(Violence against women is one of the obstacles in the progress of development)
জাতীয় কবির একটি বিখ্যাত পঙক্তি দিয়ে শুরু করতে চাই…….
“কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী
পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়েছে,শক্তি দিয়েছে
বিজয়ালক্ষ্ণী নারী”
🔷আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক হলেও কিন্তু নারীর অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
প্রথমে দেখে নেয়া যাক বিজয়ালক্ষ্ণী নারীদের অবদানসমূহ।দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের যতগুলো খাত আছে তার প্রায় সবক’টিতেই নারীর অবদান রয়েছে।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তৈরি পোশাক শিল্প।ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতার, কাবাডি, ভার উত্তোলনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা থেকে শুরু করে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ পর্যন্ত জয় করছে নারীরা।পাবলিক পরীক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণও বেড়ে গেছে।
🔷গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবাসহ কিছু পেশায় পুরুষদের ছাড়িয়ে গেছেন নারীরা।
শুধু বাংলাদেশে নয়,সারা বিশ্বেই নারী নেতৃত্বের জয়জয়কার।বিভিন্ন দেশে রেকর্ডসংখ্যক নারী এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন যা বৈশ্বিক রাজনীতির চেহারা পাল্টে দিচ্ছে।মেক্সিকোর সাম্প্রতিক নির্বাচনে দেশটির পার্লামেন্টে দুই কক্ষেই সমানসংখ্যক নারী ও পুরুষ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন যে ঘটনাকে একটি বড় মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।স্পেনের মন্ত্রিসভায় পুরুষের চেয়ে বেশি নারীকে মনোনীত করা হয়েছে।
🔷এসব তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে,নারীরা আর চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ নেই।বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী,এদেশে খোদ প্রধানমন্ত্রী টানা তিনটি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্ব করছেন, সংসদের স্পিকার নারী; মন্ত্রিসভা, সংসদ, সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন,বিচার বিভাগসহ উচ্চপর্যায়ে নারীরা অধিষ্ঠিত।সর্বক্ষেত্রে নারীর জয়জয়কার।সবকিছুই ঠিকঠাক তবুও বাঁশি যেন ঠিকসুরে বাজছে না।নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রযাত্রা বাড়লেও কমছে না নারীর প্রতি সহিংসতা।
🔷বিশেষজ্ঞদের মতে,বিশ্বে নারী নির্যাতনের ইতিহাস অতি পুরনো।আরব দেশে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে কন্যা শিশুদের জ্যান্ত কবর দেয়া হতো।প্রাচীন ভারতে হিন্দু বিধবাদের স্বামীর সঙ্গে জ্বলন্ত চিতায় পুড়িয়ে মারা হতো।বর্তমান সময়ে নতুন বোতলে পুরনো শরাবের মতোই পাল্টেছে নির্যাতনের ধরন।ঘরে বাইরে সর্বত্র নারীর জীবনের নিরাপত্তা আজ শূন্যের কোটায়।
🔷বাংলাদেশের নারী নির্যাতন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,নারী যদিও কোনো একক সত্তা নয়, শ্রেণি, বয়স, পেশা, সামাজিক অবস্থানের তারতম্য থাকলেও সে নারী এটাই তার প্রধান পরিচয় এবং এ কারণে তাকে সহিংসতার শিকার হতে হয়।নারী সহিংসতার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ,গৃহ নির্যাতন,প্রজননগত জোর-জবরদস্তি,যৌন হয়রানি, লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাত,প্রসবকালীন সহিংসতা, উচ্ছৃঙ্খল জনতার দ্বারা সহিংসতা বা দাঙ্গা,রীতি বা আচারগত চর্চা যেমন সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বা Honour Killing, যৌতুক সহিংসতা,নারী খৎনা, অপহরণপূর্বক বিবাহ বা জোরপূর্বক বিবাহ।আবার যৌন সহিংসতা সংঘঠিত অপরাধ চক্রের দ্বারা নারী পাচার এবং জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি,যৌন দাসত্ব, বাধ্যতামূলক নির্বীজন,পাথর ছুড়ে হত্যা বা চাবুক মারা So on…
🔷বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ২০১৯ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সংঘটিত নির্যাতনের ৩ হাজার ৪৪৩টি ঘটনার মধ্যে ধর্ষণ এক হাজার ৪১টি, গণধর্ষণ ১৭৮টি, ধর্ষণের চেষ্টা ১৯৫টি, যৌন নিপীড়ন ১৪০টি।সর্বমোট ৩১ রকমের নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে এতে।বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মোট ১ হাজার ৫৫৪ ধর্ষণসংশ্লিষ্ট নির্যাতন বিশ্লেষণ করেছে,যেখানে দেখা যায় প্রায় ৫০ শতাংশ নারী ধর্ষণের মতো বর্বর পশুত্বপূর্ণ নির্যাতনের শিকার হয়েছে।দেখা যাচ্ছে নির্যাতনকারীর মধ্যে রয়েছেন পরিবারের নিকটতম সদস্যসহ বাবা-চাচার মতো অভিভাবক, রয়েছেন শিক্ষক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য,গণপরিবহনের কর্মী ও অন্যান্য।নির্যাতনের শিকার নারীর বয়সও কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়।৪ বছরের শিশুও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে,আবার ৮০ বছরের বৃদ্ধাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতনের আরেকটি ভয়াবহ ধরন হচ্ছে সাইবার ক্রাইম।
নারী নির্যাতনের কাজে ব্যাপকভাবে এ প্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে।
🔷১৯৯৩ সালে ভিয়েনা মানবাধিকার সম্মেলনে তৎকালীন বিশ্ব পেয়েছিল দুটি প্রত্যয়,নারীর অধিকার,মানবাধিকার এবং নারী নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন।১৯৯৩ সালের সেই প্রত্যয়ের অনুসরণে ২০২০ সালে এসেও বলতে হচ্ছে নারী নির্যাতন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।লিঙ্গভিত্তিক এই নির্যাতন নারী-পুরুষের বৈষম্যের একটি বর্বর প্রকাশ।দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ভয়াবহতা ও নিষ্ঠুরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।নির্যাতনের পদ্ধতিতেও যুক্ত হচ্ছে নৃশংসতার নতুন নতুন মাত্রা।
🔷১৯৯৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের নারী নির্যাতন বিষয়ক ঘোষণায় বলা হয়,নারীর অধিকারগুলো হবেঃ জীবনের অধিকার,সমতার অধিকার,স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার, আইনের দৃষ্টিতে সম-নিরাপত্তার অধিকার,সব ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্ত হওয়ার অধিকার, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সেবা লাভের অধিকার,ন্যায্য ও অনুকূল কর্মপরিবেশের অধিকার,কোনো প্রকার নির্যাতন অথবা অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ অথবা অধস্তন দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন আচরণ ও শাস্তি না পাওয়ার অধিকার।নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলধারায় নারীকে যুক্ত করার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন নারীর সব ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে মুক্ত হওয়া।
🔷মূলত নারী নির্যাতনের প্রধান কারণ যদি আমরা চিহ্নিত করতে চাই,তা হলে দেখা যাচ্ছে নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং ক্ষমতার কাঠামোয় নারীর অধস্তন অবস্থান ও নারীর ব্যক্তি অধিকারের অস্বীকৃতিকেই বোঝায়।কারণ এসবের নেপথ্যে রয়েছে পুরুষত্ব (Masculinity)।সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট জেন্ডার ধারণার মধ্য দিয়ে তৈরি হয় আগ্রাসী পুরুষত্ব মনোভাব।জন্মের পর শিশুকে সামাজিকীকরণের মধ্য দিয়ে নারী ও পুরুষ হিসেবে তৈরি করা হয়।ফলে উভয়েরই মানুষ হয়ে ওঠা হয় না,দুই পক্ষই হয় দ্বিখণ্ডিত মানুষ।সম্প্রতি ‘পৌরুষ-এর সংজ্ঞা বদলাতে হবে’ এই শিরোনামে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি শামীম আহমেদ লিখেছেন, “পুরুষত্বের যে ভয়ংকর গুণাবলি আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে,তা আমাদের মানুষ করে তোলেনি বরং অমানবিক করে তুলেছে।আবেগহীন পাথরসম পাষাণ,যা আমাদের সমাজে হানাহানি, কাটাকাটি ও হিংস্রতা এবং অন্যান্য নেতিবাচক কাজের নিয়ামক করে তুলেছে।সময় এসেছে পুরুষত্বের সংজ্ঞা বদলানোর।সময় এসেছে পুরুষের আবেগী কোমল হৃদয়ের মানুষ হওয়ার।”
🔷নারী নির্যাতনের আরো একটা বড় কারণ হিসেবে বলা যায়,সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পারিবারিক আচরণ।নারীকে এখনও দেখা হয় সংসারের ভার বহনকারী একজন মানুষ হিসেবে।সংসারের দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার মতো মানসিকতা এখনও আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে গড়ে ওঠেনি।সন্তান উৎপাদন ও গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত থাকার জন্যই নারীর জন্ম হয়েছে।এ ধরনের মানসিকতা অনেক প্রগতিশীল ব্যক্তিও পোষণ করেন।তাই সমাজে নারী নির্যাতন বাড়ছে বৈ কমছে না।
🔷Undoubtedly মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হল তার পরিবার।সারাদিনের কর্মক্লান্তি শেষে মানুষ এই নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরে একটু শান্তির জন্য।সুখ-দুঃখ তার পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্য।কিন্তু এ সংক্রান্ত তথ্য অত্যন্ত উদ্বেগজনকই শুধু নয় বলা যায় ভয়াবহ।নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী,দেশে বিবাহিত নারীর ৮০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হন।সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন স্বামী দ্বারা।আবার COVID-19 এর মত দূর্যোগের এসময় লকডাউন এর বদৌলতে নির্যাতনের মাত্রাও কম হয়নি।।কয়েকদিন আগে প্রথম আলো পত্রিকার একটি শিরোনামে দেখলাম”লকডাউনের এই সময় পরিবারের প্রায় ৬৫ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতিত হচ্ছে নিজেদের পরিবারে।”
🔷এছাড়াও মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী,দেশের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নারী পারিবারিক নির্যাতনের শিকার।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) Violence Against Women(VAW) জরিপ অনুযায়ী,৮৮ শতাংশ বলেছেন তারা স্বামীর সংসারে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন,৮৬ শতাংশ হন মানসিক নির্যাতনের শিকার আর যৌন নির্যাতনের শিকার হন ৫৫ শতাংশ।এর পরেই রয়েছে কর্মক্ষেত্র। ১৬ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন,২৬ শতাংশ মানসিক নির্যাতন আর ২৯ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
🔷আমাদের প্রিয় নবী আল্লাহ তায়ালার হাবিব হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,
‘তোমরা মেয়েদেরকে গালি দিও না, কেন না আমি নিজে মেয়েদের পিতা।’
ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম মেয়েদের এমনই একটি সম্মানজনক অবস্থানে বসিয়েছে।
🔷অথচ বাংলাদেশে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড বলছে,বাংলা ভাষায় অধিকাংশ হয়রানিমূলক কথা, গালি,তিরস্কারমূলক শব্দই সাধারণত নারীকে অবমাননা অথবা হয়রানি করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
সেই সঙ্গে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি নারীকে নানা ধরণের মানসিক নিগ্রহেরও শিকার হতে হয়। কোন ঝগড়া বিবাদে নারী বিভিন্ন ধরনের মৌখিক সহিংসতার শিকার হয়।
🔷হয়ত খেয়াল করেছেন,আপনার আশপাশে প্রচলিত বেশিরভাগ গালির সাথে স্ত্রী লিঙ্গের সম্পর্ক রয়েছে। অনেক তিরস্কারমূলক শব্দের পুরুষবাচক কিছুই নেই।যেমন ধরুন, বাংলাদেশের সমাজে কিছু প্রচলিত শব্দ আছে, যেগুলো বাংলা অভিধানেও রয়েছে,যে শব্দগুলো সাধারণত সবসময়ই মেয়েদের নেতিবাচক ভাবে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।যেমনঃ
* মুখরা—যে নারী খোঁচা দিয়ে বেশি কথা বলে
* ঝগড়াটে—যে ঝগড়া করে,
কিন্তু কোন আগ্রাসী পুরুষের জন্য এই শব্দগুলো ব্যবহার হয় না
* মাল—আকর্ষণীয় নারী
* বন্ধ্যা—সন্তান নেই যার
* পোড়ামুখী—খারাপ ভাগ্য যার
এছাড়া কিছু শব্দ, বাক্য বা প্রবাদ ও প্রবচন রয়েছে, যেগুলো দিয়ে নারীর কর্মদক্ষতা, বা যোগ্যতা খাটো করা হয়। আবার কিছু শব্দ আছে, যেগুলোর পুরুষবাচক শব্দ বাংলা ভাষায় নেই, যেমন ধরুন-
* ডাইনী
* কুটনি
* সতী ও অসতী
* নটী
সংস্থার কর্মকর্তা কাশফিয়া ফিরোজ বলছিলেন, এক গবেষণায় তারা দেখেছেন,শহরাঞ্চলে ৮৮ শতাংশ নারী,পথচারী কর্তৃক আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হন।
🔷যা হোক, এই একুশ শতকের চরম উৎকর্ষতার যুগেও ‘বিউটি’ বা ‘ফেয়ারনেস’ ক্রিমের বিজ্ঞাপনে গায়ের রং ফর্সা না হলে মেয়ের বিয়ে বারবার ভেঙে যাচ্ছে।এখনও বিজ্ঞাপনের মেয়েটি নজর কাড়ার জন্য ফর্সা হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
দিনভর সংসারে কাজ করে বাড়ির বউ ক্লান্ত হয়ে ব্যথা উপশমকারী মলমের শরণাপন্ন হচ্ছেন। কখনও আবার বিশেষ মশলা ব্যবহার করে বাড়ির জন্য রান্না করে শ্বশুরের মন জিতে নিচ্ছেন বউমা। পুরুষরা বিশেষ ‘ডিওডোরেন্ট’ ব্যবহার করার ফলে নারীরা তার দিকে আকৃষ্ট হয়ে ছুটে যাচ্ছেন।
চিন্তা-ভাবনার এই একমাত্রিকতাই প্রমাণ করে যে, নারীরা এখনও ভোগের সামগ্রী মাত্র।অন্তত সেভাবেই তাকে তুলে ধরা হচ্ছে বিজ্ঞাপনে।
🔷পরিতাপের বিষয়,নারী সহিংসতা রোধে আছে আইন,বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সনদ ও চুক্তি।কিন্তু এগুলোর কোনো বাস্তবায়ন নেই।এসব আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষও সচেতন নন।আবার অনেক নারীই এসব আইন সম্পর্কে জানেনও না।সর্বোপরি আইন প্রয়োগকারী ও আইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী ও দরিদ্র মানুষের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে।তাই আইনসমূহ বাস্তবায়নের অভাবে অপরাধীরা আরও বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে।আর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে যারা নির্যাতনের শিকার হননি তারাও সব সময় নির্যাতনের আতঙ্কে ভোগেন।অর্থাৎ এক ধরণের “Fear of Violence” তৈরি হয়েছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হতে পারে-
♦পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন।
নারীর অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার পেছনে যেসব বাধা কাজ করছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ।
♦এছাড়া নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের জন্য যেসব আইন ও নীতিমালা আছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ।
♦প্রচার ও গণমাধ্যমগুলোর আরো সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি অপরাধের শাস্তিগুলো তুলে ধরে জনগণকে সচেতন করা।
♦নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রধান চ্যালেঞ্জ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও নির্মূলের জন্য সমন্বিত বহুমাত্রিক কর্মসূচি গ্রহণ।সকলকে বুঝাতে হবে নারী নির্যাতন ব্যক্তিগত ইস্যু নয়, জেন্ডার ও মানবাধিকার ইস্যু
♦কাঠামোগত প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা গ্রহণ।
♦বিদ্যমান জেন্ডার সংবেদনশীল আইনের প্রয়োগ, প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়ন ও সংস্কার, ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সুশাসন।
♦নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কাজে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধিকরণ
♦ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, জনপ্রশাসন ও বিচারিক কাজে যুক্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ।
♦ পাঠ্যক্রমে জেন্ডার ও মানবাধিকার বিষয় গুরুত্বসহকারে যুক্তকরণ।
♦সিডও সনদের সম-অধিকারের ধারণার অনুরূপ সিডও সনদের ২ নং ও ১৬-(১) (গ) ধারায় স্বাক্ষর প্রদানসহ নারীর ব্যক্তিজীবনের অধিকার তথা বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব, সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিশ্চিতকরণ।
🔷পরিশেষে বলতে চাই,”Silence leads Violence.”
তাই আওয়াজ তুলতে হবে।নারীর উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়,নারীর মানবাধিকার তথা রাষ্ট্রের মানাবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও সমাজের সম্মিলিত ধারাবাহিক ভূমিকা প্রয়োজন।অবশ্য সাম্প্রতিককালে,নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে যেখানে বিভিন্ন সম্মেলন বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন ডিরেক্টিভ এর সাহায্যে আন্তর্জাতিক মাত্রায় এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাইছে।
লেখকঃ অ্যাডভোকেট আয়েশা সিদ্দিকা লোপা, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী।