ফাইজুল্লাহ ফয়েজ
বাংলাদেশে যে আইনটিতে সবচেয়ে বেশি অপরাধের শাস্তি বর্ননা করা হয়েছে সেটার নাম পেনাল কোড, এটা ১৮৬০ সালে বৃটিশ কলোনিয়াল শাসকদের সৃষ্টি, সেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান করে রেখেছেন, যেমন: মৃত্যুদণ্ড, কারাদন্ড, জরিমানা, ট্রান্সপোর্টেশন বা দিপান্তর, বেত্রাঘাত, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঐ পেনাল কোড পুরোটাই গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ কিছু সংশোধনী এনেছে এবং বেত্রাঘাত ও দিপান্তরের শাস্তি বাদ দিয়েছে, পেনাল কোডের ৫৩ ধারায় বিভিন্ন ধরনের শাস্তির উল্লেখ পাওয়া যাবে।
তবে পেনাল কোডে থাকুক আর না থাকুক আরও কিছু শাস্তি দীর্ঘদিন যাবত আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে সেগুলো হচ্ছে- পেটানো, চোখ উঠিয়ে দেয়া, গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা, জুতার মালা দেয়া, জুতার বারি দেয়া, মাথা ন্যাড়া করে দেয়া, কান ধরে উঠবস করা, সূর্যের দিকে তাক করিয়ে রাখা।
বিভিন্ন লিগ্যাল সিস্টেমে আরো কিছু শাস্তি প্রচলিত আছে বা ছিল, সেগুলো হলো হাত কেটে দেয়া, পাথর মেরে হত্যা করা, সুলে চড়ানো, পুরুষত্বহীন করে দেয়া ইত্যাদি।
এগুলো বাংলাদেশের কোন আইনে নেই তবে কান ধরে উঠবস করেননি বা বেত/বেলন/পাখা/খুন্তি ইত্যাদির বারি খাননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। আমাদের দেশে পুলিশ কাউকে এ্যারেস্ট করলে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় পেটানোর, ডিম থেরাপি নামক একটি শাস্তির কথাও শোনা যায় তবে আমি কোন ডিম থেরাপি খাওয়া মানুষের সাথে কথা বলে এটার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারি নাই।
ইদানিং ক্রসফায়ার ও নাকি শাস্তির মধ্যে পরে, অনেক বাঙ্গালীই বিভিন্ন অপরাধে অপরাধীর ক্রসফায়ার দাবি করেন, সম্প্রতি একটি শাস্তির দাবি খুব উঠছে সেটা হলো ধর্ষকের নুনু কেটে ফেলা।
শাস্তি যাই হোক না কেন, কোন শাস্তি না পেয়ে বড় কিছু হয়েছে এমন লোক পাওয়া দুষ্কর, আমাদের এক শিক্ষক ছিলেন খুব পেটাতেন একবার আমাদের এক বন্ধু কে পেটানোর পর সে একটু অসুস্থ হয়ে পরে, আমরা আবার বুদ্ধি দিলাম ভান ধর, স্যারের আজকে খবর আছে কিছুক্ষণের মধ্যেই যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য স্যারের পকেটে থেকে বেশ কিছু টাকা খসিয়েছিলাম, পকেটের টাকা খসানোতে এবং ভয় পেয়ে স্যার পরে অনেকটাই থেমে গিয়েছেন।
সিনেমা দেখার অপরাধে মাদ্রাসায় আমার দুই বন্ধু ৬০ ও ৮০ টি করে বেত্রাঘাত খেয়েছিলেন আমরা তা দেখেছিলাম তবে ঐ হুজুর কে সংবিধানের পাঠদান করতে পারিনি।
আমি নিজেও দুএকবার কান ধরে উঠবস করেছি তবে প্রকাশ্যে নয়, তবে বেত্রাঘাত প্রকাশ্যে ও খেয়েছি, শিক্ষকতা যতটুকু করেছি তাতে বেত্রাঘাত, কলম দিয়ে আঙ্গুল চাপ দেয়ার অভিনব শাস্তি ও কান ধরার শাস্তি ও দিয়ে থাকতে পারি, তবে বড় হয়ে কখনো এইসব শাস্তি দেইনি।
পুলিশের পিটুনি খেয়েছি জীবনে একবার ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত অবস্থায়, ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করলে দৌড়ে অনেকদূর চলে গিয়েছিলাম তারপর পরে যাই সেই অবস্থায় ই পুলিশ দুই তিন ঘা দিয়ে দিলো, আমি চিন্তা করছি যেখানে ছত্রভঙ্গ হয়ে ই গেছে, আমরা পালাচ্ছি তখন ও পুলিশের দুচার ঘা কেন দিতে হবে?
পুলিশ কর্তৃক খুম সম্প্রতি নিগ্রহের শিকার হয়েছিলাম তা হয়তো অনেকেই জানেন, তবে এডমিনের লোকজন কর্তৃক কখনো নিগ্রহের শিকার হইনি, এডমিনে আমার বন্ধুরা অনেকেই আছেন তো, তারা আবার হাইকোর্টকে খুব ভয় পায়, একজন তো আদালত অবমাননার নোটিশ খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলো।
সবশেষে আবার শাস্তিতে ফিরি, সংবিধান যতই সুরক্ষা দিক না কেন সমাজে প্রচলিত বেশ কিছু শাস্তি এখন ও পুরোদমে চলছে এবং এগুলো বন্ধ করা এত সহজ নয়, আর বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসার ই আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন মাইর না দিয়ে আসামির কাছ থেকে তথ্য উদঘাটন বাংলাদেশে কি করে সম্ভব? আমি উত্তর এখনও জানি না।
আর ঘারত্যারা জাতিকে আর্মির ডান্ডা ছাড়া ঠান্ডা করার ই কি উপায় আছে এরকম প্রশ্ন ও অনেকেই করেন এটার উত্তর ও আমি জানি না, তবে এতটুকু বলতে চাই মাইর দেয়ার আগে দৌড় দেয়ার সুযোগ দিতেই হবে, দৌড় দিলেও মাইর দেয়া খুব অন্যায়, দৌড় না দিলে ও মাইর দেয়া আইনে অন্যায়।
কারন সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাউকে অপমান জনক, অমানবিক শাস্তি দেয়া যাবে না।
লেখকঃ ফাইজুল্লাহ ফয়েজ , আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
মতামত লেখকের সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত।