ডিএনএ কি:
DNA (Deoxyribo Nucleic Acid) হলো একজন ব্যক্তির বংশগতির মৌলিক উপাদান।ডিএনএ প্রতিটি মানুষেরই একটা অনন্য বৈশিষ্ট্য। একজন ব্যক্তির ডিএনএর সাথে কখনোই পৃথিবীর অপর কোনো ব্যক্তির ডিএনএ সম্পূর্ণরূপে মিলবে না; সামান্য হলেও পার্থক্য থাকবে। আর এ পার্থক্যই একজন ব্যক্তিকে অন্য সবার থেকে আলাদা করার জন্য যথেষ্ট।
ইহা একটি তন্তু বা সুতার ন্যায় রাসায়নিক পদার্থ বা কোষের নিউক্লিয়াসে সুসজ্জিত থাকে ক্রোমজোম আকারে । একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ প্রায় ১০ লক্ষ কোটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষের সমন্বয়ে গঠিত । প্রতিটি কোষের অভ্যন্তরে অবস্হিত ডিএনএ জীবনের জৈবিক বৈশিষ্ট্য যেমন- চোখের রং, চুলের রং ,পছন্দ, অপছন্দ,জীবনধারণ ও বংশবৃদিধ ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য ধারণ ও বহন করে।
যে কোন ধরনের শারীরিক নমুনা যেমন: রক্ত, লালা, সীমেন, চুল, মাংসপেশী, হাড় ইত্যাদি হতে পারে ডিএনএ এর গুরুত্বপূর্ণ উত্স।
অপরাধ তদন্ত কোন কোন ক্ষেত্রে ডিএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায়:
যে সকল অপরাধ তদন্ত ক্ষেত্রে ডিএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায়, সেগুলো হলো-
- পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নির্ণয়
- ইমেগ্রেশন সংক্রান্ত বিতর্ক
- অভিযুক্ত খুনি বা ধর্ষক সনাক্তকরণ
- মৃতদেহ বা মৃতদেহের অংশবিশেষ সনাক্তকরণ
- হারিয়ে যাওয়া সন্তান সনাক্তকরণ
- দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তি সনাক্তকরণ
- হাসপাতালে সন্তান বদলসহ ইত্যাদি বিষয়ে ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় ।
ডিএনএ টেস্ট কোথায় করা হয়:
- ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্র্রোফালিং ল্যাবরেটরী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উদ্দ্যোগে ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম এর আওতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রতিষ্টিত হয়েছে সর্বপ্রথম “ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্র্রোফালিং ল্যাবরেটরী”।
- বিভাগীয় ডিএনএ স্কিনিং ল্যাবরটরী:
ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্র্রোফালিং ল্যাবরেটরীর কার্যক্রম দেশব্যাপী সম্প্রসারণের জন্য বিভাগীয় সদরে অবস্হিত ৫ টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে –
- রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,সিলেট ।
- খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল ।
বিভাগীয় ডিএনএ স্ক্র্যানিং ল্যাবরেটরী স্হাপিত হয়েছে । এই ল্যাবগুলো প্রতন্ত অন্ঞল থেকে গৃহীত মামলার আলামত বা নমুনা প্রাথমিক স্কিনিং এর পর ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্র্রোফালিং ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ।
পিতৃত্ব/মাতৃত্ব এর ডিএনএ পরীক্ষা কি:
পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় খুজে বের করা হয়।প্রতিটি মানুষ তার ডিএনএ এর শতকরা ৫০% প্রাপ্ত হয় তার পিতা থেকে,বাকি ৫০% প্রাপ্ত হয় তার মাতা থেকে। সুতরাং সন্তানের ডিএনএ প্রোফাইলের ৫০% পিতার প্রোফাইলে ও বাকি ৫০% মাতার ডিএনএ প্রোফাইলে প্রতিফলিত হবে। বংশগতি বিদ্যার এই মূল তত্ত্ব পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
পরিচয় নির্ণয়ে ডিএনএ পরীক্ষা কি:
পরিচয় নির্ণয়ে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে কোন ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় খুজে বের করা হয়। এ ক্ষেত্রে সাধারণত যার পরিচয় নির্ণয় এর প্রয়োজন তার ডিএনএ প্রোফাাইল নিকটাত্মীয়দের (পিতা,মাতা,সন্তান) ডিএনএ প্রোফাইলের সাথে তুলনা করা হয়। বিভিন্ন পরিস্হিতিতে এই পরিক্ষার প্রয়োজন হতে পারে যেমন: হারিয়ে যাওয়া সন্তানের পরিচয নির্ণয়, দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির পরিচয় নির্ণয় ইত্যাদি।
শিশু জন্মের আগেও কি ডিএনএ পরীক্ষা করা সম্ভব
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য জন্মের পূর্বের নমুনা Amniotic fluid বা chorionic villus sample সংগ্রহ করা যেতে পারে।তবে এই পদ্বতি ঝুকিপূর্ণ।
কে বা কারা ডিএনএ টেস্ট করতে পারবেন?
এই ল্যাবরেটরী পুলিশ কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত অথবা অথবা আদালত কর্তৃক নির্দেশিত মামলার ডিএনএ পরীক্ষা করবে।টেস্টের রিপোর্ট শুধুমাত্র যথাযথ কতৃপক্ষকে (পুলিশ বা আদালত) কে প্রদান করবে।
ডিএন এ পরীক্ষার ব্যয় কে বহন করবে: ডিএন এ পরীক্ষার ব্যয়ভার অনুরোধকারী কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
ডিএন এ পরীক্ষার ব্যয় কিভাবে পরিশোধ করতে হবে:
ডিএনএ পরীক্ষার ব্যয়, প্রধান, ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্র্রোফালিং ল্যাবরেটরী,ঢাকা মেডিকেল কলেজ বরাবর চেক,অর্ডার,ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে অথবা নগদ প্রদান করা যাবে।
বর্তমানে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এই প্রযুক্তিটি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে।অপরাধ তদন্ত ক্ষেত্রে ডিএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মো: জাহিদুল হক
এল.এল.বি & এল.এল.এম (ই.বি)
আইন গবেষক, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ল এন্ড হিউম্যান রাইটস।