সব
facebook apsnews24.com
শিক্ষা নিয়ে আমার ভাবনা - APSNews24.Com

শিক্ষা নিয়ে আমার ভাবনা

শিক্ষা নিয়ে আমার ভাবনা

নেলসন ম্যান্ডেলার মতে “শিক্ষা হলো এমন এক অস্ত্র যার মাধ্যমে পৃথিবী বদলে দেয়া যায়। “পৃথিবী বদলে দেওয়ার মতো অস্ত্র আমদের হাতে থাকতেও আমরা পৃথিবী তো দূরের কথা নিজের ভাগ্য পর্যন্ত বদলাতে পারি না। এর জন্য দায়ীকে?? আমি বা আমরা নাকি প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা?? ১৬-১৮ বছর একাডেমিক শিক্ষা অর্জন করে যখন একজন শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে গিয়ে দাড়ায় তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যে,আপনি এম.এস.ওয়ার্ড পাড়েন?? ডেটাবেজ জানেন??টাইপিং স্পিড কত?? আর যখন এগুলোর উত্তর হয়:না, পারি না।তখন চাকরির বাজার ঘোষণা করে আপনি অযোগ্য। যদি অযোগ্যই হবো তবে এতো কষ্ট করে কেন লেখা-পড়া করা?? দীর্ঘ ১৮ বছর লেখা পড়ার পরও যদি একজন শিক্ষার্থী কর্মমুখী/জীবনমূখী হয়ে না উঠতে পারে তাহলে সে শিক্ষা/শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্য কি??

আবার অনেক ক্ষেত্রে সমীকরণটা এমন দাড়ায় যে একজন লোক লেখা পড়া না করে ১৪-১৫ বছরে কাজ শুরু করলে ২৫-৩০ বছর বয়সের সময় তার বেতন ২৫-৩০ হাজার বা তারও বেশি হয়। আর ১৮ বছর লেখা-পড়া করে একজন স্নাতক/স্নাতকোত্তর পাস শিক্ষার্থীকে ১৫-২০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতে হয়ে।রাষ্ট্রের কাছে একজন মূর্খ শ্রমিক যদি বেশি মূল্যায়ন পায়,তাহলে তথাকথিত শিক্ষা গ্রহণ করে লাভ কি?? আর এই শিক্ষা ব্যবস্থার আউট-কাম টা-ই বা কি??উল্লেখ থাকে যে, এই ১৬ কিংবা ১৮ বছর শিক্ষাকালে একজন শিক্ষার্থীর পিছনে হিউজ পরিমাণে ইনভেস্ট করা হয়।

যেখানে লেখা-পড়া না করে ছোটবেলা থেকে কাজ করলে যুবক বয়সে বেশি পয়সা আয় করা যায় সেখানে আমরা কেন এই লস প্রজেক্টে হাতে নিব??শুধুই জ্ঞান অর্জনের জন্য?? একবিংশ শতাব্দিতে দড়িয়ে এমন কথা কৌতুক ভিন্ন অন্য কিছু যে হতে পারে না সেটি সবার চোখে প্রমাণিত।শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দুটি-১. মানুষকে জ্ঞানী করে তোলা। এবং ২. মানুষকে কর্মমূখী/জীবনমূখী করে তোলা। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবতায় কোনোটাই যে ষোলোআনা সম্ভব নয় সেটি যে কেউ চোখ বুঝে স্বীকার করবে। ১৬/১৮ বছর শিক্ষা জীবন পেরিয়ে একজন শিক্ষার্থী যখন- না পারে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে, না পারে ঠিকঠাক উচ্চারণে বাংলা-ইংলিশ বলতে,তখন প্রশ্ন ওঠে এই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কি?? তাই আজকের চরম বাস্তবতায় দাড়িয়ে রাতারাতি শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আসা উচিত।
আমার মতে শিক্ষা ব্যবস্থা যেমন হলে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব তার একটি সুপারিশমালা নিচে দেয়া হলোঃ- চারটি ধাপে শিক্ষা-কার্যক্রমকে ভাগ করতে হবে।

যথাঃ ১.প্রাথমিক, ২.মাধ্যমিক ৩.উচ্চ মাধ্যমিক ও ৪.স্নাতক ও স্নাতকোত্তর

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম-পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চারটি বিষয় থাকবে।সেগুলোঃবাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা।এখানে রিডিং, লিসেনিং এবং উচ্চারণ বিধি ও যোগ বিয়োগ গুন ভাগ হবে শিক্ষার মূল লক্ষ্যমাত্রা।পঞ্চম শ্রেণিতে একটি বোর্ড এক্সাম নিতে হবে।তবে সেই সার্টিফিকেটে কোনো রেজাল্ট লেখা থাকবে না।শুধু পাস/ফেল লেখা থাকবে।আর এই বোর্ড এক্সামের সাথে রিডিং,লিসেনিং ও উচ্চারণ বিধি যাচাইয়ের জন্য মৌখিক পরীক্ষা নিতে হবে।এখানে যারা পাস করবে সবাইকে উৎসাহ বৃত্তি দেয়া হবে।মাধ্যমিক পর্যায়কে দুইটি ভাগ করতে হবে।ষষ্ঠ-অষ্টম প্রাক মাধ্যমিক।

নবম-দশম মাধ্যমিক।ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির পর্যন্ত ৭টি বিষয় থাকবে।বিষয় গুলো হলোঃ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ, ধর্ম ও আই.সি.টি.। এখানে শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি শব্দ ভান্ডার যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।সেই সাথে স্পোকেন ইংলিশের কোর্স চালু থাকবে। এবং প্রতি শিক্ষার্থীকে স্বল্পো মূল্যে এবং ৫ বছর মেয়াদি সহজ কিস্তিতে ভালো মানের কম্পিউটার নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক স্কুলে কমপক্ষে একজন করে শরীরচর্চা ও খেলাধুলায় যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক দিতে হবে।তার কাজ হবে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও শরীরচর্চা শেখানো।

এবং ভালো খেলোয়াড় খুজে বেড় করে বি.কে.এস.পি-তে ট্রায়েল দিতে নিয়ে যাওয়া। কোনো স্কুল যদি বি.কে.এস.পি-কে একজন খেলোয়াড় দিতে পারে তবে ঐ স্কুলসহ নির্দিষ্ট শিক্ষককে এককালীন অর্থ পুরোস্কার নিশ্চিত করতে হবে। অষ্টম শ্রেণিতে বোর্ড পরীক্ষা নেয়া হবে। এখানেও সার্টিফিকেটে কোনো রেজাল্ট লেখা থাকবে না।

তবে কে কোন গ্রুপে পড়ার উপযুক্ত তার একটি জাজমেন্ট দেয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিজ ইচ্ছায় ও গ্রুপ পছন্দের সুযোগ থাকবে। নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা এই তিনটি গ্রুপ বিভাজন করা হবে।গ্রুপ ভিত্তিক বই, বাংলা, ইংরেজি (গণিত,মানবিক ও ব্যবসা গ্রুপের জন্য) আই.সি.টি. ও ধর্ম শিক্ষা বই থাকবে। এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট জি.পি.এ-তে দেয়া হবে। এছাড়াও স্পোকেন ইংলিশের উপর আলাদা সার্টিফিকেট এবং একটি সাধারণ কম্পিউটার শিক্ষা সার্টিফিকেট দেয়া হবে।যেটি বিভিন্ন চাকরির বাজার চেয়ে থাকে।উচ্চ মাধ্যমিক বর্তমানের ন্যায় থাকবে। সাথে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কলেজের আন্ডারে বাধ্যতামূলক আউটসোর্সিং শেখাতে হবে। এবং গ্রুমিং এর মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতেক শিক্ষার্থী অনর্গল ইংলিশ ও বাংলায় কথা বলতে পারে। এবং সেটি সঠিক উচ্চারণ বিধি মেনে।

তাছাড়া প্রতিটি স্কুল ও কলেজ শিল্পো কলকারখানার সাথে যুক্ত থাকতে হবে।এই সব শিল্পো কারখানার হাতের কাজ গুলি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শেখাতে হবে। যেমন ঘড়ির যন্ত্রপাতি লাগানো, শার্টের বোতাম লাগানো ইত্যাদি। এবং যে সকল শিক্ষার্থীরা হাতের কাজে পারদর্শী হবে তাদের স্বল্পো পারিশ্রমিকে বাড়িতে কাজ দিতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন জীবনমূখী হয়ে উঠবে তেমনি কারখানারও স্বল্পো খরচে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নিজ অভিগ্যতা খুবই কম।তাই এই ব্যাপারে আমার কোনো ভাবনাও নাই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যে সঠিক পথে হাটছে না সেটা খুব টের পাচ্ছি।

লেখকঃ কায়েস মাহমুদ, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj