বিল্লাল বিন কাশেম
করোনাভাইরাস এখন শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতিকেই নাড়া দিতে শুরু করেছে। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে হাজারো মানুষ। লকডাউন হয়ে পড়েছে প্রতিটি রাষ্ট্র। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস’সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, করোনা আতঙ্কে অধিকাংশ বড় কোম্পানির কারখানায় উৎপাদন স্থগিত রাখা হয়েছে। এভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে।
করোনা আতঙ্কে একের পর এক বিচ্ছিন্ন হতে শুধু হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বন্ধ হয়ে পড়েছে মাঠের খেলা থেকে শুরু করে বড় বড় সব আন্তর্জাতিক আয়োজন। স্কুল, কলেজ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমে আসছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার কারণে লোকসানে পড়েছে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো। বন্ধ হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ফ্লাইট। ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ার আশংকায় রয়েছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিদিনই ধস নামছে প্রধান শেয়ার বাজারগুলোতে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে চাকরি হারাতে পারেন অসংখ্য মানুষ।
জেপি মর্গানের মতে পরপর আগামী দুই প্রান্তিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখা দেবে করোনার প্রভাবে৷ চলতি বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৯ সালের চেয়ে অর্ধেক কমে যাবে, জানিয়েছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা বিশ্ব অর্থনীতিতে দুই দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলারের লোকসান ঘটাবে, যা গোটা যুক্তরাজ্যের জিডিপির সমান। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান মন্দায় পড়তে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা (কোভিড-১৯) মৃতের সংখ্যা। চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের প্রায় সব দেশে। ২০০৩ সালেও পৃথিবীতে আতঙ্ক তৈরি করেছিল সার্স। চীন থেকে বিস্তৃত হয়েছিল সার্স। সার্সে আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল, মারা গিয়েছিল ৭৭৪ জন। সেই সময়ে বৈশ্বিক জিডিপির ৪ শতাংশ আসত চীন থেকে। তখনই বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্তত চার হাজার ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয় বলে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা জানিয়েছেন, চীনের করোনা বিশ্ব অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এতে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং পর্যটন খাতেও প্রভাব পড়ছে। আইএমএফ প্রধান বলেন, স্বল্প মেয়াদে হলেও করোনা বিশ্ব অর্থনীতির গতি মন্থর করতে পারে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে কী হবে, তা এখন বলা কঠিন। যত দ্রুত সম্ভব এ ভাইরাস মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
করোনা আতঙ্কে বাতিল হয়ে গেছে প্রযুক্তি দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো আয়োজন মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস (এমডব্লিউসি)। প্রতি বছর এ আয়োজনেই নতুন প্রযুক্তিপণ্যের সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়া হতো দুনিয়াকে। সম্প্রতি এমডব্লিউসির আয়োজক জিএসএমএ কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনার বিস্তারজনিত চরম উদ্বেগজনক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিতব্য এমডব্লিউসির আয়োজন বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির জন্য করোনা ইতিমধ্যে মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি চীন ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা- যা ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর সর্বনিম্ন বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি। বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
আকস্মিকভাবে বিক্রি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা অ্যাপল। আমেরিকার জেনারেল মোটরস নিজ দেশে যত গাড়ি বিক্রি করে, তার চেয়ে বেশি হয় চীনে। তার উৎপাদনও কমেছে। জাপানের টয়োটারও একই অবস্থা। বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন রিটেইল শপ আমাজনের মজুদে টান পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বহু দেশে। এসবের একটিই কারণ করোনার প্রাদুর্ভাব। চীনকে বলা হয় ‘বিশ্বের কারখানা’। সারা বিশ্বে যত পণ্য উৎপাদিত হয় তার এক-চতুর্থাংশ আসে চীন থেকে। ফলে চীনে উৎপাদন ব্যাহত হলে তার প্রভাব হবে ভয়াবহ। আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা তাই যথার্থই বলেছেন, বিশ্ব এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড়ো যে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে তার নাম করোনা বা কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব। অনেক অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে। করোনা ভাইরাস এমন সময় আঘাত হানল যখন বিশ্ব একটি মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিল। জর্জিভা বলেছেন, করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে চীন ও বিশ্ব অর্থনীতির ওপর তার তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে। কারণ, এতে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হবে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমবে। ফলে বিশ্ববাজারে এর প্রভাব হবে বহুমুখী।
চলতি শতাব্দীর শুরুতে চীন বিশ্ব অর্থনীতির ৮ শতাংশের মালিক ছিল। এখন বেইজিং নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্ব অর্থনীতির ১৯ শতাংশ বা প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকোনমিকস তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, করোনা এশিয়ার বাইরে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হবে এক লাখ ১০ হাজার কোটি (১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন) ডলারের, যা বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ১ দশমিক ৩ শতাংশ। বিশ্বের ১৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়ার জিডিপির সমান ক্ষতি হবে এতে। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স বলছে, ইতিমধ্যে করোনার ‘শীতল প্রভাব’ পড়তে শুরু করেছে। কারণ চীনের কারখানা বন্ধের প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর পড়তে শুরু করেছে। এর ফলে বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন পণ্যের উপকরণ এবং তৈরি পণ্য এসব দেশ থেকে সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। যেমন অ্যাপলের আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, আইফোনের উৎপাদন ও বিক্রি কমে যেতে পারে। চীন আইফোনের এক বড় ক্রেতা। গাড়ি নির্মাতা জাগুয়ার ল্যান্ডরোভার সরবরাহ সমস্যায় ভুগছে বলে জানিয়েছে। করোনার কারণে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গত বছরের ৬ শতাংশ থেকে কমে এবার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে।
করোনা আরও ছড়িয়ে পড়লে চলতি বছর বিশ্বের জিডিপি ৪০ হাজার কোটি ডলার কমে যেতে পারে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস বলছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হচ্ছে চীনা ক্রেতাদের বিলাসি পণ্য কেনার হার কমবে এবং ভ্রমণ ও পর্যটনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া প্রভাব পড়বে বিনিয়োগ ও শেয়ারবাজারেও। ইতিমধ্যে চীনসহ কয়েকটি দেশের শেয়ারবাজারে ধাক্কা লেগেছে করোনার। চীনের ওপরও করোনার প্রভাব হবে ভয়াবহ। প্রাদুর্ভাব দীর্ঘস্থায়ী হলেও চীনের বড়ো কোম্পানিগুলো টিকে থাকতে সক্ষম হবে তবে বহু কর্মী চাকরিচ্যুত হবেন, কমবে বেতন। জরিপে দেখা গেছে, দেশটির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৮৫ শতাংশ বড়ো কোম্পানি ছয় মাস পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকতে পারবে।
চীনের এক হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর দেশটির দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, এক মাসে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এক-তৃতীয়াংশ কারখানা তহবিলশূন্য হয়ে পড়বে। এ ছাড়া ৭০০ কোম্পানির ওপর পরিচালিত আরেক জরিপে দেখা যায়, সেগুলোর ৪০ শতাংশই তিন মাসের মধ্যে তহবিলশূন্য হয়ে যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে পরিস্থিতির দিন দিনই অবনতি হচ্ছে। করোনার কারণে জাপানের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বড়ো ধরনের প্রভাব পড়তে পারে দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানির অর্থনীতিতেও। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে প্রভাব অনিবার্য বলে দেশগুলো জানিয়েছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও করোনার ধাক্কা এড়াতে পারবে না। প্রভাব পড়বে এসব দেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে। চীনের বড়ো বাণিজ্যিক অংশীদার ব্রাজিলে মন্দা দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রও করোনার প্রভাবমুক্ত থাকবে না। চীন এখন আমেরিকায় অটো কারখানার যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। বাংলাদেশ, তুরস্ক, মেক্সিকোসহ বহু দেশের পোশাক কারখানাগুলোও ভীষণভাবে চীনের কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল।
চীন শুধু সারা বিশ্বে পণ্য সরবরাহই করে না। চীনের ১৪০ কোটি মানুষ এখন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ফ্যাশনেবল পোশাক আর বিদেশ ভ্রমণেও প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে। দেশটির মানুষের আয় দেড় যুগেরও কম সময়ে বেড়েছে কয়েক গুণ। ২০০৩ সালে চীনাদের বার্ষিক গড় আয় ছিল ১৫০০ ডলার। গত বছর তা পৌঁছায় ৯০০০ ডলারে। ইন্টেল ২০১৯ সালে চীনে পণ্য বিক্রি করে আয় করেছে ২০০০ কোটি ডলার, যা ওই বছরে কোম্পানির মোট আয়ের ২৮ শতাংশ। মোবাইল ফোনের শীর্ষ চিপ নির্মাতা কোয়ালকমের আয়ের ৪৭ শতাংশ আসে চীন থেকে। ২০১৯ সালে চীনে চিপ বিক্রি করে কোম্পানিটি আয় করেছে ১২০০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংক বলছে, সার্সের পর চীনের অর্থনীতির আকার আট গুণ বড়ো হয়েছে। জিডিপির আকার এক লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ কোটি ডলারে।
বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপক ম্যাথিউ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ অ্যান্ডি রটম্যান বলেছেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক-তৃতীয়াংশ আসে চীন থেকে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের মোট প্রবৃদ্ধির চেয়েও চীন এগিয়ে। আমেরিকার বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক মর্গ্যান স্টানলির এশিয়া বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান স্টিফেন রোচ সম্প্রতি বলেছেন, করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সমিতি (আইএটিএ) জানিয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের কারণে এবার দুই হাজার ৯৩০ কোটি ডলার ক্ষতি হবে। এবার বিমান সংস্থাগুলোর যাত্রী ১৩ শতাংশ কমে যাবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। আইএটিএর সিইও অ্যালেক্সান্দ্রে ডি জুনিয়াক এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিমান সংস্থাগুলোর জন্য এ বছরটি কঠিন যাবে। করোনার কারণে প্রতিদিন ১৩ হাজার ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে। শুধু চীন নয় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও নেতবাচক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। গত সাত বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেবা খাতের ব্যাবসায়িক কার্যক্রম সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জানুয়ারিতে সেবা খাতে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম খুবই কমেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই চালিকাশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। রপ্তানি আয় কমে গেলে দেশের শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের আয় কমে যাওয়া বা কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। অন্যদিকে প্রবাসীরা টাকা পাঠানো কমিয়ে দিলে তাদের পরিবার দেশে আগের মতো খরচ করতে পারবেন না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা বাণিজ্যে। কমে যাবে বেচাকেনা৷ চাহিদা কমে গেলে ভোক্তা পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে। বাংলাদেশেও করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে চলতি বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ বড় চ্যালেঞ্জ হবে সরকারের জন্যে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ইতিমধ্যে বলেছে, বাংলাদেশের জিডিপি সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে এক দশমিক এক ভাগ কমে যেতে পারে৷ তাদের হিসাবে এতে মোট তিনশো কোটি ডলারের ক্ষতি হবে, আট লাখ ৯৪ হাজার ৯৩০ জন চাকরি হারাবে৷ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবিদনে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে৷
এতকিছুর পরও আশা করার মতো জায়গাও রয়েছে। জ্বালানি তেলের পুরোটাই বাংলাদেশ বিশ্ব বাজার থেকে কেনে। দাম কমায় এখন আমদানি খরচ আগের চেয়ে অনেক কমে যাবে। সরকার যদি বাজারে সে অনুযায়ী দাম সমন্বয় করে তাহলে শিল্পের উৎপাদন ও পরিবহন খরচ কমবে। এতে সাধারণ মানুষও উপকৃত হতে পারেন। তবে সরকার জ্বালানি তেলে দাম না কমালে পুরো লাভটাই ভোগ করবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি।
তবে করোনা ভাইরাস যদি বিশ্ব অর্থনীতিতেই গভীর প্রভাব ফেলে তাহলে এই সুবিধাগুলো বাংলাদেশ কতটা কাজে লাগাতে পারবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
লেখক: সাবেক কূটনীতিক প্রতিবেদক ও আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষক।