হায়াত এবং মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তবে কোন বিপদ থেকে বাঁচার সময়, সুযোগ এবং স্বাধ্য থাকার পরও কেউ যদি বাঁচার চেষ্টা না করে আল্লাহ ভরসা বলে নিজেকে মৃত্যুর সামনে ঠেলে দেয় তাহবে আত্মহত্যার সামিল। আর আত্মহত্যা হারাম। যেমন সুরা নিসা ২৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন—‘আর (হে মুমিনগণ!) তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না।
একই সাথে আত্মরক্ষার চেষ্টা করাও ফরজ। চলন্ত ট্রেনের সামনে বসে কেউ যদি বলে আল্লাহ রক্ষা করবে তাহলে তাকে আল্লাহর উপর তাওয়াককুল বা ভরসা বলে না। সরে যাওয়ার চেষ্টা করে আল্লাহর উপর ভরসা করলে আল্লাহ হয়তো আপনাকে রক্ষা করবেন যদি হায়াত থাকে। ভরসার সাথে নিজের চেষ্টা লাগবে।
যেমন সূরা রা’দ এর ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন—“আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” এবং সূরা আন-নাজম এর ৩৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন—“মানুষ তাই পায়, যা সে চেষ্টা করে।”
আল্লাহ চান আপনি একটা উপায় অবলম্বন করেন বাকিটা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেন। যারা এখন বলছেন কোন পদক্ষেপ বা প্রোটেকশন ছাড়াই আল্লাহ বাচাবে, তারা একটু ভাবুন–
ক। যখন ফেরাউনের জাদুকরেরা সাপ বানালো, আল্লাহ মূসা (আঃ) কে তার লাঠি ছাড়তে বললেন।–
“তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা বানিয়েছিল যাদু বলে। (সূরা আল আ’রাফ ১১৭)
— আল্লাহ চাইলে তো লাঠি ছাড়াই সাপ বানাতে পারতেন।।
খ। যখন যাকারিয়া (আঃ) বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে (স্ত্রীও ছিল বন্ধ্যা) আল্লাহর কাছে সন্তানের জন্য দোয়া করলেন, আল্লাহ বললেন দিবেন। তবে নির্দেশ দিলেন— তিনি [যাকারিয়া (আঃ)] যেন সুস্থ অবস্থায় ৩ দিন মানুষের সাথে কথাবার্তা না বলেন।
“—- সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা কেমন করে আমার পুত্র হবে অথচ আমার স্ত্রী যে বন্ধ্যা, আর আমিও যে বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত। তিনি (আল্লাহ) বললেন, এমনিতেই হবে—- সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে একটি নির্দশন দিন। তিনি বললেন তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ অবস্থায় তিন দিন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলবে না।” (সূরা মারইয়াম ৫-১০)
গ। মূসা (আঃ) এর পেছনে যখন ফেরাউনের বিশাল সৈন্যবাহিনী ধাওয়া করলো, আর সামনে লোহিত সাগর। তখন আল্লাহ মূসা (আঃ) কে তার লাঠি দিয়ে পানিতে আঘাত করতে বললেন আর সাথে সাথে সমুদ্র দুভাগ হয়ে রাস্তা তৈরি হয়ে গেলো।
“আমি মূসা প্রতি এই মর্মে ওহী করলাম যে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাত্রিযোগে বের হয়ে যাও এবং তাদের জন্যে সমুদ্রে শুষ্কপথ নির্মাণ কর। পেছন থেকে এসে তোমাদের ধরে ফেলার আশঙ্কা করো না এবং পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয় করো না।” (সূরা ত্বোয়া-হা ৭৭)
— আল্লাহ কি চাইলে তো এমনিতেই রাস্তা তৈরি করে দিতে পারেন। কিন্তু না, আল্লাহ চান বান্দা যেন তার চেষ্টাটুকু করে। বাকিটা আল্লাহর হাতে।
ঘ। মোহাম্মদ সাঃ মদিনায় হিজরত না করে আলাহর উপর ভরসা করে মক্কায়ই থেকে যেতে পারতেন। আবার যখন শত্রু পিছু নিলো, তাদের চোখ এড়াতে গুহায় আশ্রয় না নিয়ে বলতে পারতেন আল্লাহ ভরসা বাঁচানোর মালিক আল্লাহ।
ঙ। আল্লাহ চাইলে নৌকা ছাড়াই নূহ (আঃ) এর অনুগতদের মহাপ্লাবনের হাত থেকে বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু, আল্লাহ নুহ (আঃ) কে নৌকা তৈরির আদেশ করেছিলেন এই জন্য যে, আল্লাহ চান বান্দা যেন তার নিজের চেষ্টাটুকু করে।–
“আর আপনি আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশ মোতাবেক একটি নৌকা তৈরী করুন এবং পাপিষ্ঠদের ব্যাপারে আমাকে কোন কথা বলবেন না। অবশ্যই তারা ডুবে মরবে।” –(সূরা হুদ ৩৭)
চ। ঈসা আঃ কে গর্ভে ধারণ করার পরে যখন মারঈয়াম (আঃ) এর প্রসববেদনা শুরু হয়, সেদিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা তাঁকে একটা খেঁজুর গাছের ডাল ধরে নাড়া দিতে বলেছিলো। ডাল ধরে নাড়া দিলে খেঁজুর ঝরে পড়বে এবং ওই খেঁজুর তিনি খেতে পারবেন।–
“আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে।” (সূরা মারইয়াম ২৫) — এখানে ডাল ধরে নাড়া না দিলেও আল্লাহ চাইলে খেজুর পতিত হতে পারতো।
এই মহামারী থেকে বাঁচতে আমাদের প্রত্যেকের চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করার পরেও এই মহামারীতে যদি আমাদের মৃত্যু হয়, তখন আমরা শহিদের মর্যাদা লাভ করবো ইন শা আল্লাহ। কিন্তু বিনা চেষ্টায় যদি শহিদ হওয়ার জন্যে হাত-পা ছেড়ে বসে থাকি, তা আত্মহত্যা ছাড়া আর কিছুই হবেনা।
মাজহারুল ইসলাম এর ওয়াল থেকে সংগৃহীত।