আজিজুর রহমান দুলু
গত ২৮ শে জুন ২০২১ তারিখ জাতীয় সংসদে মাননীয় এমপি জনাব তোফায়েল আহমেদ বলেছেন যে “এটা একটা রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদের কর্তৃত্ব যেটা কাজ সেটা কিন্তু তা ম্লান হয়েছে। According to the warrant of precedence MPs are above to the secretaries but where are they now?
তিনি আরো বলেন এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে আমরা যা দেই এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দেয়।
মাননীয় এমপি জনাব তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পরে মাননীয় এমপি জনাব কাজী ফিরোজ রশীদ যে বক্তব্য জাতীয় সংসদে একইদিন দিয়েছিলেন তা হলো নিম্নরূপ:
“প্রত্যেকটা জেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সচিবদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সাথে কথা বলেন আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন দূরে। তারা বলেছে ডিসি সাহেব আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সাথে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদের অবস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সাথে যখন কথা বলে তখন এমপিদের কোন দাম থাকে না মাননীয় স্পিকার । এটা মাননীয় সদস্য তোফায়েল আহমেদ যথার্থ বলেছেন… এখন দেশ চালাচ্ছে জগৎশেঠরা, দেশ চালাচ্ছে আমলারা । আমরা রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি । এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য।”
জাতীয় সংসদে এই আলোচনার পরে ৭১ টিভিতে মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান, মাননীয় এমপি জনাব কাজী ফিরোজ রশীদ এবং সাবেক সচিব জনাব আবু আলম শহিদ খান আলোচনা করেন।
সেই আলোচনায় জনাব কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি সাবেক সেই সচিব কে “শহীদ ভাই” বলে সম্বোধন করেছেন কিন্তু দুঃখের বিষয় হল সেই সচিব কিন্তু সম্বোধন করেছেন জনাব কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি কে “ফিরোজ রশিদ সাহেব।
এখানে প্রশ্ন হল একজন সাবেক সচিব কিংবা কর্মরত সচিব একজন সাবেক কিংবা কর্মরত মাননীয় এমপি কে সাহেব বলতে পারেন কিনা? একজন মাননীয় সংসদ সদস্য এবং একজন মাননীয় এমপি একজন সচিব কে সে সাবেক হোক বা কর্মরত হোক তাকে ভাই বলতে পারেন না । সে আপন ভাই হলেও তাকে ভাই বলা বৈধ না পাবলিকলি। যেমন গত ২৯.০৩.২০১১ ইংরেজি তারিখে (ইউটিউব অনুসারে) ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ তৎকালীন মাননীয় এমপি জাতীয় সংসদে বলেছিলেন “যেই দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরুখ খানের কনসার্টে গিয়ে মাটিতে বসে সেই দেশে কিনা হতে পারে? মান-ইজ্জত কোথায় যায় আমাদের ? A মন্ত্রী is not a person. A মন্ত্রী is the flag…”
জাতীয় সংসদের মাননীয় এমপি জনাব কাজী ফিরোজ রশীদের বক্তব্যের একটি অংশ বসার আসন বা কেদারা কেন্দ্রিক এবং মাননীয় তৎকালীন এমপি আন্দালিব রহমান পার্থ এর উক্ত বক্তব্য এবং সংবিধান অনুসারে বসার আসন বা কেদারা বিন্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিষয়। মাননীয় এমপি জনাব তোফায়েল আহমেদ এবং মাননীয় এমপি জনাব কাজী ফিরোজ রশীদ যাহা বলেছেন জাতীয় সংসদে তাহা মূলত কেদারা সংকটের বিষয়। অর্থাৎ মাননীয় এমপিদের যে কেদারা বা সম্মান পূর্বে ছিল অর্থাৎ সম্মানের যে আসন পূর্বে ছিল মানুষের মানসপটে কিংবা রাষ্ট্রীয় আমলাদের মাঝে তাহার অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে পড়েছে। বিষয়টি এভাবে ভাবুন অর্থাৎ একজন এম পি কে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার যখন বলেন “মাননীয় সংসদ সদস্য” তখন তাহা রাষ্ট্রের অন্যদের জন্যও একই ভাবে বলতে হবে মাননীয় অন্যথায় ইহা জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার এর প্রদত্ত সম্মান “মাননীয় সংসদ সদস্য” এর বিপরীত ও সংসদের কর্তৃত্বের অবমাননা। একদিকে যেমন মাননীয় একজন এমপি কে সাবেক কিংবা কর্মরত কোন সচিব সাহেব বলতে পারেন না তেমনি ইহা অসাংবিধানিক ও অবৈধ বটে।
কেদারা যে সার্বভৌমত্বের বিষয় তাহা আমাদের দেশের এসএ টিভিতে প্রচারিত ও ইউটিউবে এখনও বিদ্যমান বিশ্বখ্যাত ইউসুফ জুলেখা মুভিতে আপনারা দেখতে পাবেন । উক্ত মুভিতে হযরত ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন নবী হওয়ার পরেও মিশরের তৎকালীন রাজার থেকে নিচু চেয়ারে বসে ছিলেন শুধু তাই নয় মিশরের তৎকালীন সেই রাজার স্ত্রী-পুত্র রাজার থেকে নিচু চেয়ারে বসে ছিলেন এবং রাজাকে তাঁজিম করেছিলেন।সংবিধান অনুসারে একজন মাননীয় এমপির সাথে কোন সচিব একই উচ্চতার আসনে বসতে পারেন না। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক মাননীয় রাজনীতিবিদকে দেখা যায় সচিব কে পাশে বসিয়ে কিংবা একই ধরনের কেদারায় বসে সাংবাদিকদেরকে ব্রিফ করতেছেন। এই বিষয়টি আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এ আর এমন কি? ইহা এমন কি বিষয় নয় বরং অনেক বড় বিষয় ও সার্বভৌমত্বের বিষয় । একটা উদাহরণ দেই। উদাহরণটি হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উর্সুলা ভন দের লিয়েন এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল একত্রে যখন গত ০৬.০৪.২০২১ ইংরেজি তারিখে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সাথে বসার ব্যবস্থা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে ঠিক তার পরেই বিবিসি যে হেডলাইন করেছিল তাহা হলোঃ
“Sofagate: EU chief Ursula von der Leyen blames sexism for Turkey chair snub”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে বৈঠকে বসার ব্যবস্থা নিয়ে সেই সময়ে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যে খবরটি প্রকাশ করেছিল তার শিরোনাম হলোঃ
“Chair Incident Was Sign of Enduring Sexism, E.U. Leader Says”
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলা দরকার সেটি হল বিশ্বজুড়ে সমালোচনার এই বিষয়টিকে তুরস্কের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে প্রটোকল টিম ইউরোপীয় কমিশন ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টদের তুরস্ক সফর এর পূর্বেই তাদের আসন ব্যবস্থার সব কিছু খুঁটিনাটি দেখে শুনে ঠিক করে গেছেন । তার পরে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলা সঠিক নহে। একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সাধারণত রাষ্ট্রীয় এই আচারে কেদারার উচ্চতাও কিন্তু প্রটোকল টিম পূর্বেই ঠিক করেন। অতএব, কেদারা শুধু কেদারা নহে। ইহা সার্বভৌমত্বের বিষয় ও সম্মানের বিষয়। মাননীয় এম পি জনাব কাজী ফিরজ রশিদ যে কেদারা বিন্যাসের কথা বলেছেন সেখানে আসলে ডিসি ছিলেন সঞ্চালক এবং সঞ্চালকের সেই কেদারা এমন ভাবে ছিল যে তিনিই সভাপতি আর বাকিরা অর্থাৎ মাননীয় এম পি ও মন্ত্রীগণও ছিলেন সঞ্চালক এর কেদারা হতে অনেক দূরে। ইহার ফলে মাননীয় এম পিদের সম্মানে তাহা বেধেছিল। অনেক মাননীয় এম পি যেমন জনাব শামিম হায়দার পাটওয়ারী এই অসম্মানের কেদারা বিন্যাসের কথা ভেবে কিন্তু ওই ধরনের অনুষ্ঠানে যায় নাই। তিনি R TV এর একটি আলোচনায় সেই কথা বলেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁর এই কৌশল কে সাধুবাদ জানাই। মুশকিলটা হলো মাননীয় এম পি বাদে জেলার অন্য রাজনৈতিক নেতারা এবং জনগণ যখন এই ধরনের অবস্থা দেখেন তখন তারা ভাবেন ডিসিরাই তো অধিক দামি কেননা তিনি সরাসরি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এর সাথে কথা বলে সুযোগ দিচ্ছেন মাননীয় এম পি কিংবা জেলার অন্য রাজনৈতিক নেতাদের।
যাই হোক, এবার আসি কেদারা বিতর্কে ও সংকটে আমাদের বিচার বিভাগের করণীয় কিছু আছে কিনা ? উত্তর হ্যাঁ অবশ্যই আছে। কেদারা বিতর্কে যদি ইতালির প্রধানমন্ত্রী তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে ডিক্টেটর বা স্বৈরশাসক বলতে পারেন কিংবা বিশ্বের প্রথমসারির বিভিন্ন মিডিয়া সমালোচনা করতে পারেন তাহলে কেদারা বিতর্ক কিংবা সংকট ইহা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাহাতে বিচার বিভাগের নিষ্ক্রিয়তা জনগণ ও রাজনীতিবিদদের কর্তৃত্বের অশনি সংকেত ভাবিয়ে তোলে।
আবার অনেকে বলতে পারেন। কেদারা বিতর্কে বিচার বিভাগের জুরিসডিকশন আছে কি না ? এর উত্তরে বলতে হয় হ্যাঁ অবশ্যই আছে। ইহার নজীরও আছে। বিমানের আসন বা কেদারা নিয়ে যখন মাননীয় বিচারপতি জনাব শামসুদ্দিন মানিক চৌধুরী আদালত অবমাননা রুল ইসু করেছিলেন এবং তাঁর ফলে উপযুক্ত রায় দিয়ে তাঁর সঠিক নজীর স্থাপন করেছিলেন। আমাদের বিচার বিভাগের এখতিয়ার শুধু কেদারাতে নহে বরং আকাশ, মাটির নীচ কিংবা এই দেশের বাহিরে পৃথিবীর যে কোন দেশে কিংবা স্থানে আছে আমাদের সিআরপিসি, ১৮৯৮ অনুসারে। আমাদের মূল সমস্যা হলো আমাদের অজ্ঞতা।
বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা এখানে অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে আমাদের বিচার বিভাগের অর্থাৎ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য আপিল বিভাগ হতে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে যে রায় প্রদান করা হয়েছে সেই রায় অনুসারে কিংবা শুধু মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুসারে নিশ্চিত ভাবে মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্যগণ সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহারকারী এবং তাদের মর্যাদা এত উঁচুতে যে, কোন সচিবের সাথে তুলনা করা শুধু বোকামি নহে বরং তাহা অসাংবিধানিক।
সেই যুগান্তকারী রায়টির বাস্তবায়ন এখনো হচ্ছে না এবং কেন হচ্ছেনা এবং সেই রায় বাস্তবায়নে বিচার বিভাগের নিষ্ক্রিয়তা অবশ্যই এখানে বিবেচনা করতে হবে এই জন্য যে বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্যগণের সাথে মাননীয় বিচারপতিগণ এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের যে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে তাহার ব্যবহারিক দিক জনগণের মাঝে প্রতিফলিত হইত এবং জনগণ উপকৃত হইত অর্থাৎ এদেশের জনগণ বুঝতে পারত যে সচিবগণ হলো নির্বাহী বিভাগের স্টাফ মাত্র। কেনোনা ১৯২৪ সালে R v Sussex Justices, ex parte McCarthy ([1924] 1 KB 256, [1923] All ER Rep 233) মামলার বিখ্যাত সত্য হলো “Not only must Justice be done; it must also be seen to be done.”
মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় এম পি ও মাননীয় বিচার পতি বা বিচারকগণের আসন বা কেদারা বিন্যাসের ভিত্তি হলো মাজদার হোসেন মামলার রায়ের ৪৪ নম্বর প্যারাগ্রাফ এর অংশ বিশেষ যা নিম্নে উল্লেখ করছিঃ
“Those who exercise the State power are the Ministers, the Legislators and the Judges and not the members of their staff who implement or assist in implementing their decisions. The council of ministers on the political executive is different from secretarial staff or the administrative executive which carries out the decisions of the political executive. Similarly the Legislators are different from the legislative staff. So also the Judges from the judicial staff…”
এখানে সচিবরা হলো political executive অর্থাৎ মন্ত্রীগণের secretarial staff or the administrative executive যেমন বিচারক এর স্টাফ হলো বেঞ্চ অফিসার বা পেশকার ও অন্যরা। একই ভাবে জাতীয় সংসদেরও স্টাফ হলো সচিব ও অন্যরা ।
স্টাফদের কে স্টাফ এর মত কাজে লাগানোর জন্য দক্ষতা দরকার তাঁর একটা উদাহরণ দেই। মরহুম সচিব ড. সাদাত হুসাইন একবার এক টক শো তে বলেছিলেন যে, সচিবরা কিভাবে মাননীয় মন্ত্রীগণ এর সম্মতি আদায় করে কৌশলে। অর্থাৎ তিনি বলেছিলেন অনেক সময় লিফটে ওঠার সময় মাননীয় মন্ত্রীর সম্মতি চেয়ে তাহা হ্যাঁ করা হয়।
এবার আসি এই বিষয়ে আমার বিচারক হিসাবে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতার কথা অর্থাৎ আমাদের দেশের অধস্তন আদালতের অনেক বিচারকদের কে তাদের স্টাফ অর্থাৎ পেশকার যে ভাবে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করে বা করে থাকে তাহা উল্লেখ করছিঃ
আমাদের দেশের অধস্তন আদালতের অনেক অভিজ্ঞ ও চতুর (সকলে নহে) পেশকার বিকাল ৪.০০ টার পরে ঠিক গাড়িতে (মাইক্রবাস) ওঠার সময় এক স্তুপ ফাইল তারা হুরা করে নিয়ে আসে স্বাক্ষর করার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই গাড়িতে ওঠার পূর্ব মুহূর্তে তারা হুরা করে অনেক বিচারক (সকলে নহে) স্বাক্ষর করেন। এইটা নিয়ে আমি গাইবান্ধাতে সিনিওর জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট হিসাবে কাজ করার সময় ভাবতে থাকি। হঠাৎ একদিন একজন বিজ্ঞ আইনজীবী আমার প্রিজাইডিং আদালতে তথ্য দিয়ে বলেন একটা নথি অনেক দিন ধরে এজলাশে ওঠানো হয় না। আমি জানতে চাইলাম। আমার আমলের কি না? তিনি বললেন না । আমি ওই মামলার নম্বর টা চেয়ে নিলাম। এজলাশ এর কেদারা থেকে নেমে জি আর ও এবং পেশকার কে আদেশ দিলাম। ওই মামলার রেকর্ড বাহির করে নিয়ে আসতে বললাম। অনেক খোঁজা খুজির পরে যখন হাতে পেলাম তখন দেখলাম। সত্যি নথীটি নতুনের মত আছে। ইহা দেখে সন্দেহ হলে সংক্ষেপে বলছি আরো জিজ্ঞসা শেষে জানতে পারলাম। আমার আগের বিচারক এর এজলাশে প্রকাশ্যে না উঠিয়ে আগের পেশকার ওই ৪.৩০ টার পরে অনেক ফাইলের ভিতর ঢুকিয়ে স্বাক্ষর করাইয়া নিয়ে এক পক্ষকে তারিখ দিত। আর এক পক্ষ আদালতে শুধু আসা যাওয়া করতো।
এই ঘটনা জানার পরে আমি পরের দিন থেকে পেশকার কে আদেশ দিলাম প্রত্যেক দিনের মালার তালিকা একটি সাদা কাগজে কালো রং এর কালি দিয়ে লিখে স্বাক্ষর ও আপনার সিল দিয়ে সকালে এজলাশে ওঠার আগে আমাকে দিবেন। উনি তাই করতেন। আমি শুনানি গ্রহন করে প্রকাশ্যে আদেশ ও তারিখ দেয়ার পর নীল রং এর কালি দিয়ে পাশে তারিখ ও নোট দিতাম। তারপরে এজলাশ থেকে নামার পরে নথি স্বাক্ষর করার সময় লাল কালি দিয়ে টিক মার্ক দিয়ে মিলিয়ে মিলিয়ে স্বাক্ষর করতাম। আর পেশকার এর লিখিত ও স্বাক্ষরিত মামলার তালিকা তার সামনেই ৩০ দিন পর পর বেঁধে বাসায় নিয়ে গিয়ে সংরক্ষন করতাম আর তাকে বলতাম। খতিয়ান আমার হাতে । কোন আকাম করলে ধরা পরবেন এবং …” আর একটা বিষয় ৪.৩০ টার পরে সাক্ষরের জন্য নথি আনা নিষেধ করেছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় রেকর্ড এজলাশেই স্বাক্ষর করে একই ভাবে নোট দিতাম।
যাইহোক, উপরোক্ত তিন শ্রেণীর ব্যক্তিদের কেদারা বিন্যাস অবশ্যই অবশ্যই সর্বোচ্চ সম্মানের ও উঁচু স্থানে রাখতে হবে এবং একইসাথে এই সকল পদের পদধারী ব্যক্তিগণের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য এবং নির্বাহী বিভাগের স্টাফ সচিবদেরকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার নিমিত্তে রাজনীতিবিদদের জ্ঞানের ভান্ডার বাড়ানোর নিমিত্তে দেশে একাধিক জাতীয় পলিটিক্যাল ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে হবে যাতে তাদের মাঝে তাদের অবস্থান ও সম্মান সম্পর্কে ভাল ধারনা গড়ে ওঠে যেমন ধারনা ও সম্মান বোধের জায়গা থেকে ১৭৯৫ সালের ৫ ই সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্রপথে অটোমান-হুমকি মোকাবেলায় তাদের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়। চুক্তি অনুসারে, আলজেরিয়ার কারাগারে আমেরিকান বন্দীদের ফিরিয়ে দেওয়া এবং আটলান্টিক ও ভূমধ্যসাগরে কোন মার্কিন জাহাজে আক্রমণ না করার বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এককালীন ৬৪২,০০০ স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করার পাশাপাশি বাৎসরিক ১২,০০০ উসমানীয় স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করতে সম্মত হয়।
চুক্তিটিতে ২২টি আর্টিকেল ছিল যা রচিত হয়েছিল টার্কিশ ভাষায়। চুক্তিটিতে রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন এবং আলজেরিয়ার গভর্নর হাসান পাশা নিজ নিজ পক্ষে স্বাক্ষর করেছিলেন। চুক্তিটিতে জর্জ ওয়াশিংটনের কাউন্টার-পার্ট হিসেবে অটোমান খলিফা স্বাক্ষর করতে অসম্মতি জানান। তখন আলজেরিয়ার গভর্নর অটোমানদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
লেখক সাবেক বিচারক ও আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
মতামত নিতান্তই লেখকের ব্যক্তিগত। এই মতামতের জন্য অন্য কেহ দায়ী নয়।