গতকাল একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হল রুমে বসে আছেন। রেগুলার কোর্ট চালু করার দাবীতে পথসভা কর্মসূচিতে তাঁকে আহবান জানালেন বারের আরেকজন জনৈক বিজ্ঞ আইনজীবী। কর্মসূচির লিফলেটটি হাতে নিয়ে বললেন, “আমি আসছি স্যার, আমি থাকব”। কিছুক্ষণ পরেই সেই বিজ্ঞ আইনজীবী বলে বসলেন, “মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদীকে নেতা বানানোর জন্য রাস্তায় নামব? তারা লাইম-লাইটে যাওয়ার জন্য এসব করছে। তাদের পিছনে ছুটে লাভ কী?”
পথসভায় আহবান জানানোয় আরেক বিজ্ঞ আইনজীবী বললেন, “আপনারা সাধারণ আইনজীবীরা কেন? বারের সভাপতি-সেক্রেটারী কই? তাদের আগে নিয়ে আসেন? এভাবে গিয়ে কাজ হবে না”- এমনই কিছু অভীজ্ঞতা হলো সেদিন সাধারণ আইনজীবী পরিষদের ডাকে পথ সভা কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতে গিয়ে।
বাঙালি ব্যক্তিস্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। নিজে তো কোন ভাল কাজ করবে না, অন্যেরা করতে গেলেও তাদের সমালোচনা করা শুরু করবে। একজন ড. মমতাজ উদ্দিন যদি অসহায় বিচারপ্রার্থী মানুষের কল্যাণে ভালো উদ্যোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে আসেন তাতে দোষের কী? এতে যদি তিনি আরও বেশি পরিচিতি লাভ করেন তাহলে কী কারও কোন ক্ষতি আছে? যিনি সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণকর উদ্যোগ নিয়ে যদি সবার আগে সামনে এগিয়ে আসেন, তাহলে কী এটুকু কৃতিত্ব তিনি পেতে পারেন না?
অনেক নেতাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আলোচনার সময় বলছেন, রেগুলার কোর্ট খোলা জরুরী কিন্তু তাঁরা সরাসরি কোন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। এটি সবাই অনুভব করছেন যে, রেগুলার কোর্ট খোলা খুবই জরুরী। তবে, কেউ কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। আবার সুপ্রীম কোর্ট বারও সম্মিলিতভাবে রেগুলার কোর্ট চালুর জন্য তেমন কোন কর্মসূচি দিচ্ছে না। তাহলে একজন ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী যদি সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষ নিয়ে রেগুলার কোর্ট চালুর কর্মসূচি দিয়ে থাকেন তাহলে কেনই বা এই কাজের জন্য সাধারণ আইনজীবীদের বাহবা থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন?
ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে একটি মামলা ফাইল করার পর সেটি শুনানির জন্য লিস্টে আসতে লেগে যাচ্ছে একমাসেরও বেশি। আবার, লিস্টে নিয়ে আসার জন্য নাকি করতে হচ্ছে তদবীর। নইলে মামলা ফাইল করলেও সেটি আদৌ লিস্টে আসবে কিনা তা নিয়ে অনেক বিজ্ঞ আইনজীবী সন্দেহ প্রকাশ করছেন। আবার, কোর্ট ভার্চুয়াল বলা হলেও আনুষঙ্গিক কাজে কোর্টে যেতেই হচ্ছে আইনজীবীদের।
অন্যদিকে, কোটি কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সিভিল মামলাগুলির শুনানী আছে বন্ধ হয়ে। ফৌজদারী আদালতগুলিতে হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী অপেক্ষা করছেন কবে শুনানি শেষে তাদের প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায়ের ন্যায় বিচার পাবেন তাঁরা। দেশের অন্যতম প্রধান অর্গান বিচার বিভাগ। স্বাস্থ্য বিধি মেনে দেশের প্রায় সবকিছুই খোলা। তাহলে বিচার বিভাগ রেগুলার হতে দোষ কোথায়? আর সেজন্য যদি একজন ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসেন, তাতে দোষের কী? কিংবা হিংসা করারই কী আছে? আপনারাও ভাল উদ্যোগ নিন, সাধারণ আইনজীবীরা আপনাদেরও পাশে থাকবে।
—রায়হান কাওসার, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
ইমেইলঃ raihankawsardu@gmail.com