নূরুন্নবী সবুজ
তালাকের ক্ষেত্রে স্বামীকে সব সময় দেনমোহর পরিশোধ করতে হয় । স্বামী তার দেনমোহরের দায় থেকে মুক্ত হতে পারেনা যদি না তার স্ত্রী তাকে মাফ করে দেয়। আর তালাকের ক্ষেত্রে এই বিধান আরো কড়াকড়ি ভাবে প্রয়োগ করা হয় । স্বামী তার স্ত্রীকে যেমন তালাক দিতে পারে তেমনি বিশেষ পরিস্থিতিতে তার স্ত্রীও তাকে তালাক দিতে পারে।
তালাকের ক্ষেত্রে এই বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আগের পর্বগুলোতে আজ আমরা জানবো, এমন একটি পদ্ধতি যে পদ্ধতিতে তালাক দিলে আপনার দেনমোহর মাফ হতে পারে। ধর্ম এবং আইনমতে এক বিশেষ ধরণের তালাক স্বিকৃত আছে যা সমাজে খোলা তালাক বা খুলা তালাক নামে পরিচিত।এই বিশেষ ধরণের তালাককে আপোষের মাধ্যমে তালাকও বলা যায়। এমন অনেক পরিস্থিতি তৈরী হয় যখন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে তালাক চায় কিন্তু স্বামী তাকে তালাক দিতে চায় না।
স্বামীর কাছ থেকে তালাক পাবার জন্য স্ত্রী অনেক সময় তার স্বামীকে দেনমোহরের পুরোটা বা কিছু অংশ ছেড়ে দেয় বা অন্য কোন বিশেষ সুযোগ দেবার ওয়াদা দেয়।স্বামী এই প্রস্তাব বা বিশেষ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে তালাক দিতে সম্মত হয়। এমন পারস্পারিক কথার মাধ্যমে যে তালাক দেয়া হয় সেই তালাককেই মূলত বলা হয় খোলা তালাক বা খুলা তালাক যাকে অনেকে দেনমোহর ছাড়া তালাকও বলে থাকে ।
আমরা দেখেছি তালাকের ক্ষেত্রে তালাকের নোটিশ পাঠাতে হয় তারপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তার আলোচনা এবং সর্বশেষে কাজীর মাধ্যমে নিবন্ধন করে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। খোলা তালাক হলো স্ত্রীর মাধ্যমে তালাক।আর তাই এই খোলা তালাক পদ্ধতিতে তালাকের নোটিশ মূলত স্ত্রীর কাছ থেকে আসে। স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দেবার জন্য প্রস্তাব করে এবং স্বামীকে বিশেষ সুযোগ যেমন দেনমোহর মওকুফ বা অন্য কোন সুযোগ দেবার কথা বলে তার কাছ থেকে তালাক নেয়। আবার স্ত্রী যদি কোন ছাড় না দেয় তাহলেও এ পদ্ধতিতে তালাক দিলেও তালাকের দেনমোহর মাফ হবে না।
আবার স্বামী খোলা তালাক দিতে অস্বিকার করলে স্ত্রী আদালতে খোলা তালাক গ্রহণ করার জন্য আদালতে আবেদন করতে পারবে । আদালত যদি উপযুক্ত মনে করে তাহলে তার আবেদন গ্রহণ করতেও পারে। আর আদালত যদি আবেদন গ্রহণ করে তাহলে সেভাবেও তালাক হতে পারে। আবার অনেকে স্থানীয় ভাবে বসে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ অন্য গণ্য-মান্য ব্যাক্তির উপস্থিতিতে উপযুক্ত সাক্ষী,অভিভাবক আর কাজির মাধ্যমেও এ তালাক দিয়ে থাকেন ।
এ তালাক আপোষ মুলে করা হয় বলে পরবর্তীতে আর মামলা করা যায় না আর তাই অনেকেই এই তালাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। খোলা তালাক এক বিশেষ ধরণের তালাক যা বিশেষ অবস্থায় দেয়া যায় কিন্তু কেউ যদি দেনমোহর ফাকি দেবার উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার করে তাহলেও তা আইন সম্মত হবে না। আমরা যে ভাবেই তালাক দেই না কেন তালাকের নোটিশ পাঠানোর দিন থেকে বা স্থানীয় ভাবে বসার দিন থেকে ৯০ দিন পর তালাক বৈধতা পাবে ।
আবার গর্ভে যদি সন্তান থাকে তাহলে সন্তান যতদিন ভুমিষ্ঠ না হবে ততদিন তালাক স্থগিত অবস্থায় থাকবে। এমনটি করা হয় সন্তানের পিতৃ পরিচয় ঠিক রাখার জন্য। এই খোলা তালাকের বিধানের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর তালাকের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে । এর মাধ্যমে স্ত্রী দেনমোহর মওকুফ করে দিলে মওকুফ হবে আর যদি না দেয় তাহলে হবে না । তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই তালাকে দেনমোহর মওকুফ হয় বলে অনেকে একে দেনমোহর ছাড়া তালাক বলে থাকে।
আমরা এই তালাক প্রদাণের মাধ্যমে পরবর্তী অনেক আইনী ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে পারি বলে অনেকেই এই তালাক আজ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । বিশেষ করে যারা গোপনে বিবাহ করে তাদের মাঝেও এই তালাকের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সংসার জীবনে অনেক কিছু মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়। পারস্পারিক বোঝা পড়ার মাধ্যমে সবার সংসার সুখের হোক । তালাকের মত বেদনা দায়ক ঘটনা যেন কারো জীবনে না ঘটে।
লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ, আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট । mdnurunnobiislam379@gmail.com