড দেয়া যাবে না ৪. সরাসরি উপরের কাজগুলো না হলেও একরকম কাজ করা যাবে না। সহজ করে আরো বললে বলা যায় সংবিধানের এ শাস্তি গুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আদালতে একজন অভিযুক্তকে অপরাধ প্রমাণের পূর্বে নির্দোষ বলে ধরে নেয়া হয়। অর্থ্যাৎ অপরাধ প্রমাণ যতখন হবে না ততখন তার সাথে সাধারন নাগরিকের মতই আচরণ করা হয় ও করতে হয়। ধরা যাক, কোন ব্যক্তি চুরির দায়ে ধরা পড়েছে । তাকে বন্দী থাকা অবস্থায় তার উপর উপরের কাজগুলো করা যাবে না। তাকে এই সুবিধা দেয়া হবে সংবিধানের ৩৫(৫) নং অনুচ্ছেদ বলে।

যদি আদালতে কারো সাক্ষ্য প্রমানের জন্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন বা অত্যাচার করা হয় তা সংবিধান সম্মত হবে না । আদালতে অত্যাচার বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয় অপরাধী যেন তার দোষ স্বিকার করে বা অধিক সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন বের করা যায়। মামলার সঠিক তথ্য বের করার জন্য এবং দ্রুত শেষ করার জন্য এর বাস্তব কিছু প্রয়োজনীতা অস্বিকার করা যায় না। হয়ত আমাদের ভেতর অত বেশী মানবিকতা বা বিবেকবোধ থাকে না বা অপরাধ করার পর তার সত্যতা স্বিকার করার মত মন মানসিকতা আমাদের তৈরী হয় না। তবুও ন্যায়বিচার এবং মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৩৫(৪) নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “ অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।’’

এই দুই ধারা একত্রে পড়লে আমরা দেখতে পাই কোন ব্যক্তিকে তার নিজের দোষ প্রমাণ হয় এমন কথা তার দ্বারা কোন ভাবেই বলিয়ে নেয়া যাবে না। তবে কোন ব্যক্তি যদি তার দোষ স্বিকার করে নেয় তাতে কোন বাধা নেই । আমাদের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ থেকে আরো একটি প্রশ্ন কাজ করতে পারে কোন ব্যাক্তির যদি আদালতের মাধ্যমে সকল প্রমাণ সাপেক্ষে শাস্তি দেয়া হয় তাহলে তা কি সংবিধান সম্মত হবে নাকি হবে না ? ৩৫(৫) ধারা অনুযায়ি অবশ্য এমনটিই হবার কথা কিন্তু ৩৫(৬) নং অনুচ্ছেদে এক বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে।কোন ব্যাক্তির নামে যখন মামলা চলে এবং সকল প্রমাণ সাপেক্ষে তার দোষ প্রমাণ হয় তখন তার শাস্তি দেয়া যাবে এই অনুচ্ছেদে তাই বলা হয়েছে।

১. কোন ব্যক্তির শাস্তি প্রচলিত আইনে যে শাস্তি আছে তা দেয়া যাবে। অর্থ্যাৎ কোন ব্যক্তির যে আইনের যে ধারায় মামলা চলে সে অনুযায়ী শাস্তি দিতে কোন বাধা নেই।

২. প্রচলিত আইনের বিচার পদ্ধতিতে ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের মত কোন আচরণ করার বিধান করা থাকলে সে আচরণ করা যাবে । সহজ করে বললে দোষ প্রমাণের আগেও যে আইনের অধীনে মামলা চলছে তাতে যদি ৩৫(৫) অনুচ্ছেদের আচরণ করার বিধান থাকে তা করা যাবে তাতে সংবিধানে কোন বাধা নেই । এই অনুচ্ছেদের এই দুই বিধান দোষ প্রমাণের আগে বা পরে যে কোন সময় প্রমাণ করা যাবে। কিন্তু এই ধারায় ৩৫(৪) নং অনুচ্ছেদ নিয়ে কিছু বলা হয়নি । অর্থ্যাৎ কোন ব্যক্তিকে কোন অবস্থাতেই তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না।

কোন ব্যক্তি যদি তার দোষ স্বিকার না করে তাহলে তার সাথে সাধারণ নাগরিকের মতই আচরণ করতে হবে । আবার যে আইনে মামলা চলছে তার অধীনে যদি ভিন্ন কিছু করার বিধান না থাকে তাহলেও তার সাথে ভিন্ন রকম আচরণ করা যাবে না।কোন ব্যক্তি প্রতারণার দায়ে গ্রেফতার হয়েছে। তাকে আইনী হেফাজতে রাখা হয়েছে । হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার সাথে অমানবিক আচরণ করা যাবে না।। আবার তাকে যে আইনের অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে তাতে যদি ভিন্ন আচরণ করার বিধান থাকে তাহলে তা করা যাবে। তবে তারও কিছু আইনী প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই থাকতে হবে, তা না থাকলে তা করা যাবে না।

তবে হ্যা, কোন অবস্থাতেই তার নিজের বিরুদ্ধে তাকে সাক্ষ্য দেবার জন্য চাপ বা অন্য কোন ভাবে আদায় করার চেষ্টা করা যাবে না। ৩৫(৬) অনুচ্ছেদের ২য় অংশটি আরো বিশ্লেষণের দাবী রাখে। ‘‘ বিচার পদ্ধতি সম্পর্কিত কোন বিধানের প্রয়োগ ‘’ এ কথাটির অর্থের উপর অনেক পরিবর্তন নির্ভর করে। এই বিধান দ্বারা যদি শুধুমাত্র বিচারের সময় বুঝায় তাহলে তার প্রয়োগ এক রকম আর তা যদি শুধুমাত্র বিচার প্রকিয়ার পর যে রায় দেয়া হয় তা বুঝায় তার ব্যবহার অন্য রকম হবে। আবার এর দ্বারা যদি বিচারের আগে এবং পরে যে কোন সময় বুঝায় তাহলে তার ব্যবহার অন্য রকম হয়ে যায়।

সাক্ষ্য আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী ভয় দেখিয়ে, ভীতি প্রদর্শন করে,প্রলোভন বা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে স্বিকারোক্তিকে অপ্রাসংঙ্গিক বলা হয়েছে। তবে সে দোষ স্বিকারের ফলে যদি সে ব্যক্তির কোন সুবিধা পাবার কোন বিষয় না থাকে বা মামলা থেকে বিশেষ কোন সুবিধা পাবার বিষয় না থাকে তাহলে আাদালত তা গ্রহণ করতেও পারে। স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা হয় কোন ব্যক্তি তার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে তা সত্যিই বলবে। আবার ২৮ ধারা অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, ভয় দেখিয়ে, ভীতি প্রদর্শন করে,প্রলোভন বা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে স্বিকারোক্তিকে প্রাসংঙ্গিক। তবে শর্ত হলো সে ভয়ভীতি অপসারণ করা পর যদি সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ।

অর্থ্যাৎ যখন সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে তখন তার মন থেকে এ জাতীয় ভয় বা ইচ্ছা দূর করতে হবে। অন্যদিকে ২৯ নং ধারায় দোষ স্বিকারোক্তিকে আদালত গ্রহণ করতে পারে,যদিও তা

১. গোপনীয়তার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে করা হয় । অর্থাৎ তার কথাটি গোপন রাখবো বা সে তার দোষ স্বিকার করলে প্রকাশ করবো না এমন কথা দিয়ে নেয়া হয় ।

২. যদি তা প্রতারণা করিয়া আদায় করা হয়। কোন ব্যক্তি ব্যাক্তি কোন বিষয় জানার ভান করে বা কোন বিশেষ সুবিধা দেবার কথা বলে যদি দোষ স্বিকারোক্তি আদালত গ্রহণ করতে পারবে।

৩. অভিযুক্ত ব্যক্তি মাতাল অবস্থায় বললে। কোন ব্যক্তি মাতাল অবস্থায় থাকলে তার অস্বাভাবিক কিছু চিন্তা বা অবস্থা সমন্ধে অসচেতনতা তৈরী হয়। সে এমন অবস্থাতেও যদি তার দোষ স্বিকার করে তাহলেও তা আদালতে গ্রহণ করা হবে।

৪. যে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয় সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দোষ স্বিকারোক্তি দিলে। কোন ব্যাক্তি তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য নয় কিন্তু এমন কাজ করেও তার কাছ থেকে যদি সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় তাহলে তা আদালতে গ্রহণ করা হবে।

৫. দোষ স্বিকার আদালতে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে তা তাকে না জানিয়ে দোষ স্বিকারোক্তি আদায় করা হলে । স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে দোষ স্বিকারোক্তি গ্রহণ করার আগে অবশ্যই তা যে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে তা জানাতে হবে কেউ যদি তা না জানিয়ে করে থাকে তারপরও তা আদালতে গ্রহণ যোগ্য হবে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এবং সাক্ষ্য আইনের মাঝে এই সম্পর্ক আইনের বিধি বিধান এবং তার ব্যবহারিক দিক নিয়ে ভাবতে শিখায় । মানুষের ভাবনা আর সৎ চিন্তা থেকেই বেরিয়ে আসে অনেক ভালো কিছু । বাংলাদেশের আইনগুলো সংবিধানের সাথে অবশ্যই মিলিয়ে পড়া উচিত। সংবিধানের আলোকে অন্যান্য বিধি বিধানের বৈধতা যাচাই করা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক। আমাদের আরও অধিকতর আইন অধ্যয়ন আইনকে আরো সহজ করে জনগণের কাছে পেীছাতে সাহায্য করবে । তরে এক্ষেত্রে আইনগুলোর অসংঙ্গতি দূর করারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে।

লেখকঃ নূরন্নবী সবুজ আইন বিশ্লেষক ও কলামিস্ট mdnurunnobiislam379@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj