নূরুন্নবী সবুজ
ইসলামের কিছু কঠোর বিধি বিধান পালন করে একজন পুরুষ একসাথে ৪ জন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে। প্রত্যেককে সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে এই কাজটি করার বিধান আছে। বাংলাদেশে বর্তমান আইন অনুযায়ী কবুল বলার মাধ্যমে ধর্ম মতে বিবাহ হলেও আইন মতে বিবাহ হবার জন্য কাজীর মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়। এই নিবন্ধন না থাকলে আইন থেকে যে সুযোগ সুবিধা পাবার কথা তা পাওয়া সম্ভব না। যেমন তালাক , দাম্পত্য সম্পর্ক উদ্ধার, দেনমোহর ,ভরণপোষণ , সন্তানের পরিচয় বা উত্তরাধিকারিত্ব ইত্যাদি ।
বহু বিবাহের ক্ষেত্রেও কিছু বিধি বিধান মানতে হয়। দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ধারা ৪৯৪ এবং ৪৯৫-এ এই বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করা হয়েছে। এই দুটি ধারা বিশ্লেষণ করলে আমরা কিছু বিষয় জানতে পারবো। ৪৯৪ নং ধারা বিশ্লেষণ করে পাই, স্বামী বা স্ত্রী তার সম্পর্ক থাকা অবস্থায় বিবাহ করতে পারবে না। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে করা যেতে পারে।
১. যদি স্বামী ও স্ত্রীর বিবাহ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
২.স্বামী বা স্ত্রী যখন তাদের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় নতুন বিবাহ করার চুক্তি করে বা
৩. ৭ বছর তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক অবর্তমান থাকে বা কারো এক জনের খোজ থাকে না। তবে এই বিষয়টি অবশ্যই পরস্পরের জানা থাকতে হবে এবং তার পরেই তারা বিবাহ করতে পারে। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত না করে বিবাহ করা যাবে না। এই ধারা বিধান অমান্য করলে অমান্যকারী যে কোন মেয়াদের কারাদন্ড যার মেয়াদ ৭ বছর হতে পারে পাশাপাশি অর্থদন্ডেও দন্ডিত হতে পারে।
আবার ৪৯৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি জানে যে বিবাহ করার জন্য ৪৯৪ ধারার যে শর্ত পূরণ করা দরকার তা পূরণ করা হয়নি এবং সে এই বিষয়টি অপর ব্যক্তির নিকট গোপন রেখে বিবাহ করে তাহলে সবোর্চ্চ ১০ বছর পাশাপাশি অর্থদন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। সহজ কথায় বললে কোন ব্যক্তি বিবাহ বজায় থাকা অবস্থায় নতুন করে বিবাহ করতে পারবে না । আর যদি করি তাহলে আইন তার জন্য শাস্তির ব্যাবস্থা রেখেছে ।
তবে ৪৯৪ ধারার শর্ত পূরণ করে বিবাহ করলে সমস্যা নেই । বিবাহ বজায় থাকা অবস্থায় মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ৬ ধারার বিধান অনুযায়ী একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে সালিশ পরিষদের নিকট থেকে অনুমতি গ্রহণ করে বিবাহ করা যাবে। কেউ যদি সালিশ পরিষদের অনুমতি না নিয়ে বিবাহ করে তাহলে তা আইন অনুযায়ী নিবন্ধন করা হবে না।
একাধিক বিবাহ করতে চাইলে চেয়ারম্যানের নিকট বিবাহ করার কারন সহ আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি অবশ্যই প্রদান করতে হবে। তার পর সালিশী পরিষদ সব কিছু বিবেচনা করে অনুমতি দিলে বিবাহ করা যাবে না দিলে যাবে না। আইনের মাধ্যমে যেমন বহু বিবাহকে সহজ করা হয়েছে তেমনি অনেকের জন্য কঠিন করা হয়েছে। সামাজিক এবং পারিবারিক সম্পর্কের উপর বিবাহের গুরুত্বকে আমরা অস্বীকার করতে পারিনা বলেই আমাদের এরকম আইনের প্রয়োজনীয়তা কম নয়। আমাদের এই আইনগুলো সচেতন ভাবে মেনে চলা উচিত।
লেখকঃ নূরুন্নবী সবুজ, আইন বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট ।