শাহান মাহমুদ অনিক
আমাদের ফৌজদারি মামলার একটা বড় অংশের কার্যক্রম শুরু হয় থানায় এজাহার দায়েরের মধ্য দিয়ে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় পুলিশ মামলা নিতে চায় না। বিশেষ করে যখন দেখে মামলা কোন প্রভাবশালী ব্যাক্তির বিরুদ্ধে হতে যাচ্ছে।
পিআরবি ২৪৪ ( ক ) উপবিধি মতে .. মিথ্যা বা সত্য হােক , মারাত্মক বা নগন্য হােক , পেনাল কোড বা যেকোন বিশেষ আইন বা স্থানীয় আইন সম্পর্কীত হােক , পুলিশের নিকট প্রদত্ত প্রত্যেকটি আমলযােগ্য অপরাধ সম্পর্কীত এজাহার পাওয়ার পর ফৌজদারি কার্যবিধি ১৫৪ ধারার বিধান অনুযায়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মামলা নিতে বাধ্য । এর পর মামলা তদন্তের মাধ্যমে শুরু হয় বিচার কাজ ।
ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৫৭ ( ১ ) ( খ ) উপধারায় বলা হয়েছে যে , অফিসার ইনচার্জ এর নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে , মামলাটির পর্যাপ্ত ভিত্তি নেই তাহলে তিনি মামলাটি তদন্ত করবেন না । এবং পেনাল কোডের ২১১ ধারায় বলা হয়েছে যে যদি কোন ব্যক্তি , অপর কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা বা অভিযােগের জন্য কোন ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই বলে জেনেও উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারী মামলা দায়ের করে বা করায় , অথবা কোন অপরাধ অনুষ্ঠান করেছে বলে মিথ্যাভাবে উক্ত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে , সে ব্যক্তি যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে , যার মেয়াদ দুই বৎসর পর্যন্ত হতে পারে , বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে ; এবং যদি অনুরূপ ফৌজদারী মামলা মৃত্যুদণ্ডে , যাবজ্জীবন করাদণ্ডে বা সাত বৎসর বা তদূর্ধ্ব মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোন অপরাধের মিথ্যা অভিযােগ দায়ের করা হয় , তাহলে যেকোন বর্ণনার কারাদণ্ডে , যার মেয়াদ সাত বৎসর পর্যন্ত হতে পারে , হবে এবং তদুপরি জরিমানা দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে । আর পুলিশ এই দুটি আইনের বলে মামলা নেয় না। এখন কথা হল পুলিশ মামলা না নেওয়ার পরে আপনি কি করতে পারবেন কি ভাবে আপনি ন্যায় বিচার পাবেন?
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাঃ
থানায় পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে একজন ভালো আইনজীবীর পরামর্শক্রমে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় মামলা করলে আদালতে সংশ্লিষ্ট থানাকে মামলাটি রুজুপূর্বক তদন্তের নির্দেশ দেবে এবং আদালতের এ নির্দেশ মানতে বাধ্য। অন্যসব পন্থার মধ্যে এটি সহজতর এবং এতে সময় কম অপচয় হবে, অর্থনীতিক ঝুঁকিও কমবে। পুলিশ সুপারের কাছে আবেদনঃ থানার অফিসার ইনচার্জ আপনার মামলা না নিলে আপনি পুলিশ সুপারের কাছে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে আপনি আপনার মামলাটি নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।একটা পুলিশ সুপার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আপনার মামলাটি নেওয়ার জন্য আদেশ দেবেন অথবা কোন অফিসার দ্বারা আপনার ঘটনার ভিত্তি আছে কিনা তা তদন্ত করবেন এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
হাইকোর্টে মামলাঃ
এ প্রক্রিয়ায় থানা পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে প্রতিকার চাওয়া যায়। রিট আবেদনে ভিকটিম বা তার পরিবার থানায় মামলা দায়েরের অনুমতি প্রদান ও আসামিদের গ্রেফতারের আদেশ প্রার্থনা করতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ রায় প্রদান করলে পুলিশ রায় মানতে বাধ্য। কিন্তু এটি অনেকটা ব্যয়বহুল। মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগঃপুলিশ মামলা নিতে না চাইলে প্রতিকার চাওয়ার মাধ্যম হলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এক্ষেত্রে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিয়ে একটি আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া বেসরকারি মানবাধিকার কমিশনের কাছেও এ ধরনের অভিযোগ দেওয়া যায়। বিশেষ করে নারী নির্যাতন ও মানবিক বিষয়গুলো মানবাধিকার কমিশনের কাছে আবেদন করলে তাঁরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন। এতে অর্থের ব্যয় অনেকটা কম হয়।
এছাড়া নারী নির্যাতন সংক্রান্ত বিষয়ে থানা পুলিশ মামলা না নিতে চাইলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য পুলিশের ওম্যান ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে অভিযোগ দায়ের করা যায়। কিন্তু পুলিশ মামলা না নিলে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ এই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না। আমরা অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলে অধিকার আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন না!
আর এর জন্যই আমার আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত।প্রাপ্য অধিকার পেতে হলে অবশ্যই অধিকার আদায়ের পন্থা জানতে হবে, আইন সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে।
লেখকঃ শাহান মাহমুদ অনিক, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ (এস আই ইউ)