পুলিশ, সহজ কথায় সমাজের মানুষের নিরাপত্তা দেবার জন্য তৈরী । জনগণের সার্বক্ষণিক বন্ধু হয়ে তারা তাদের সেবা প্রদান করবে। কিন্তু বিভিন্ন কারনে আজ পুলিশ সাধারন জনগণের কাছে ভীতিকর একটি নামে পরিচিত হয়েছে। আর এর পিছনে ফেীজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা আইনের ভাষায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার এই বিধানটি একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে। আমরা আজকে এই ধারা নিয়ে আলোচনা করবো।
কারো অপরাধ প্রমাণ হবার পূর্বে আদালত একজন ব্যক্তিকে নির্দোষ বলে ধরে নেয় আর তাই তার সাথে যেন স্বাভাবিক আচরণ করা হয় তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আবার বিচার করার ক্ষমতা যেহেতু আদালতের তাই একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা প্রয়োজনীয়তা আদালত বা এই বিষয়ে ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি নির্ধারন করবে। আর একটু সহজ করে বললে বলা যায় কোন ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণ হবার আগে তাকে হেফজতে রাখা দরকার এই বিবেচনা আদালত বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি করবে।
বিচার বিভাগ যেহেতু মাঠের কাজ বা সরাসরি অভিযুক্তকে গ্রেফতারের কাজ করে না তাই তারা পুলিশকে গ্রেফতার করার অনুমতি দেয় যার মাধ্যমে তারা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে। গ্রেফতার করার এই অনুমতি পত্রই গ্রেফতারি পরোয়ানা।গ্রেফতারী পরোয়ানা বা ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশ সাধারন গ্রেফতার করতে পারে না। কোন ঘটনা ঘটে যাবার পরে তার ব্যবস্থা নিয়ে খুব বেশী ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কি সম্ভব শুধুমাত্র শাস্তি দেয়া ছাড়া? হয়ত না। আর তাই আইনেও বিশেষ একটি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে করে অপরাধ সংঘটনের আগে তা বন্ধ করা যায় । এতে এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে যেগুলো পূরণ হলে পুলিশ কোন রকমের গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই কাউকে গ্রেফতার করতে পারে।
আর কখন তারা গ্রেফতার করতে পারে তা ফেীজদারী কার্যবিধির ৫৪,৫৫ ও ৫৭নং ধারায় বলা আছে, ৫৪ নং ধারা অনুযায়ী, কতিপয় কাজ পুলিশ ঘটতে দেখলে বা কোন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারলে কোন ব্যক্তিকে সৎ উদ্দেশ্যে হাজতে নিতে পারে।
১. ফেীজদারী কার্যবিধিতে কিছু অপরাধকে নিদৃর্ষ্ট করে দেয়া হয়েছে যেক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে। সে কাজ প্রতিহত করার জন্য পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে।
২. কোন ব্যাক্তির কাছে যদি ঘর ভাঙ্গার যন্ত্রপাতি থাকে। আর সে যন্ত্রপাতি রাখার উপযুক্ত কারন সে ব্যক্তি দেখাতে না পারে।
৩. সরকার যদি কাউকে অপরাধী ঘোষণা করে থাকে।তবে এই ঘোষণা এই আইনের অধীনে হতে হবে।
৪. যার কাছে কোন মাল বা জিনিস পত্র আছে। এই জিনিস পত্র যে তার নয় চোরাইমাল এই বিষয়ে যদি সন্দেহ তৈরী হয় আর তার কাছে সঠিক কোন ব্যাখ্যা না থাকে।
৫. পুলিশ তার স্বাভাবিক কাজ করবেই। এই আইনগত কাজে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে তাকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা পুলিশের আছে। আবার কোন ব্যাক্তি পুলিশ হেফাজত থেকে পালায়ন করলেও তাকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা পুলিশের আছে।
৬. কোন ব্যক্তি যদি প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে পালায়ন করে থাকে।
৭. বাংলাদেশে করা হলে সেটি অপরাধ হতো এমন কোন কাজ যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন দেশে করে। যেমন চুরি আমাদের দেশেও অপরাধ। আপনি যদি অন্য কোন দেশে গিয়ে চুরি করেন তাহলে তার বিচার বাংলাদেশে করা যাবে।
৮. কোন ব্যক্তি মুক্তি পাবার পরেও যদি তার উপর দেয়া শর্ত ভঙ্গ করে ৯. যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার জন্য অন্য কোন পুলিশ অফিসার অনুরোধ করা হয়েছে তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যায়।
আবার আমরা যদি ৫৫ ধারার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পারবো পুলিশ কিছু ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে। ১. কোন ব্যাক্তি কোন এলাকায় বসবাস করে কিন্তু তার পরিচয় গোপন রাখে বা কারো কাছে তার উপস্থিতি জানাতে চায় না। আর পুলিশ যদি এমন কোন সংবাদ পায় বা সন্দেহ তৈরী হয় সে আমলযোগ্য কোন অপরাধ করতে পারে তাহলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারে।
২. থানায় যদি এমন কোন ব্যাক্তি পাওয়া যায় যার বৈধ আয়ের কোন পথ দৃশ্যমান না থাকে। সহজ ভাবে বললে সে কিভাবে তার জীবিকা নির্বাহ করে তার কোন বৈধ পথ না থাকলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারে।
৩. এলাকায় এমন কিছু ব্যক্তি থাকে যাবা নিয়মিত চুরি ডাকাতির মত অপরাধ কর্মগুলো করে থাকে । এমন ব্যক্তিকে পুলিশ জনস্বার্থে গ্রেফতার করতে পারে।
৫৭ ধারায় আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্র দেখানো হয়েছে যে অবস্থায় কিছু ব্যক্তিকে আদালত বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে। ১. কোন পুলিশ অফিসারের সামনে যদি কোন ব্যক্তি ছোট ধরনের কোন অপরাধ করে যাকে আমল অযোগ্য অপরাধ বলা হয় কিন্তু সে যদি তার নাম পরিচয় পুলিশের কাছে না প্রকাশ করে তাহলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারবে।
২. তবে এইরূপ গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যদি সে জামিনদার দিতে পারে তাহলে তার জামিন হতে পারে বলে বলা হয়েছে।
৩. আর কোন ব্যাক্তি যদি এই রকম গ্রেফতারের পর জামিনদার দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে নিকটস্থ ম্যজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করতে হবে। একজন মানুষকে গ্রেফতার তার স্বাধীনতা লঙ্ঘনের শামিল । কিন্তু সেই মানুষকে যদি বৃহত্তর স্বার্থে গ্রেফতার করা হয় তাহলে তার আইনগত ও মানবিক ভিত্তি আছে। সমাজে যাতে বড় ধরণের কোন অপরাধ তৈরী না হয় তার জন্য এই বিধান বিশেষ দরকারী । তারপরেও কথা থাকে ৫৪, ৫৫ ও ৫৭ ধারায় গ্রেফতারের পর কতদিন কত সময় তারা হাজতে থাকবে ।
এই বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে সংবিধানের ৩৩ নং অনুচ্ছেদে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রেফতার কৃত ব্যক্তিকে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে প্রয়োজনে সে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেবে। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা এই ধারায় বলা হয়েছে এমন গ্রেফতার করা ব্যক্তিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটস্থ ম্যজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করতে হবে।
২৪ ঘন্টা সময় থেকে যাতায়াতের সময় বাদ যাবে। সংবিধানের ৩৩ নং অনুচ্ছেদ এই বিশেষ সুযোগ গুলো রাখলেও বিদেশী শত্রূ, নিবরতন মূলক আইনে আটকের ক্ষেত্রে আটকের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য না যা আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ, আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট । mdnurunnobiislam379@gmail.com