ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা আলোচিত বিষয় হচ্ছে ম্যারিটাল রেইপ, অনেকেই এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, আমি খুব সংক্ষেপে সামান্য কিছু কথা বলতে চাই। ম্যারিটাল রেইপ টার্ম টাই সঠিক কোন টার্ম না, ম্যারিজ এবং রেইপ দুই জায়গায়ই নারীর সাথে পুরুষের ইন্টারকোর্স হয় তবে দুটোর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। যদিও রেইপের ক্ষেত্রে কনসেন্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ এলিমেন্ট, এটাই একমাত্র এলিমেন্ট না।
একটা বিষয় গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝতে পারবো রেইপের মাধ্যমে কিন্তু একজন নারী কে হার্ট করা হয় এটা কখনো সিম্পল বডিলি হার্ট কখনো গ্রিভিয়াস বডিলি হার্ট, পেনাল কোডে হার্ট বা আঘাতের শাস্তি হলো সর্বোচ্চ তিন বছর সাজা, গ্রিভিয়াস হার্ট ও ১০ বছরের উপরে সাজা নয়, অথচ রেইপের সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ইসলামিক আইনে মৃত্যুদন্ড ও রয়েছে।
দুটোর শাস্তির এতো পার্থক্যের ফিলোসফি খেয়াল করতে হবে, আপনি যদি কাউকে বডিলি হার্ট করেন সেখানে সর্বোচ্চ তার একটা অঙ্গহানি হয় কিন্তু কাউকে রেইপ করলে সে শারীরিক আঘাত যত ছোটই পাক না কেন, সামাজিকভাবে সে কিন্তু মৃত্যুর পর্যায়ে চলে যায়, আর এই সামাজিক হত্যার বিচার করতে গিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কমপক্ষে দেয়া উচিৎ।
অন্যদিকে, বিয়ের পর যদি কোন নারীর সাথে তার স্বামী জোরপূর্বক সহবাস করে তবে তাতে কিন্তু এই সামাজিক হত্যাকাণ্ড ঘটে না শুধু হার্ট বা আঘাতের ঘটনাই ঘটে, সেক্ষেত্রে রেইপ বলা কখনোই উচিত নয়, সর্বোচ্চ ডমেস্টিক ভায়োলেন্স বলতে পারেন, এটার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটা ধারা যোগ করে বা ডমেস্টিক ভায়োলেন্স এ্যাক্টে ধারা যোগ করে দিতে পারেন।
ম্যারিটাল রেইপ হিসেবে গণ্য করে একজন পুরুষ কে সবসময় অনিরাপদ রাখতে পারেন না, একজন নারী বিবাহের সময় সবধরনের কনসেন্ট দিয়েই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তবে তাই বলে তার মাসিকের সময় তার সাথে যৌন সঙ্গম করা যাবে না, এটা কুরআনে ই নিষিদ্ধ, তেমনিভাবে তার কষ্টের সময় ও তার সাথে যৌনসঙ্গম করা যাবে না, এটা ধর্মীয় দিক থেকেও অপরাধ কিন্তু অপরাধের মাত্রা টা রেইপ পর্যায়ে নয়।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো রেইপ হতে হলে যে সাক্ষী প্রয়োজন সেই সাক্ষী কারো বেডরুমে থাকতে পারে না, অতএব ম্যারিটাল রেইপ টার্ম ব্যবহার করে ভয়ানক আইন করলে পুরুষের লিঙ্গে তালা মারা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না, কারণ সাধারণ ঝগড়ার পরেই নারী তার স্বামীর বিরুদ্ধে ম্যারিটাল রেইপের মামলা করবে না এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না, যেমনটি এখন গালি দিলেই যৌতুকের মামলা, তালাক দিলেই যৌতুকের মামলা এমনকি পরকীয়ায় বাধা দিলেও যৌতুকের মামলা হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে।
বি: দ্র: পবিত্র কুরআন মাজিদের এসেছে “হে নবী (স:) যখন আপনাকে হায়েজ (মাসিক) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন বলুন যে উহা (মাসিক) নারীর জন্য অত্যন্ত কষ্টকর, তাই মাসিক অবস্থায় সহবাস করো না” এখানে সহবাস না করার মুল কারন কষ্ট তাই নারীকে কষ্ট দিয়ে সহবাস উচিত হবে না। হাদীস শরীফে এসেছে (ভাবার্থ)– “যে নারীকে তার স্বামী (সহবাসের জন্য) আহ্বান করলো, (কোন যৌক্তিক কারন যেমন রোগ, মাসিক ছাড়া) কিন্তু ঐ নারী স্বামীর আহ্বানে সাড়া দিলো না, ঐ নারীর প্রতি আল্লাহ এতটাই অসন্তুষ্ট হন যে ফেরেশতারা পর্যন্ত সারারাত ঐ নারী কে অভিশাপ দিতে থাকে”।
লেখকঃ ফাইজুল্লাহ ফায়েজ, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।