সব
facebook apsnews24.com
আইনজীবী সনদ অধিকারের দাবিতে এলএল.বি. উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশদের ন্যায্যতা ও করণীয় প্রসঙ্গ - APSNews24.Com

আইনজীবী সনদ অধিকারের দাবিতে এলএল.বি. উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশদের ন্যায্যতা ও করণীয় প্রসঙ্গ

আইনজীবী সনদ অধিকারের দাবিতে এলএল.বি. উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশদের ন্যায্যতা ও করণীয় প্রসঙ্গ

সুজন বিপ্লব

প্রখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিঙ্কন-এর উক্তি,”আপনি যদি আইনজীবী হওয়ার জন্য মনস্হির করেন, তাহলে ধরে নেন এর অর্ধেক হয়ে গেছে।” বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কর্মকাণ্ডে সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয় আমরা দেখছি। এলএল.বি. স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করার পরেও ইচ্ছা পোষণ করলেই আইজীবী হওয়ার সুযোগ নেই।শিক্ষানবিশদেরকে আইনজীবী সনদের অধিকার থেকে বার কাউন্সিল বঞ্চিত করে যাচ্ছে। আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষার মারপ্যাঁচে ৮০ ভাগ আইন শিক্ষার্থী আইনপেশায় যুক্ত হতে পারেনা। আইনের ছাত্রদের আইনজীবী হওয়া স্বাভাবিক, এটাই প্রত্যাশিত।এমবিবিএস পাশ করে ডাক্তারি না করা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি ‘ল’গ্রাজুয়েটদের ক্ষেত্রেও বেমানান লাগে। এদেশে আইন শাস্ত্রে স্নাতকধারীদের সেবামূলক বৃত্তি বা অাইন ব্যবসায় প্রবেশে অনুমতিপত্রের জন্য নানা প্রতিবন্ধকতায় বেকারত্বকাল প্রলম্বিত হচ্ছে। আইন পেশার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বার কাউন্সিলের অযৌক্তিক নিয়ম-কানুনে এলএল.বি. গ্রাজুয়েটগণ বেকারত্বের অভিশাপে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে ধুঁকে-ধুঁকে মরছে। প্রতিবছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও আইন কলেজে এলএল.বি(স্নাতক) পাশ করা হাজার-হাজার ছাত্রছাত্রী পেশাগত অনিশ্চয়তার কবলে পতিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সরকারের একটি সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ৪৬ নম্বর আদেশ, ১৯৭২(Bangladesh Legal Practitioners & Bar Council Order, 1972) দ্বারা গঠিত হয়ে আইনজীবীদের পেশার সনদ প্রদান ও নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ সাময়িক সংবিধান আদেশ, ১৯৭২ অনুসারে রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত ক্ষমতাবলে তিনি এ আদেশ প্রদানে সম্মত হয়।

অনুচ্ছেদ-‘২৭(১) ক’ অনুযায়ী একজন ব্যক্তি ৭ বছর ধরে মুক্তার হিসাবে কাজ করলে এবং বার বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে বিনা পরীক্ষায় আইনজীবী তালিকাভুক্ত হতে পারে। ৬০(২) বিধি অনুযায়ী অ্যাডভোকেট হওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে ১০ বছর ধরে আইন পেশায় নিয়োজিত এমন অ্যাডভোকেটের অধীন ৬ মাস সনদ প্রার্থীকে শিক্ষানবিশ(Pupile) হিসাবে কাজ করতে হয়। যে অ্যাডভোকেটের অধীন শিক্ষানবিশ চুক্তিবদ্ধ হয়, তার সাথে চুক্তি করার মেয়াদ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে উক্ত চুক্তিপত্রসহ আবেদনপত্র বার কাউন্সিলে পেশ করা হয়। বার কাউন্সিলে চুক্তিসমেত আবেদন পৌঁছালেও অ্যাডভোকেট হিসাবে গ্রাহ্য হয়না। এলএল.বি. স্নাতক ডিগ্রিধারী সনদ প্রার্থী বার কাউন্সিলের অধীনে এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অ্যাডভোকেট হিসাবে গ্রহণীয় হয়। একজন আইনজীবী সহকারী(মুহুরি) আদালতে কার্যসম্পাদন করে জীবীকা নির্বাহ করতে পারলেও শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে বেকার বসে থাকতে হয়।

অহেতুক পরীক্ষার কবলে শিক্ষানবিশদের বেকার জীবনের দুর্বিষহ ভার বহন করতে হচ্ছে। ৬ মাসব্যাপী জুনিয়রশীপ শেষে শিক্ষানবিশের অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষা বছরে ২ বার গ্রহণের নিয়ম থাকলেও হয়না। বার কাউন্সিলের ব্যর্থতার দায় কে নেবে? বার কাউন্সিলের জবাবদিহিতা কোথায়? কিসের স্বার্থে এই অন্যায্য পরীক্ষা পদ্ধতি?

বিশিষ্টজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আহসান খালিদ বলেছেন, বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা তুলে দেওয়া উচিত। তার মতে, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নিয়ন্ত্রিত আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা ব্যবস্থা অনতিবিলম্ব তুলে দেওয়া উচিত। প্রিলি-লিখিত-ভাইভা এই তিন স্তর বিশিষ্ট পরীক্ষা পদ্ধতির জটিলতা, বছরে মাত্র একবার পরীক্ষা গ্রহণ করে সেটির চূড়ান্ত ফলপ্রকাশে মাসের পর মাস এমনকি বছর পেরোনো অপেক্ষা ও দীর্ঘসূত্রিতা বার কাউন্সিলের চরম দায়িত্বহীন কাজ ও কর্তব্য অবহেলার দৃষ্টান্ত। হাজার হাজার আইনের গ্র্যাজুয়েটদের আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন এই তালিকাভুক্তির গ্যাঁড়াকলে পড়ে খুন হচ্ছে, ৬ মাসের শিক্ষানবিশি কাল প্রলম্বিত হতে হতে অনেকের জন্য অনন্তকালের রূপ নিয়েছে, নিচ্ছে। এটি অন্যায়।

আইনপেশা ছাড়া আর কোন বিশেষায়িত পেশায় এই “তালিকাভুক্তি পরীক্ষা” নামক সিস্টেমের অস্তিত্ব নাই। আইনও এমবিবিএস, বিডিএস, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসি ইত্যাদি বিষয়ের মতো একটি হাইলি স্পেশালাইজড ও প্রফেশনাল সাবজেক্ট। একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন শেষে বাংলাদেশে এমবিবিএস বা বিডিএস গ্র্যাজুয়েটরা কোন ‘তালিকাভুক্তি পরীক্ষা’ ব্যতিরেকে ‘Bangladesh Medical & Dental Council (BM&DC)’ এর অধীনে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করে নিবন্ধিত হয়ে রেজিস্টার্ড ডাক্তার বা ডেন্টিস্ট হিসেবে পেশাজীবন শুরু করে। একইভাবে যারা ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স এর উপর ডিগ্রি অর্জন করে তাদের কোন ‘তালিকাভুক্তি পরীক্ষা’র সম্মুখীন হতে হয়না। Bangladesh Veterinary Council এ আবেদন করে ভেটেরিনারি প্র্যাকটিশনার হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে পেশাজীবন শুরু করে। ফার্মাসি বিষয়ে একাডেমিক ডিগ্রি নিয়ে যারা ফার্মাসিস্ট হিসেবে পেশা শুরু করে তাদেরও কোন ‘তালিকাভুক্তি পরীক্ষা’ দিতে হয়না,পূর্বোক্ত পেশাজীবীদের মতোই ‘Pharmacy Council of Bangladesh’ এর অধীনে নিবন্ধন সেরে পেশাজীবন শুরু করে। করোনাকাল বিবেচনায় এমসিকিও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদেরকে বার কাউন্সিল আইনজীবী সনদ প্রদানের দাবির সঙ্গে একই যুক্তিতে অংশগ্রহণকারী সকল পরীক্ষার্থী সনদ পাওয়ার অধিকারী।

আইনজীবী সনদ অর্জনে আইন শাস্ত্রে স্নাতকধারীদের আইনজীবী তালিকাভুক্তি করার দাবিতে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে একাত্ম হওয়ার বিকল্প নেই। বার কাউন্সিলের এমসিকিউ উত্তীর্ণ-অনুত্তীর্ণ ভেদাভেদ চলতি আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করছে। সকল শিক্ষানবিশ আইনজীবী এক হও! ইতোপূর্বে বার কাউন্সিল এলএল.বি. গ্রাজুয়েটদেরকে আবেদনের ভিত্তিতে অহেতুক পরীক্ষা ছাড়াই আইনজীবী তালিকাভুক্তি পদ্ধতি বলবৎ করেছিল, সেটিই যৌক্তিক ছিল। অবিলম্বে বার কাউন্সিল চালিত আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা বাতিল করা উচিত। মেধাবী ও উদ্যোমী তরুণ আইনজীবীদের থেকে জাতীয়-অান্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেবা বঞ্চিত হতে আমরা চাইনা। পেশাজীবনের প্রবেশকালে ভুলনীতির মাধ্যমে আইনজীবী হওয়ার পথ আটকে রাখা হয়েছে। এ অপতৎরতা থামানো জরুরি

সুজন বিপ্লব, শিক্ষানবিশ আইনজীবী

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj