মোঃ সুমন শেখ
আধুনিক সভ্যতার অগ্রযাত্রায় তরুণ সমাজও তাদের চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে।
কিন্তু বর্তমানে এই তরুণ সমাজ তাদের নিজেদের বিকাশ ও সফলতার পথে নিজেরাই বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে।
আজকের তরুণরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবামূলক কাজে তাদের অবদান রাখছে। আধুনিকতার ছোয়ায় তরুণরা যেন এক প্লাটফর্ম হিসেবে জাতির মাঝে বিরাজ করছে। তারা বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিয়োজিত হয়ে জাতির উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এতোকিছুর পরেও আজকের তরুণরা তাদের সফলতার মাঝে নিজেদের বিফলতারও প্রকাশ ঘটাচ্ছে। তারা তরুণ সমাজ নামে একটা জোট হিসেবে কাজ করলেও ক্রমে ক্রমে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ও ভাঙন সৃষ্টি করছে। তারুণ্যের বিকাশ হলেও তাদের আত্মিক বিকাশ টা এখনোও গড়ে ওঠেনি। আর তরুণদের মাঝে মানবিক চেতনা জাগ্রত না হলে শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ সেবায় পরিপূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করা সম্ভব নয়। কারণ উ”চ শিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে আধুনিকতার ছোয়ায় তরুণরা তাদের শেকড় কে ভুলে যাচ্ছে। হারিয়ে ফেলছে মানবিক মূল্যবোধকে। বলা হয়- “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড”। কিন্তু শিক্ষা অর্জন করে কেউ যদি সেই শিক্ষার অপব্যবহার করে এবং জাতির জন্য সেটা হুমকিসরূপ হয়ে দাড়ায়, তাহলে কি সেই শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলা যায়? সে শিক্ষা জাতির মেরুদন্ডকে আরো অচল করে দেয় এবং নষ্ট করে দেয় জাতির ভবিষ্যৎ। সুতরাং “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড না বলে “সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” বলা উচিত। একমাত্র সুশিক্ষাই পারে তরুণদের সত্যিকারের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে, পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ দ্বারা তাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে। এই পরিশুদ্ধ আত্মা ও মানবিকতা দিয়েই কেবলমাত্র জাতির উন্নয়ন সম্ভব।
বর্তমানে তরুণরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত হয়েও কাজ করছে। এখানে রাজনীতিকে খারাপ বলে অভিহিত করছি না। এটি যার যার ব্যক্তি স্বাধীনতা। কিন্তু বর্তমান তরুণরা অন্তর্ভুক্ত দলের ক্ষমতা নিয়ে সেটির অপব্যবহার করছে। সংগঠনের লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন না করে সেটিকে নেতিবাচক দিকে প্রতিফলিত করছে। ফলে তরুণরা নানা রকম অপরাধমুলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। বর্তমানে সামাজিক গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন অপরাধমুলক ঘটনা প্রকাশ করছে। যেখানে অপরাধগুলোর বেশির ভাগই তরুণদের দ্বারাই সংঘটিত। ফলে তরুণরা শুধু নিজের পরিবারের জন্য হুমকিস্বরূপ নয়, বরং সমগ্র জাতিকে প্রভাবিত করছে। ফলে তরুণ সমাজ তার সত্যিকারের অস্তিত্বকে নষ্ট করে ফেলছে। নিজেদের পথে নিজেরাই বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে।
আজকের তরুণরা যে বিষয়ের দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে তা হলো- “নারীর প্রতি আসক্ত”। এই আসক্তির কারণে তরুণরা তাদের বাস্তব জীবনকে হারিয়ে নাটকীয় জীবনে প্রবেশ করছে। এক তরুণ যদি শত শত তরুণীর স্ব”ছ জীবনকে নষ্ট করে এবং পরবর্তিতে একটি স্বচ্ছ তরুণীকে খুজে বেড়ায়, তাহলে কি সে সেই স্বচ্ছ তরুণীকে খুজে পাবে? জাতি যদি তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বা সম্পদকে নষ্ট করার জন্য নিজেই দ্বায়ী হয়, তাহলে সেই লক্ষ্যকে কে বাস্তবায়ন করবে? এই মানবিক মূল্যবোধটি যেদিন আমাদের তরুণ সমাজের মাঝে জাগ্রত হবে সেদিনই তাদের লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অন্যথায় নিজেরাই নিজেদের ভিত্তিকে নষ্ট করে ফেলবে।
এতোদিন জাতি তার তরুণ সমাজকে ভালো দৃষ্টিতে দেখেছে। কিন্তু আজ জাতি তার ভেতরে তরুণ সমাজের প্রতি একটি বিতৃষ্ণা ভাব ধারণ করেছে। জাতি চিন্তা করতো- তরুণরাই পারে জাতিকে উন্নয়নের শিখড়ে পৌছে দিতে। কিন্তু আজ সেই তরুণ সমাজই জাতিকে উন্নয়নের দিকে চালিত না করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। সমাজ ও দেশের জন্য অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে আজকের এই তরুণ সমাজ। শুধুমাত্র দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বে তরুণদের অপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। অল্প সময়েই এই প্রবণতা সামাজিক ব্যাধির মতোই একটি মারাত্মক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। পত্র-পত্রিকা একটু ঘাটাঘাটি করলেই দেখা যায় তরুণদের অপরাধের ধরণ দিন দিন পাল্টা”েছ। চুরি বা ঘর পালানোর মতো ছোট ছোট অপরাধ পেছনে ফেলে ছিনতাই, খুন এবং ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধে জরানোর প্রবণতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ও অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। মূলত এক শ্রেণীর তরুণ তথাকথিত বড় ভাইদের ছাত্রছায়ায় নিজেদের বাহাদুরি প্রমাণ করার জন্য জড়িয়ে পড়ছে এ ধরণের সংস্কৃতিতে। জড়িয়ে পড়ছে মাদকের মতো ভয়ংকর আসক্তিতে। সচরাচর যে অপরাধগুলো সংঘটিত হয়ে থাকে তা হলো- মোটরসাইকেল বা গাড়ি নিয়ে উচ্চ গতিতে রেসিং, এলাকার বড় ভাইদের নাম ভাঙিয়ে চাদাবাজি, ধুমপান, মাদকাসক্তি ও ইভটিজিংয়ের মতো নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই ধরণের প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেক ভাইয়েরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তরুণ প্রজন্নকে ব্যবহার করছে। আগামীর বিশ্বকে ধ্বংসের পথে চালনা করছে এই তরুণ সমাজ। জাতিকে করে তুলছে মেরুদন্ডহীন।
এতো কিছুর পরেও কি বলা চলে যে, তরুণরা জাতি ও বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে? তবে হ্যাঁ, তরুণরা তখনই জাতি গঠনে ভূমিকা পালন করবে যখন সত্যিকারের তারুণ্যতাকে নিজেদের ভেতরে ধারণ করবে এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করবে। তাহলেই তরুণরা সফল হবে। অন্যথায় তরুণরাই তরুণদের সফলতার পথে অন্তরায় হয়ে থাকবে। জাগো তরুণ সমাজ, জাগো….. এসো কল্যাণের পথে এসো…………
লেখক: মোঃ সুমন শেখ
শিক্ষার্থী
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।