সব
facebook apsnews24.com
হিন্দু নারীর জীবন ও সম্পদে এতো বৈষম্য কেন? - APSNews24.Com

হিন্দু নারীর জীবন ও সম্পদে এতো বৈষম্য কেন?

হিন্দু নারীর জীবন ও সম্পদে এতো বৈষম্য কেন?

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
১৯৩৭ সালের হিন্দু আইন অনুযায়ী মেয়েরা কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নয়। তবে বিধবা হওয়ার পর সন্তান নাবালক থাকা অবস্থায় শুধু বসতি বাড়ির অধিকারী হয়। দীর্ঘ ৮৪ বছরেও হিন্দু আইনে আর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০২০ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে রায় ঘোষণা করেছে যে, হিন্দু বিধবারা স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে, তবে প্রাপ্ত সম্পত্তি কোন প্রকার বিক্রি, হস্তান্তরযোগ্য নয়। শুধু ভোগদখলকৃত বলে গণ্য হবে।

আইন পেশার সুবাদে হিন্দু নারী পূজা বিশ্বাসের সাথে পরিচয় বছর পাঁচেক আগে। হিন্দু শাস্ত্রমতে বিয়ের নিয়ম ও প্রথা মেনে পূজার বাবা মেয়ের সুখের জন্য নগদ টাকা, ব্যবহার্য আসবাবপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার যৌতুক বা স্ত্রীধন হিসেবে প্রদান করেন। কিন্তু বিধিবাম! বিয়ের কয়েক বছর পর পূজার স্বামী উধাও হয়ে যায়। এরই মধ্যে পূজার বাবাও মারা যান। ভাইয়ের সংসারে বেশীদিন থাকা হয়নি পূজা বিশ্বাসের। বাবা এলাকার সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পূজা বিশ্বাস বাবার সম্পত্তির কিছুই পায়নি। অবশেষে বিয়ের সময় পাওয়া দু’একটা গয়না বিক্রি করে জীবন সংগ্রামে নেমেছেন পূজা বিশ্বাস। তাঁর আকুতি একই বাবা-মায়ের সন্তান, অথচ নারী-পুরুষের মধ্যে ধর্ম নামক বিধি রেখা টেনে দিয়েছে।

আইনের এই অসমতাকে দূর করতে সম্পত্তিতে হিন্দু নারী ও পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ‘খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন- ২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী যদি কারো পুত্র সন্তান থাকে, তাহলে কন্যা সন্তানরা তাদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি পায় না। যদিও নারীর অর্জিত সম্পত্তির অংশ তার পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ঠিকই পেয়ে থাকেন। অবশ্য হিন্দু নারীর যদি কোনো ভাই না থাকে, তাহলে বাবার সম্পত্তির কিছুটা ভাগ শুধু তারাই পেতে পারেন, যাদের কোন পুত্র সন্তান আছে অথবা পুত্র সন্তান লাভের সম্ভাবনা আছে।

ছেলে সন্তান না থাকলে কোন হিন্দু নারী সম্পত্তির কিছুই পাবেন না। এর অন্য মানে হলো সম্পত্তির ভাগ পাওয়ার জন্য পুরুষ সন্তানের জন্মকে উৎসাহিত করা এবং কন্যা সন্তানকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা। আরও পরিস্কার করে বললে, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী কোন পুরুষ মারা গেলে তার সম্পত্তির উপর প্রথমে পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র এবং বিধবার অগ্রাধিকার। এদের অনুপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে কন্যা, দৌহিত্র, পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্রগন সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন। কিন্তু কোন মহিলা মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের দুটি নিয়ম রয়েছে। ১) কোন মহিলা যদি উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে তার মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে যার নিকট হতে পেয়েছিলেন তার নিকট আত্মীয়দের নিকট ফিরে যাবে। ২) উত্তরাধিকার ব্যতিত অন্য কোনভাবে যদি কোন সম্পত্তির মালিক হন তাহলে সেই সম্পত্তি মালিকানার ধরন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারদের মধ্য বণ্টিত হবে।

ভারত ১৯৫৬ সালে ”হিন্দু সাকসেশন অ্যাক্ট” পাশ করেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে হিন্দু নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অংশ নিশ্চিত করেছে এবং পরবর্তীতে ২০০৫ ও ২০০৭ সালে তারা আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে আরও যুগোপযোগী করেছে। অথচ আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। শুধু সম্পত্তিতে নয়, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে হিন্দু নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কারণ মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী, নারীদের বিবাহবিচ্ছেদের যেমন অধিকার আছে, হিন্দুদের বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো আইন নাই। অথচ হিন্দু আইনে একজন পুরুষ যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারেন কিন্তু স্ত্রী চাইলেও বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারেন না। মূলত এ জাতীয় সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য দরকার সার্বজনীন পারিবারিক আইন।

ফৌজদারি কোনো অপরাধ যেমন- চুরি, মারামারি কিংবা খুনের জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র ভেদে কোনোরকম বৈষম্য প্রদর্শণ করা না হয় তবে কেন উত্তরাধিকার ও বিয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বৈষম্য মেয়েদের মেনে নিতে হবে। পারিবারিক বৈষম্য বন্ধে এখনই উপযুুক্ত সময় একটি ‘ইউনিফরম ফ্যামিলি কোড’ প্রণয়নের।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক, মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj