অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান
মানব সভ্যতার ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, চলমান পৃথিবীর বর্তমানে বেঁচে থাকা মানুষের চাইতে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া মণীষীরা মানব সেবায়, দেশ প্রেমে, মানবতার কল্যাণে, আত্মত্যাগে অধিক প্রশংসার যোগ্য। আর এই পৃথিবীতে আজও যারা জন্মগ্রহণ করে নাই তারা পৃথিবীর সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা, পাপাচারেরর সাথে জানাজানি হয় নাই, তাদের জন্য শুভ কিছু না হলেও অশুভ কিছু নাই। কিন্তু আমরা যারা বেঁচে আছি দেখছি পাপ পূণ্য প্রতি মূহুর্তে সামাজিক কলুষতায় মানব সমাজের বিভৎস রুপ,নৈরাজ্য, মানবতা বিপর্যয়ের মহা প্রলয়, এই মহা প্রলয়ের একদিন শেষ হবে, সত্য ন্যায় ও মনুষ্যত্বের আলো পৃথিবীকে আলোকিত করবে- মানব ইতিহাস তাই বলে।
পৃথিবীতে মানবতা যখন বিপর্যস্ত হয়েছে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সামাজিক কলুষতায় মানুষ যখনই বিপন্ন হয়েছে তখনই শত মণীষীরা মানবতার মর্মবাণী নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন,গ্রহণ করেছেন এসবের বিরুদ্ধে বিরাট চ্যালেঞ্জ। যাঁরা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে দেশ জাতি ও মানবতার সেবায় ছিলেন নিবেদিত প্রাণ,
মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য। এই শ্বাশতবাণী আজ নতুন নয়, চলে আসছে সেই আবহমান কাল থেকে। মানুষ চায় মানুষের কাছে প্রেম-প্রীতি, সহমর্মিতা, ভালোবাসা, চায় এক বৃহত্তম সুশীল সমাজ, এক বিশ্ব, এক মানবতা। দেশে দেশে ব্যবধান শুধু দুরত্বের, জাতিতে-জাতিতে ব্যবধান তার ভাষায়, সাহিত্যে, কৃষ্টি, কালচার ও ধর্মে। সকল মানুষের মমত্ববোধ, মানবাধিকার, সভ্যতা ও মৌলিক অধিকার এক ও অভিন্ন। সকল মানুষের ক্ষুধার জ্বালা, পরাধীনতার গ্লানি, শোষিতের যন্ত্রনা, দুঃশাসনের সীমাহীন বঞ্চনা, সংবাদপত্রের ও বাক স্বাধীনতা হরনের বেদনা, মৌলিক ও মানবাধিকার লংঘণের যন্ত্রনা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ সবই যেন একই সূত্রে গাঁথা।
মানুষের কাছে আদালত একটি পুত পবিত্র স্থান,তাই বিচার বিভাগ হচ্ছে শান্তি ও ন্যায়ের প্রতীক, কাহারও শত্রু বা বন্ধু নয়, নিরপেক্ষ বা পক্ষপাতহীন একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান, তাই তার নিজস্ব ধারারই প্রবাহিত হতে দেখা উচিত। বিচার বিভাগের নির্মল স্বচ্ছ কার্যকারিতাই শুধু মানুষের, সমাজের, দেশ ও জাতির স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব বিচার বিভাগ যদি মৌলিক অধিকার বিরোধী হয় তবে সেই আইনের ও বিচারেরর প্রতি মানুষের আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকে না, সৃষ্টি হয় নৈরাজ্যের, আবার বিচারকেরা বিচার কার্যের জবাবদিহিতা বিচারককে বিব্রত করবে, যা ন্যায় বিচার ও নিরপেক্ষ বিচারে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে।
সংবাদপত্র একটি মুক্ত প্রতিষ্টান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বাধীন রাস্ট্রীয় প্রতিষ্টানের একটি অংশ, সঠিক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে বাঁধা না দেয়া সকলেরই কাম্য,সংবাদ পরিবেশনের অধিকারের উপর আঘাত করা জাতির বিবেকে আঘাত করারই সামিল। সকল দেশের মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আছে সুখ-দুঃখ,আনন্দ বেদনা, উৎসব,দায়িত্ব ও কর্তব্য সবকিছু মিলিয়েই একজন মানুষ আর একজন মানুষের মমত্ববোধে আবদ্ধ। একটি সমাজ অপর একটি সমাজেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, জাতিতে-জাতিতে বন্ধুত্ব, শত্রুতা বা প্রভুত্ব নয়। একটি দেশ আর একটি দেশের সৌহার্দে ভ্রাতৃত্বে পরিপোষক হওয়ায় বাঞ্চনীয়। আমাদের অবহেলায় সামাজিক অবকাঠামো যেন ভেঙ্গে না পড়ে,বিচার বিভাগ যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রুগ্ন না হয়ে উঠে,স্বাধীন সংবাদ পরিবেশন যেন ভঙ্গুর না হয়।আগামী দিনের ছিন্নমূল মানুষ ও শিশুরা যেন আমাদের অতি আনন্দে ও উৎসবে ও অবহেলায় স্বীকার না হয়ে অন্ন বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা, মমত্ববোধ, স্বাধীণতা, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়, এর ব্যত্যয় ঘটেছে ইতিপুর্বে বহুবার। তাই পৃথিবীর আদিকাল থেকে যখনই মানবতা ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, ভাষা সাহিত্য, কৃষ্টি কালচার, ধর্মে আঘাত এসেছে, সামাজিক ও ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হয়েছে, তখনই সকল দেশের সকল জাতির মধ্য থেকে সত্যের সাধক, মানব প্রেমিক, দেশ প্রেমিক, জনগণের সেবক, ন্যায় বিচারক, জাতীয় নেতাগণ বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন, নিজের জান মাল বিসর্জন দিয়ে জাতি ও জনগণের বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন,ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বর্তমান বিশ্বের প্রায়ই সর্বত্রই পরিবেশ কলুষিত নানারুপ অবক্ষয়-পীড়িত মানব সমাজ, বিশ্বে মানবতার অবমাননা, সারা বিশ্বব্যাপী আজ যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তার সমাধান বিশ্ব মানবতাবোধ-বিশ্ব মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। আজ সারাবিশ্বে সেই দেশপ্রেমিক সত্যের সাধক মানব প্রেমিক মনীষীদের বড়ই অভাব।
বিশ্বের সকল স্তরের সকল মানুষের কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে আমরা সকলেই চেষ্টা করে দেখি শত মণীষীর মধ্য থেকে আর একটি হযরত উমর ফারুক (রাঃ) খালিদ বিন ওয়ালিদ, আব্রাহাম লিংকন, মহাত্মা গান্ধী, শের-ই বাংলা একে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাজা রামমোহন রায়, সোহরাওয়ার্দী, বিচারপতি আশুতোশ মুখার্জি, বিচারপতি সৈয়দ আমির আলী, বিচারপতি কায়ানী, বিচারপতি মাহবুব মুর্শেদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী, আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, জিয়াউর রহমান, মাদার তেরেসা, নেলসন ম্যান্ডেলা এর মত ন্যায় মহা মানবের জন্ম দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর বার্তা রেখে যায়, সুন্দর দেশ ও সুন্দর পৃথিবীর জন্য সুন্দর মানুষ উপহার দেই। সমাজে শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক, খুলে যাক অবারিত ভ্রাতৃত্বের বন্ধন,মানবিক মূল্যবোধে জাগ্রত হোক সকল প্রাণ।
লেখকঃ অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, কলামিস্ট ও আইনজীবী, জজ কোর্ট, মেহেরপুর, E-mail:mizanmpur06@gmail.com