ল্যাটিন শব্দ Suicidium থেকে Suicide শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ নিজেই নিজেকে হত্যা করা। বর্তমানে আত্মহত্যার প্রবণতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
মানুষ নানা কারণে আত্মহত্যা করে থাকেন এর মধ্যে,
১.ডিপ্রেশন।
২.ব্যক্তিত্ব্যে সমস্যা।
৩. গুরুতর মানসিক রোগ
৪. অপরাধ বোধ,
৫.অশিক্ষা।
৬.দারিদ্র্য।
৭. দাম্পত্য কলহ।
৮.বেকারত্ব।
৯.পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ।
১০.দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা।
১১.প্রেমে ব্যর্থ।
১২.প্রতারণার স্বীকার,ইত্যাদি।
উপরে উল্লেখিত কারণ গুলোর মধ্যে আত্বহত্যার মূল কারণ হিসেবে ধরা হয় ডিপ্রেশনকে। ডিপ্রেশন একটি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি যা একজন মানুষকে সবার অজান্তে তিলে তিলে শেষ করে দেয়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৫ জনের ১ জন মানুষ কোনো না কোনো ধরনের ডিপ্রেশন বা এনজাইটিতে ভুগছেন।
ডিপ্রেশনের ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে আক্রান্ত রোগীরা নীরবে-নিভৃতে আত্মহত্যা করে বসেন। বিশ্বের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুর প্রধান কারন ডিপ্রেশন জনিত আত্মহত্যা।
ডিপ্রেশন বেশি দেখা যায় মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে।
বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন নারী বা পুরুষ আত্মহত্যা করছেন তন্মধ্যে ডিপ্রেশন অন্যতম।
বাংলাদেশের শতকরা ১৮ থেকে ২০ ভাগ মানুষ কোনো না কোনো প্রকারের ডিপ্রেশন বা এনজাইটিতে ভুগছেন। পরিবারের অনেকে হয়তো জানেন-ই না যে, তারা ডিপ্রেশনের রোগী। আমাদের অনেকেই আছেন ডিপ্রেশন সম্পর্কে অজ্ঞ এবং কেউ কেউ ডিপ্রেশনকে রোগই মনে করেন না।
সুশান্ত সিং রাজপুত ( আমার প্রিয় একজন অভিনেতা আাজ মারা গিয়েছেন) মূলত যারা ডিপ্রেশনে আছেন তাদের উদ্দেশ্য আমার এই লেখাটি।
জীবন চলার পথে অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে বাট কখনো আত্মহত্যার কথা মুখে উচ্চারণ তো দূরে থাক ভাবাও যাবে না। কোন ব্যক্তি যখন আত্মহত্যার কথা ভাবেন তখন শয়তান তাকে চতুর্দিক দিয়ে ঘিরে ধরে।
আমার জীবনেও অনেক বাধা এসেছে বাট কখনো ভুলেও ভাবিনি আত্মহত্যার কথা শুধু ভেবেছি সামনে এগুতেই হবে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্ তায়ালা উনার উপর ভরসা করে।
আত্মহত্যা সম্পর্কে প্রতিটি ধর্মে মহাপাপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পবিত্র ইসলামে আত্মহত্যা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন,
তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমা লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব; এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)
এছাড়াও আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ওইভাবে লাফিয়ে পড়ে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করে, সে-ও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ওইভাবে নিজ হাতে বিষ পান করতে থাকবে। আর যেকোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে, তার কাছে জাহান্নামে সেই ধারালো অস্ত্র থাকবে, যা দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেট ফুঁড়তে থাকবে। মুত্তাফাকুন আলায়হ্( সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কালীন আমার ক্লাসমেট প্রিয় বন্ধু নাজমুলকে হারিয়েছি এই মৃত্যুর ক্ষত আমাদের পুরা সেশন এবং ডিপার্টমেন্টকে আজও বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে যেটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। নাজমুলের বাবা-মায়ের আহাজারি আজও চোখে ভাসে।
আমাদের এমন ডিসিশন নেওয়ার আগে আমরা কেন ভাবতে পারি না যে, আমার মৃত্যু হলে আমার পরিবার পরিজন কি ভাবে সইবে এই শোক? কেন ভাবতে পারি না এটি একটি মহাপাপ? কেন ভাবতে পারি না সৃষ্টিকর্তা, সমাজ,রাষ্ট্র,পরিবারের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে?
আমরা কেন ভাবতে পারিনা যে, নিজের শরীরে ক্যান্সার হয়ার পরও কেন থেরাপির পর থেরাপি দেওয়া লোকটাও জীবনে বাঁচার স্বপ্ন দেখে শেষ নিশ্বাস অবধি। মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের এত সুন্দর জীবন দিয়েছেন তাহলে আপনি কোন কারণে আত্মহত্যার মত মহাপাপ কে বেছে নিচ্ছেন?
মহান সৃষ্টিকর্তা কি আপনাকে আত্মহত্যার জন্য সৃষ্টি করেছেন?
তাই, এখুনি এই সব ভাবনা থেকে সরে আশুন এবং সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন।
নিজেকে ডিপ্রেশড্ মনে হলে,যেগুলো করতে পারেন।
🔷 পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া এবং সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখা ( যে ধর্মেরই হোন না কেন সেই ধর্মে অবিচল থাকা)
🔷 কোন কিছু নিয়ে ডিপ্রেশন এ পড়লে সেটি নিয়ে কাছের বন্ধু বা পিতা মাতার সাথে শেয়ার করা।
🔷 একাকী না থাকা।
🔷 প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করা।
🔷 আত্মহত্যার কথা ভাবা বা চিন্তা না করা।
🔷 নিজেকে নিঃস্ব না ভাবা।
🔷 সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নেওয়া।
🔷 নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ডিপার্টমেন্টর প্রিয় শিক্ষকের সাথে ইন্টারনাল বিষয়গুলো শেয়ার করা।
আত্মহত্যা কোন সমাধান হতে পারেনা জীবনযুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার নামই জীবন। যে সৃষ্টিকর্তা আমাদের জীবন দিয়েছেন সেই সৃষ্টিকর্তায় আমাদের নিদিষ্ট সময়ের পর দুনিয়া থেকে নিয়ে যাবেন। সো,আমরা আত্মহত্যার মত মহাপাপ কে না বলি।
মিজানুর রহমান নাহিয়ান
শিক্ষার্থী,আইন বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ,বাংলাদেশ।
ইমেইল: mizanlawiu@gmail.com