মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ্ আল-গালিব
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। সকলের মাঝে আনন্দ উল্লাস ভাগা ভাগি করে নেবার মাঝেই নিহিত রয়েছে ইদের তাৎপর্য।আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, “ও মন! রমজানের ঐ রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আজমানী তাগিদ।”
আমাদের অনেকেই বলতে শোনা যায়, এখন আর ইদের আনন্দ নেই, ইদ ছিল ছোট বেলায়। সীমাহীন আনন্দের রঙবেরঙ্গা ঢেউ খেলা করতো হৃদয় সাগরে। ছোট বেলায় আমাদের চাহিদা ছিল খুব অল্প। বাবা-মা যে পোষাক এনে দিত, কত যত্ন করে লুকিয়ে রাখতাম, কত কৌতূহল ছিল ইদকে ঘিরে। ইদ সালামি, কোলাকুলি, সেমাই, পায়েস, দল বেঁধে ঘোরাঘুরি কতই না মজার দিন ছিল।
সময়ের সাথে সত্যি কি সেই আনন্দের পথ বদল হয়েছে। এখন নিজেরা নিজেদের পছন্দমত পোষাক কিনলেও, ভারি টাকা ইদ সালামি পেলেও নেই সেই আবেগ। তবে কি চাহিদা বেড়েই ভাটা পরেছে ইদের আনন্দে!ছোট বেলায় বাবা-মা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ভাই-বোন সবাই মিলে এক সাথে এক ছাদের নিচে উৎসবের আমেজে ইদ পালিত হত। পাড়া প্রতিবেশীর মাঝে ছিল আত্মীয়তার সম্পর্ক। এখন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি, পরিবারের মানুষের মাঝে কিছু টাকা আর ইদ সামগ্রীর মাঝেই সীমাবদ্ধ ইদের আনুষ্ঠানিকতা। হৈহুল্লোর আডাবাজির স্থানে ভার্চুয়াল যোগাযোগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বুদ হয়ে হারিয়ে গেছে সামাজিকতা। সবাই বড্ড আত্মকেন্দ্রিক। শত প্রাচুর্যতার ঘিরেও আত্মার মাঝে অজানা অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি।
দুই.
এ বছর এক ভিন্ন পেক্ষাপটে করানাড়ছে ইদ। গোটা বিশ্বে কোভিড-১৯ এর আগ্রাসী রুপ থমকে দিয়েছে গোটা বিশ্বকেই। দেশে দেশে শহরে শহরে চলছে লকডাউন। যেহেতু এই মহামারী ব্যাধির কোন প্রতিষেধক ঔষুধ বা টিকা আবিষ্কৃত হয় নি, ফলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধিগুলো যেমন, বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহার করা, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে না যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এমন খাবার খাওয়া। বাড়ির বয়স্ক এবং শিশুদের প্রতি অধিক নজর দেয়া প্রয়োজন। আর যারা আমরা প্রয়োজনীয় কাজে বাহিরে যাচ্ছি তারা আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। সর্বপরি নিজের সচেতনতাই পারে এই মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করতে।
পত্রিকার পাতায় খবর দেখেছি, শপিং সেন্টার বা মার্কেটগুলোতে উপচে পরা ভির, স্বাস্থ্য বিধি মানার তেমন কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। অনেকেই অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি করছে। রাজধানী ছাড়া এবং প্রবেশে কঠোরতা থাকলেও, গ্রামের আসার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ফেরি ঘাটগুলোর দৃশ্যই আমাদের বর্তমান চিত্রকে পরিষ্কার করেছে। শুধু মাত্র সরকারের একার পক্ষে সংকট মোকাবেলা করা কঠিন। দেশের নাগরিক যদি সচেতন না হয়, তবে হয়ত আরও ভয়াবহতা দেখতেও হতে পারে আমাদের।
তিন.
ঈদ আমাদের শিক্ষা দেয় ভালোবাসার, পাশাপাশি দাঁড়াবার। ছোট-বড়, ধনী-গরীব, সাদা-কালো সব বিভেদ ভুুলে সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সম্প্রতির বার্তা সব স্থানে ছড়িয়ে দিতে।বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চলমান সংকটে আমাদের সুযোগ এসেছে অসহায় মানুষের পাশে আরও বেশি করে দাঁড়াবার, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার। আমাদের প্রতিবেশী সহ সকল দুস্থ মানুষের পাশে সাধ্যমত দাঁড়িয়ে আমরা ইদের আনন্দকে পূর্ণতা দিতে পারি। আপনার এতটুকু সহায়তা পারে অনেকের মুখে হাসি ফুটাতে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কন্ঠে কন্ঠ মিলিতে বলতে চাই, “জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ,মুমুর্ষ সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?”যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে সচেতনতার মাধ্যমে নিরাপদে কাটুক ঈদ। সকলকে ইদের শুভেচ্ছা, “ঈদ মোবারক”।
লেখকঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ্ আল-গালিব খানশিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট।email: ghalibhit@gmail.com