সাজিদ মাহমুদ ভুইয়া
সাধারণ মানুষ হিসেবে থানা পুলিশের নাম শুনলেই সবাই আটকে উঠে। চেষ্টা করে এদের থেকে দূরে থাকার। কারন কথিত আছে পুলিশের কাছে যাওয়া মানেই টাকা খরচ। যদিও কিছু কিছু অসৎ পুলিশ অফিসারের জন্য পুলিশ ডিপার্টমেন্টের এই বদনাম। যাই হোক মাঝে মাঝে আপনাকে বা আমাকে অদূর ভবিষ্যতে ন্যায় বিচারের স্বার্থে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হতে পারে। কারন কোন মামলায় তদন্তের স্বার্থে আপনার নিকট থেকে সাক্ষ্য নিতে পারে বা কেও যদি আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তখন আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। আপনি যদি কোন বিবৃতি বা বক্তব্য পুলিশ অফিসারের নিকট প্রদান করেন তাহলে এই বিবৃতি প্রদানের আইনগত গ্রহণযোগ্যতা কতখানি?
এই সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী পুলিশ অফিসার যদি আসামীকে ভয়ভীতি, প্রলোভন, লোভ লালসা ইত্যাদি দিয়ে যদি স্বীকারোক্তি আদায় করেন তাহলে সেই স্বীকারোক্তি বিজ্ঞ আদালতে অপ্রাসঙ্গিক।
২৪ ধারায় উল্লিখিত স্বীকারোক্তিটি যদি প্ররোচনা, প্রলোভন হুমকি বা প্রতিশ্রুতি অপসারণের পরে স্বীকারোক্তি প্রদান করলে সেটা প্রাসঙ্গিক হবে (ধারা ২৮)। আদালতের মতে, এই জাতীয় কোনও প্ররোচনা, হুমকি বা প্রতিশ্রুতি অপসারণের পরে করা হয়, তবে তা প্রাসঙ্গিক।
২৫ ধারা অনুযায়ী কোন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশের নিকট দোষ স্বীকার করলে তা অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যাবে না। অর্থাৎ পুলিশের নিকট প্রদত্ত স্বীকারোক্তি অগ্রহনযোগ্য। ২৫ ও ২৬ ধারার মধ্যে বেসিক পার্থক্য হলো ২৫ ধারায় যে কোন অবস্থায় পুলিশের নিকট প্রদত্ত স্বীকারোক্তি অগ্রহণযোগ্য করা হয়েছে এবং ২৬ ধারায় পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত স্বীকারোক্তি অগ্রহণযোগ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ কোন বাক্তি যদি পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন কোন বিবৃতি প্রদান করেন তাহলে তা সাক্ষ্য আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী অগ্রহনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
আবার সাক্ষ্য আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী পুলিশের নিকট প্রদানকৃত বিবৃতি প্রাসঙ্গিক বা গ্রহণযোগ্য হতে পারে যদি স্বীকারোক্তিটি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে হয় এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় উল্লেখিত উপায়ে লিপিবদ্ধ করা হয়।
সাক্ষ্য আইনের ২৭ ধারায় বলা হয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশের নিকট যে তথ্য প্রদান করেছে তার উপর ভিত্তি করে মামলার কোন বিষয়ে সত্যতা উদঘাটন হলে, উক্ত স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হবে।
তবে এই ক্ষেত্রে নিলিখিত শর্ত পূরণ করতে হবে,
পুলিশ যে তথ্য পেয়েছে তার ফলে ঘটনাটি উদঘাটিত হয়েছে।
তথ্যটা স্বীকারোক্তি হতে পারে আবার নাও হতে পারে।
যে ব্যক্তি তথ্যটি দিচ্ছে সে অবশ্যই কোন অপরাধে অভিযুক্ত হবে।
সে তথ্য প্রদানকালে অবশ্যই পুলিশ হেফাজতে ছিল।
উদঘাটিত বিষয়টি যে বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে তার সাথে সম্পর্কিত হবে।
তথ্যের যতটুকু অংশ উদঘাটিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ততটুকু অংশ অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
লেখকঃ সাজিদ মাহমুদ ভুইয়া, শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট, ইমেইল- shajidmahmud@gmail.com