দেশে জোর পূর্বক ধর্ষণের মামলা চেয়ে বিবাহের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলা যেন বেশি! ধর্ষণ অবশ্যই চরম পর্যায়ের ঘৃণিত অপরাধ। তবে প্রপ্ত বয়স্কদের মিউচুয়াল কনসেন্টে শারীরীক সম্পর্ক এবং ধর্ষণ এক কথা নয়। নিচে দুইটি গল্প বলব।
১) সাহেদ একজন প্রগতিশীল মানুষ। সমাজের আর ৫ জন প্রগতিশীল মানুষের মত বিবাহের আগে প্রেমিকার সাথে এক রুমে থাকাকে দোষের মনে করেন না। বাঁধ সাধলো প্রেমিকা রুনীর আনুসঙ্গিক কিছু আচরণে। সাহেদ অতীষ্ঠ হয়ে ব্রেকাপের সিদ্ধান্ত নিল। সাফ জানিয়ে দিল রুনির সাথে তার আর থাকা সম্ভব না। রুনি মামলা করে দিল। “বিবাহের প্রলোভনে ধর্ষনের মামলা” মিডিয়া এরকম অর্গাজম জাগানিয়া নিউজ পাইলে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ছেলেটাকে এক তরফাভাবে ভিলেন বানায়ে খবর বিক্রি করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আইনে আছে মেয়েদের নাম-পরিচয় মিডিয়াতে প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়াই ছেলেদের ছবিসহ পরিচয় প্রকাশে কোন বাঁধা নেই। যাহোক, এই মামলা খেয়ে সাহেদের পরিবারের কাছে, আত্মীয়দের কাছে, সমাজের কাছে আর মুখ রইল না। এমনকি সাহেদের বোনটারও ভাল জায়গায় বিয়ে হল না।
বিচার শেষ হতে ৫ বছর লাগলো। আদালতের রায় হল, এটা ধর্ষণ নয়, মিউচুয়াল কনসেন্টের সেক্স মাত্র। মেয়েটা যেহেতু প্রাপ্ত বয়স্ক, তাকে বিবাহের প্রলোভন দেখানোর প্রশ্ন অবান্তর। বাচ্চাদের অবশ্য প্রলোভন দেখানো যায়, যেমন চকলেটের প্রলোভন!
৫ বছর মামলা চালাতে সাহেদের অন্তত ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এরপর জেলে থাকা লেগেছে ৬ মাস, মিডিয়া কভারেজের কারণে জামিন পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সরকারি চাকরির রিটেন ভাইভাতে উত্তীর্ণ হয়েও মামলার জন্য গেজেটেড হল না। ৫ বছর মামলা চলতে চলতে এদিকে চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেল।
সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে লাখ লাখ টাকা, মান সম্মানের কথা বাকিটা ভেবে নেয়া যায়। সাহেদের এখন সহজে আর বিবাহ হবে না, বা যোগ্যতা অনুযায়ী কাওকে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। পরিবারের মুখ নিচু হয়ে গেল। ভাই-বোনদের বিয়েতেও সমস্যা দেখা দিল।
২) এদিকে সিফাতও সাহেদের মত প্রগতিশীল যুবক। আধুনিক চিন্তাভাবনায় চলে। তবে যখন বুঝলো, রুমকির সাথে আর থাকা সম্ভব না, কোন কিছুতে মিলছে না, মনের মিল হচ্ছে না। তার এত অশান্তি আর ভাল লাগছে না। ব্রেকাপের প্রস্তাব দেয়ায় রুমকি গেল ক্ষেপে, বিবাহের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলার হুমকি দিল।
সিফাত ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। বলল চল তাহলে আগামী সপ্তাহেই বিবাহ করি। নতুন করে জীবন শুরু করি। পারিবারিকভাবে ঘরোয়া পরিবেশে বিবাহ হল।
কাবিননামায় সাইন করার পর পেট ভরে খাসির মাথা খেল, রোস্ট খেল, পোলাও জর্দা খেল। খাওয়া শেষে বাসায় ফিরে বউয়ের হাতে তালাকের নোটিশ ধরিয়ে মুখের উপর ২/৩ দলা থুথু দিয়ে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিল।
বিবাহের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলা খাবার ঝুঁকি তো আর থাকছে না! সম্মানের বারোটা বাজবে না, সমাজে ধর্ষক হিসেবে পরিচিত হতে হবে না। যে টাকা উকিলকে ফি দিতে হত, রিমান্ডে মাইরের হাত থেকে বাঁচার জন্য পুলিশকে যে টাকা ঘুষ দিতে হত, পেশকারকে যে টাকা দিতে হত, চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে হত, সেসবের সেসব বিশাল ক্ষতির তুলনায়
মোটামুটি লাখ দুয়েক টাকায় সাদামাটাভাবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় রক্ষা পেল।
এদিকে ডিভোর্সি তকমা পেয়ে রুমকির দ্বিতীয় বিবাহের বাজারে ১/২ টা সন্তানের জনক বা মধ্যবয়সী ভুড়িওয়ালা চুলপাকা ব্যতীত ব্যাচেলর পাত্র জোটানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ালো।
পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। মাথা গরম করে যারা, তারা আত্মঘাতী হন।
-মতিউর রহমান, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ (LL.B), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। Email: motiurmdm@gmail.com
