জিসান তাসফিক
একজন মানুষের মেধা বিকাশের অন্যতম সময় শিশুকাল। জীবনের সোনালি সময় শিশু-কিশোর বয়স। বাবা-মায়ের পরম স্নেহ আর ভালোবাসা, পরিবারের সবার আদরযত্নে জীবনটা হয়ে ওঠে পরিতৃপ্ত। ভবিষ্যতে চলার বীজ বপন হয় শিশু-কিশোর বয়সে। অথচ এই বয়সেই অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে! জীবনের শুরুতেই কলঙ্ক! বর্তমানে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বাংলাদেশ শিশু আইন ২০১৩-এর ৪ ধারা অনুযায়ী কেউ ১৮ বছরের নিচে হলে সে শিশু বা কিশোর। এ বয়সের ভেতরে কৃত অপরাধ কিশোর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এ অপরাধের বিচার প্রচলিত আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয় না। কিশোর অপরাধের বিচারকার্য সম্পাদন হয় বাংলাদেশ শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী। এ আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী এই বিচারকার্যের সময় ৩৬০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৮২ ধারা অনুযায়ী ৯ বছরের কমবয়সী শিশু যে অপরাধ করবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না এবং প্রচলিত আইনে এর শাস্তির বিধান নেই। ৮৩ ধারা অনুযায়ী ১২ বছর পর্যন্ত বয়সের বালক/বালিকার বোধশক্তি কম হলে তারও বিচারের বিধান নেই।
শিশু আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী আলাদা শিশু আদালত রয়েছে। সেই আদালতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিচারকার্য পরিচালনা জন্য আলাদা বিধিবিধান রয়েছে। উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখার বিধান শিশু আইনের ৫৯ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে তিনটি কিশোর কারাগার তথা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে, যার দুটি গাজীপুরে এবং একটি কিশোরগঞ্জে। এগুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। কথায় আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। তাই কিশোরদের আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে, অন্যথায় কারাগারে দাগী আসামিদের সংস্পর্শে এসে ওরা হয়ে উঠতে পারে আরও বড় অপরাধী।
বর্তমানে আমাদের দেশে কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার প্রবণতা বাড়ছে। কিশোর অপরাধ প্রবণতার নানা কারণ রয়েছে। প্রধান কারণগুলো হল আর্থিক অসচ্ছলতা, পারিবারিক কলহ, অসুস্থ পরিবেশ, সঙ্গদোষ, অপসংস্কৃতি। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, একজন শিশু পরিপক্ব হতে যে পরিবেশ প্রয়োজন, তেমন পরিবেশ সব ধরনের শিশুরা পায় না। ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
শিশুরা নিষ্পাপ হয়েই জন্মায়। ধীরে ধীরে মানুষের সংস্পর্শে বিভিন্ন আচার-আচরণ শিখতে থাকে। বিচার, বুদ্ধি, বিবেক তথা পরিপক্বতা আসতে সময় লাগে। আর শিশুদের পথভ্রষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী তাদের চারপাশের মানুষ। আমাদের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে দেশের সব অপ্রাপ্তবয়স্কদের অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার কথা বলা আছে। এ জন্য দেশের প্রায় সব স্থানে প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তারা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করে এখানেই। মূলত সমাজের ওপরই নির্ভর করে শিশুদের ভবিষ্যৎ। সুতরাং তাদের সঠিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে উপযুক্ত করে তোলা সমাজের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
জিসান তাসফিক : শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, zeesuntasfiq9314@gmail.com