অ্যাডভোকেট বেল্লাল হোসাইন :
অনেকেই আইন কর্মকর্তা ও প্যানেল আইনজীবীর পেশাগত ধারণা নিয়ে গুলিয়ে ফেলেন। এবং পেশাদুটিকে একই মনে করেন। তাই একটি সুস্পষ্ট স্বচ্ছ পার্থক্য করার চেষ্টা করছি।
প্রথমত, আইন কর্মকর্তা হতে বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত অ্যাডভোকেট হওয়া প্রধান শর্ত নয়। আইন বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করা থাকলেই আপনি এই পদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হতে পারেন। কিন্তু প্যানেল আইনজীবী হতে আপনাকে অবশ্যই তালিকাভুক্ত অ্যাডভোকেট হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, আইন কর্মকর্তা পদটি কোনো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্টাফ পদ। আইন কর্মকর্তা অন্যান্য সাধারণ কর্মকর্তাদের মতই নির্দিষ্ট মাসিক বেতন, বোনাস, ভাতা, ছুটি ইত্যাদি ভোগ করে থাকেন। অন্যদিকে, প্যানেল আইনজীবী কোনো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মকর্তা নন। তিনি চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত প্যানেল আইনজীবীকে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী যতটুকু কাজ করানো হয়, ততটুকু সম্মানী দেয়া হয়।
তৃতীয়ত, প্যানেল আইনজীবীরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনা করে থাকে। অপরপক্ষে, আইন কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান ও প্যানেল আইনজীবীদের সাথে মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে সমন্বয়কের ভূমিকা রাখে।
চতুর্থত, প্যানেল আইনজীবীরা প্রতিষ্ঠানের আইনি স্বার্থ রক্ষায় পরামর্শ দিয়ে থাকে ও স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে, আইন কর্মকর্তারা প্যানেল আইনজীবীর কার্যক্রম তদারকি করে ও খেয়াল রাখে যে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ আসলেই রক্ষিত হচ্ছে কিনা।
পঞ্চমত, একজন আইনজীবী একাধিক বা অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্যানেল আইনজীবী হতে পারেন। কিন্তু আইন কর্মকর্তা একাধারে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন না। যেহেতু আইন কর্মকর্তা পদটি একটি চাকুরী।
ষষ্ঠত, আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এদিকে প্যানেল আইনজীবীরাবেশিরভাগ সময়ে তালিকাভুক্ত হয় নিজের পেশাগত সুনাম, ব্যক্তিগত পরিচিতি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করার মাধ্যমে।
সপ্তমত, প্যানেল আইনজীবীদের পেশাগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাদেরকে ফ্রীল্যান্সার বলা যায়। অন্যদিকে, আইন কর্মকর্তা একজন নিপাট চাকুরীজীবী।
আইন কর্মকর্তা ও প্যানেল আইনজীবীর মধ্যে পেশা হিসেবে কোনটি বেশি উপভোগ্য ও আর্থিক লাভজনকতা একান্তই ব্যক্তির দক্ষতা, ইচ্ছা ও রুচির উপর নির্ভর করে। চাকুরী এবং প্র্যাকটিস দুটি ভিন্নধারা। এবং দুটির চূড়ান্ত গন্তব্যও ভিন্ন। একজন সরকারি ব্যাংকের আইন কর্মকর্তা শুরুতেই সাধারণত সিনিয়র অফিসারের গ্রেডভুক্ত হন এবং বিভাগীয় পরীক্ষায় পাশ করে পর্যায়ক্রমে প্রমোশন পেয়ে ব্যাংকের এমডি, চেয়ারম্যান হতে পারেন। ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে আইনি বাধা নেই। অনেক বিজ্ঞান, মানবিক, সমাজবিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিষয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাংকের উচ্চ পদে আসীন হয়েছেন। ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে কর্মকর্তাদের বায়ো দেখলেই বুঝতে পারবেন।
অন্যদিকে একজন প্র্যাকটিসিং আইনজীবী প্রধান বিচারপতি হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে, যে পেশাতেই যাই না কেন সেটা যেন খুশিমনে যাই ও ডেডিকেটেডলি করি। তবেই সর্বোচ্চ আসনে আসীন হওয়ার পথটা সহজ হবে।
লেখক: সিনিয়র অফিসার (ল’ ডিভিশন/আইন কর্মকর্তা), অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। ই-মেইল. bellal.sincere@gmail.com