সব
facebook apsnews24.com
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,পুরুষ নির্যাতনের অন্যতম হাতিয়ার নয় কি? - APSNews24.Com

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,পুরুষ নির্যাতনের অন্যতম হাতিয়ার নয় কি?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,পুরুষ নির্যাতনের অন্যতম হাতিয়ার নয় কি?

নারী নির্যাতনের আধিক্যে পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টি স্থান পায় কি না তা অবশ্যই বিতর্কের উর্দ্ধে নয়। পুরুষ নির্যাতনের স্বিকার হয়ে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করতেও দেখা যায় পুরুষ নির্যাতনের স্বিকার পুরুষদের। পুরুষদের পক্ষে আইন করার জন্য এখন বিভিন্ন সংগঠন বাংলাদেশে কাজ করছে। কিন্তু এ লেখাটি ‘নারী নির্যাতন দমন আইন’ এর অপব্যবহার নিয়ে। অবশ্য অপব্যবহার সবক্ষেত্রে হয় না। এই আইনের মাধ্যমে রিলিফ দেওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বড় ধরনের উদাসীনতা। নারীদের নিয়ে অনেক এনজিও রমরমা ‘ব্যবসা’ করছে। সঠিক বিষয়গুলো সামনে না এনে অনেক ক্ষেত্রে তারা সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষেত্রে অশান্তি তৈরী করছে। নারীবাদীরা এ কথায় তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠবেন স্বাভাবিক।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সর্ব প্রথম প্রণীত হয় ১৯৯৫ সালে। ২০০০ সালে এর সংশোধন হয়। তৃতীয়বারের মত ২০০৩ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী আদালতগুলো এখন বিচারকার্য পরিচালনা করছে। 

এ আইন প্রণয়নের পর থেকেই যৌতুকের কারণে মারধরের মিথ্যা মামলায় আদালত উপচে পড়ছে। যার মূল কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে, 

১.অতি দ্রুত প্রতিকার পাওয়া যায় যা অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে এত দ্রুত প্রতিকার সাধারণত পাওয়া যায় না।

২.এই আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

৩.এই আইনে অপরাধ জামিন অযোগ্য।

 যে বিষয় বিভিন্ন সময় নারীবাদী ও আইনী সহায়তা দেওয়া বিভিন্ন সংগঠন, এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোও বলে আসছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরছে। কিন্ত এর উওম প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আবারো এ আইন সংশোধনের কথা উঠেছে।

কিন্তু আইন সংশোধনটি যদি বাস্তবতা উপেক্ষা করে তৈরি হয় তবে সেটি হবে হিতে বিপরীত। আসলে কাঁচের মধ্যে বসে যারা তত্ত্ব চর্চা করেন তারা ময়দানের প্রথম বক্তৃতায় নুয়ে পড়েন।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য আইন তৈরির সুপারিশ করেন অধিকাংশ নামধারী কথিত অনেক নারীবাদীরা (সবাইকে বলা হচ্ছে না) ।  দুর্নীতি আর ভণ্ডামির চেহারাটি মানবিক মুখোশে ঢেকে- স্বামী আর শ্বশুড়বাড়ির লোকদের অত্যাচারের হাত থেকে ইট ভাঙ্গারি নারীদের বাঁচাতে আইন করতে চান তারা। তাই সব হ-য-ব-র-ল, আইন হলেও তাতে ন্যায্যতার বিষয় অনুপস্থিত থাকা অস্বাভাবিক নয়।

এসব কথিত নারীবাদীরা- নারী-পুরুষ সবারই শত্রু। সে কারণে নারী নির্যাতন দমন আইনের বেশিরভাগই পুরুষ নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দাবি উঠেছে ‘পুরুষ নির্যাতন বিরোধী আইন প্রণয়ন’ করার। কারণ বিজ্ঞানের সূত্র বলে, প্রত্যেক কাজের পেছনে কারণ এবং মোটিভ রয়েছে।

নারীদের সুরক্ষায় নিয়ে এতো আইন থাকা সত্ত্বেও কিন্তু ধর্ষণ, নির্যাতন ও নারী পাচার বাড়ছে, কমছে না। নারী ধর্ষণ, নারী পাচারের সত্য ঘটনার প্রচুর উদাহরণও রয়েছে। কিন্তু সঠিক বিচার পাচ্ছেন কয়জন?

গৃহকর্মী নির্যাতন করছেন সমাজের প্রভাবশালী, খ্যাতিমান অনেকে। কিন্তু গরীব, দরিদ্রের ইজ্জতের মূল্য আর বিচার চাওয়ার শক্তি কতটুকু? এসব ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে আপোস-মিমাংশা করে মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। ক্রিকেটার শাহাদাতের মামলাটি উজ্জ্বল উদাহরণ। পুলিশের হাতে হচ্ছে প্রচুর গৃহকর্মী নির্যাতন।

আইনের ছাএ হিসেবে কোর্ট ইর্ন্টানশীপের অভিজ্ঞতা থেকে এবং যা আমরা গণমাধ্যমে দেখি সেই বিবেচনা থেকে বলতে পারি যে, বিচারের আগেই আপোস-মিমাংশা হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এতে কিন্তু এই নির্যাতন করার রোগটি কমে না, বরং বেড়েই চলে।

গত ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের ঘরোয়া কর্ম-অধিবেশনে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. ইমান আলীর সভাপতিত্বে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার ৪০টির বেশি ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা এক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। এবিষয়ে প্রস্তুত করা হয় ১০ দফা-সম্বলিত একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ হিসেবে ‘মিথ্যা মামলা’কেই ১ নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ওই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী বিচারকেরা একমত হন যে, বাস্তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ব্যাপক অপপ্রয়োগ ঘটছে। আবার কঠোরতর শাস্তির বিধান ও তা কার্যকর করা সত্ত্বেও নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌতুকের মতো অপরাধের প্রকোপ কমেনি।

এজন্য তাঁরা বিদ্যমান আইনের কিছু ধারা অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে সংশোধনের সুপারিশ করেন। তাঁরা আক্ষেপ করে বলেছেন, আইনের ১১ক ধারায়  যৌতুকের জন্য শুধু মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির বিধান আছে। এর ফলে অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে সাজা দেওয়া যায় না, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। 

আবার স্বামী-স্ত্রী বিরোধে জড়িয়ে প্রথমে মামলা করলেও পরে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বা অন্য কারণে তাঁরা সংসার টেকাতে আপস করতে চান। কিন্তু আইনে আপসের সুযোগ নেই। এছাড়া ২০বছর আগের ওই আইনে যুক্ত করা ৩৩ ধারায় সরকারকে একটি বিধি তৈরি করে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা করতে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় বা মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় যথা পদক্ষেপ নেয়নি। বিধি না থাকার কারণে মামলা পরিচালনায় বিরাট সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিচারকদের। 

আবার অনেক গৃহবধূর পরপুরুষের সঙ্গে পরকীয়া থাকে। সে কারণে তাদের স্বামীরা ব্যভিচারের মামলা করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত অনেকক্ষেত্রেই ঝামেলায় যেতে চান না। আবার তালাক দেয়ার পরও অনেক স্ত্রী তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। স্বামীরা এসব মামলায় গ্রেপ্তার হন কিংবা আত্মসমর্পন করে জামিন নিতে আদালতে আসেন। পরে প্রমাণিত হয় যে, এ মামলা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। ততক্ষণে অভিযুক্ত স্বামীর ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে এবং নিরপরাধে জেল খাটতে হয়।
 এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয় কি?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক তাঁর নিবন্ধে বলেন- “এই আইনে দায়ের করা মামলার ৮০ শতাংশই যৌতুক-সংক্রান্ত। এর মধ্যে কেবল যৌতুকের দাবিতে মারপিট করে সাধারণ জখম করা কিংবা গুরুতর জখম করা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে যৌতুকের দাবিতে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো মামলার সংখ্যা ৫ শতাংশের কম।”

তিনি লিখেছেন- “তাহলে প্রশ্ন আসে, বাকি মামলাগুলো কী মিথ্যা? এর জবাবে বলা যায়, শুধু যৌতুকের দাবিতে মারধর করে সাধারণ জখম হওয়ার মামলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হলেও এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে যৌতুকের জন্য মারপিট করার উপাদান অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।

তবে এই মামলাগুলো একেবারেই মিথ্যা নয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো কারণে মতের অমিল হলে কিংবা তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া না থাকার কারণে, বনিবনা না হলে কিংবা স্বামীর আত্মীয স্বজনের সঙ্গে স্ত্রীর মতামতের পার্থক্যের কারণে পারিবারিক জীবন অশান্তিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্ত্রী কোনো উপায়ন্তর  না দেখে এবং এ-সংক্রান্ত  কোনো ফোরাম না পেয়ে বাধ্য হয়ে দ্রুত প্রতিকার লাভের আশায় স্বামীকে এবং তাঁর নিকটাত্মীয়দের আসামি করে এই আইনের ১১(গ) ধারার বিধান অনুযায়ী মামলা দায়ের করে থাকেন।”

শত শত অনেক নির্যাতিত পুরুষ আইনজীবীদের কাছে আসেন স্ত্রীর অত্যাচারের ব্যাপারে আইনে সুযোগ কি আছে তা জানতে। কিন্তু আইনজীবী এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন তাদের নিরাশ করে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু তারা অত্যাচারের হাত থেকে বাচতে আইনী প্রতিকার চান। পুরুষ নির্যাতন দমন আইন এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

ধর্ষণের ঘটনা ইদানিং আরও বেড়েছে। এটা পুরুষেতন্ত্রের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এ কথা ঠিক। ধর্ষকের এখন শুক্লপক্ষ। আর কৃষ্ণপক্ষ নারীদের। কিন্তু ধর্ষণ মামলায় সঠিক ও কার্যকর বিচারে তো নারী সংগঠনগুলো মোটেও সফল নয়। আর যে কারণে ধর্ষণের প্রাবল্য কমছে না। কেন নারী অধিকার কর্মীরা মোটেও সফলতার মুখ দেখে না তা ভেবে দেখার বিষয়।

একদিকে নারী অধিকার কর্মীরা প্রতিবাদ করছেন উল্টেদিকে  নারী নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে সমানতালে। পুরুষ কর্তৃক নারী ধর্ষণের সত্য ঘটনার বিচার পেতে অনেক বেগ পেতে হয়। আবার আইন ফাঁক-ফোকর গলে অনেক ধর্ষক পিছলে বেরিয়ে যায়। আবার তুলনায় স্বল্প হলেও ধর্ষণের মিথ্যা মামলারও উদাহরণ রয়েছে।

রয়েছে গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন। গৃহকর্মীদের এ নির্যাতনে কিন্তু শুধু পুরুষের উপস্থিতি থাকে না, নারীদের উপস্থিতিও যথেষ্ট মাত্রায় থাকে। অর্থাৎ গৃহকর্মীদের বিশেষত বালিকা গৃহকর্মীদের খুন্তির ছ্যাঁকা অথবা বেলুনি দিয়ে প্রহারে নারীর অংশগ্রহণ কিন্তু কম নয়। বরং পুরুষের চেয়ে বেশি বলেই দেখা যায়।

আইন ও সালিস কেন্দ্র, মহিলা পরিষদের দায়ের করা অনেক যৌতুকের মামলাই মিথ্যা ঘটনার রসায়ন দিয়ে নির্মিত হয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছে। উদাহরণ আর নাই বা দিলাম।

নারীদের হাতেও পুরুষরা নানাভাবে হেনস্থা হন, তাদের স্বাধীনতা হারান এটি প্রমাণিত সত্য। 

বিভিন্ন তথ্য-উপাও এবং বাস্তবতার পরিপেক্ষিতে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ৮০-৯০ শতাংশ নারী নির্মাতনের মামলা মিথ্যা।

নারী নির্যাতন দমন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায় স্ত্রী তার স্বামীর সাথে অন্য সমস্যা থাকার কারণেও এই আইনটি তাদের হাতিয়ার হিসাবে  ব্যবহার করেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়ে স্বামীর বাবা,মা এবং আত্মীয় স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন অথচ স্বামীর বাবা,মা বা আত্মীয় স্বজনরা কোন ভাবেই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। 

সর্বশেষ বলতে চাই এই আইনটি পুরুষ নির্যাতনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সময়ের পরিক্রমায় এই আইনটি সংশোধনের সময় এসেছে। সেই সাথে পুরুষ নির্যাতন দমনের ক্ষেত্রে  আইন প্রণয়ন করা যায় কি না,তা নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। 

শিক্ষার্থী,
মিজানুর রহমান নাহিয়ান
আইন বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ,বাংলাদেশ।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj