ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই আমাদের মাথার ভেতর ব্যক্তিত্ব বলতে কি বোঝায়? বা What is personality? প্রশ্নটি না এসে,ঘুরপাক খায়,”সবার সাথে যে তাল মিলিয়ে কথা বলে সে ব্যক্তিত্বহীণ” (মার্ক টোয়েন) উক্তিটি।অর্থাৎ ডেফিনেশন অব পার্সোনালিটি’র থেকে মার্ক টোয়েনের এই বিখ্যাত উক্তিটি আমাদের কাছে বেশি পৌঁছিয়েছে।আর সেই মোতাবেক আমরা ধরেই নিয়েছি অন্যের সাথে একমত পোষণ করলে, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে, আমরা ব্যক্তিত্বহীন হয়ে যাব।আর এখান থেকেই সকল ইস্যুতে বিরোধিতা করার মনভাব তৈরি হয়েছে।তৈরি হয়েছে ভিন্ন মত পোষণকারীকে হিউমিলিয়েট করার প্রবণত। যেকোনো উপায়ে হোক, সকল ইস্যুতে বিরোধিতা করে ব্যক্তিত্বের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। এখানেই ব্যক্তিত্বের অপ-মৃত্যু হলো।এখানেই সব কিছু জলাঞ্জলি দিলাম।
ব্যক্তিত্ব বলতে কি বোঝায়?সেই উত্তর দেবার আগে,একটু দেখে নেই মার্ক টোয়েন,”তাল মিলিয়ে কথা বলা” বলতে কি বুঝিয়েছেন- এখানে “তাল মিলিয়ে কথা বলা” বলতে বাছ বিচারহীন ভাবে ‘তা বললে তাই,না বললে নাই’ বলতে বারণ করা হয়েছে।কিন্তু গণহারে সকল বিষয়ে বিমত দিতে বলা হয় নি।ধরুন,আমি বললাম,”গণতন্ত্রই আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থা” এখানে আপনি সহমত দিতে পারেন।এতে ব্যক্তিত্বের ক্ষয় হবে না।আবার ধরুন, আমি বললাম,”একনায়কতন্ত্রই আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থা।” এখানে আপনি বিমত দিবেন।কারণ এখানে বিরোধিতা না করলে আপনি হবেন-চাটুকার,ব্যক্তিত্বহীন।কারণ এটা আপনার স্ববিরোধী।কেননা আপনি কিছুক্ষণ পূর্বেই গণতন্ত্রের সাথে সহমত দিয়েছিলেন।এই ব্যপারটি বোঝাতেই মার্ক টোয়েন,”তাল মিলিয়ে কথা বলা” শব্দ গুচ্ছ ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ব্যক্তিত্ববান হতে সকল সময়ে বিরোধিতা করতে বলেন নি।
তাহলে ব্যক্তিত্ব কি??
What is the actual meaning of PERSONALITY?
-“the various aspects of a person’s character that combine to make them different from other people.”[Oxford Dictionary]
অর্থাৎ ব্যক্তিত্ব হলো এমন ককতগুলো আচার-আচরণ,ব্যবহার, দৃষ্টিভঙ্গি যা একজন মানুষকে অন্যদের থেকে আলাদা করে উপস্থাপন করে।সহজ ভাষায় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সমষ্টিই ব্যক্তিত্ব।
অধ্যাপক Philip S. Holzman এর মতে, “Personality, a characteristic way of thinking, feeling, and behaving. Personality embraces moods, attitudes, and opinions and is most clearly expressed in interactions with other people. It includes behavioral characteristics, both inherent and acquired, that distinguish one person from another and that can be observed in people’s relations to the environment and to the social group.”
ব্যক্তিত্ব শব্দটি বিভিন্ন উপায়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তবে মনোবিজ্ঞান এটিকে দুটি মূল ধারায় বিভক্ত করেছে। প্রথমটি,মানুষের মধ্যে বিদ্যমান ধারাবাহিক পার্থক্যের সাথে সম্পর্কিত।অর্থাৎ ব্যক্তিত্বের অধ্যয়নটি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল মানব মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং ব্যাখ্যা করার উপর আলোকপাত করে। দ্বিতীয়টি, সেই গুণাবলীর উপরে জোর দেয় যা সমস্ত মানুষকে এক করে তোলে এবং মনস্তাত্ত্বিক মানুষকে অন্যান্য প্রজাতি থেকে পৃথক করে।
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে ব্যক্তিত্ব কি অর্জন করা যায়??অথবা এটি কি প্রভাবিত হয়??
মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে,ব্যক্তিত্ব মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য।অর্থাৎ আপনার আবেগ,ভাব, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদির সমন্বয় সৃষ্ট ব্যক্তিত্ব আপনার পূর্বপুরুষদের প্রতিনিধিত্ব করে। শিশু কেমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবে সেটা নির্ভর করে Eros আর Thanatos এর উপর। প্রথমটি বন্ধনে সাহায্য করে।আর দ্বিতীয়টি ধ্বংস করে। Erros এর মূল শক্তি libido. আর এই Erros এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত Ids(অদস)। অদস(Ids) মনের অবদমিত ইচ্ছা পুরনের নিমিত্তে কাজ করে।আর Id পরিচালিত হয় Ego(অহম) দ্বারা।অহম নেতিবাচক ইচ্ছা,আবেগ,বা আচরণ প্রকাশে Ids কে বাধাদান করে। আর অহম পরিচালিত হয় Super-ego(অধিশাস্তা) দ্বারা। অর্থাৎ শিশুর psychic energy’র সঠিক বিকাশের উপর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে।আর এগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় নির্জ্ঞান অবস্থায় বাবা-মায়ের প্রভাব ও genetically. তবে ফ্রয়েড, পরিবেশগত প্রভাব একেবারেই অস্বীকার করেন নি।কিন্তু তার মতে ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবেশের প্রভাব নগন্য।
এখন প্রশ্ন আসে ব্যক্তিত্ববান আর ব্যক্তিত্বহীনের। আপনার সামগ্রিক জীবনের প্রতিটি কর্মই আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতিনিধিত্ব করে।অর্থাৎ তখনই ব্যক্তিত্ববান হবেন যখন আপনার সামগ্রিক ক্রিয়া অন্যের চোখে আপনাকে ইতিবাচক করবে।এটি মুলত নির্ভর করে আমাদের আকস্মিক রিয়্যাক্টের উপর।ধরুন,হঠাৎ করেই একজন কাদা-বালি মাখা নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত পোশাক পরিহিত কেউ আপনার পাশে বসে পরলো।এই মুহূর্তে রিয়্যাকশন নির্ধারণ করবে আপনার ব্যক্তিত্ব।
আপনি ব্যক্তিত্ববান হবেন নাকি ব্যক্তিত্বহীন হবেন সেটা আপনার বিরোধিতা করার উপর নির্ভর করে না।তাই ব্যক্তিত্ববান প্রমাণের লক্ষ্যে বিনাকারণে বা অযাচিত ভাবে বিরোধিতা করার প্রবণতা পরিহার করুন।
কাযেস মাহমুদ
শিক্ষার্থী,
আইন বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।