সব
facebook apsnews24.com
পুলিশ ব্যবস্থা, মিডিয়া ট্রায়াল ও বিচারিক দায়বদ্ধতা। - APSNews24.Com

পুলিশ ব্যবস্থা, মিডিয়া ট্রায়াল ও বিচারিক দায়বদ্ধতা।

পুলিশ ব্যবস্থা, মিডিয়া ট্রায়াল ও বিচারিক দায়বদ্ধতা।

পরমনি কিংবা মুফতি সাহেব। বা ভাইরাল না হওয়া হাজারো ভুক্তভুগি মানুষ; তাদের সবারই একটাই কমন কথা “পুলিশ মামলা নিচ্ছেনা” বা জিডি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা হচ্ছেনা। ফলস্বরূপ অপরাধের স্বীকার হচ্ছেন। হয়তো একটি জিডি কিংবা মামলা হলে বা পুলিশ আইনত ব্যবস্থা নিলে ঘটনা অন্যরকম হতো। অপরদিকে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু। পুলিশ কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক সমাবেশে গুলি,(অতিসম্প্রতি কুষ্টিয়াতে এস আই এর গুলিতে ৩ জন নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে), এসব নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। আইনের অপশাসন, অপব্যবহারের এ পরিস্থিতি ঔপনিবেশিক আমলের শাসনব্যবস্থা থেকে কম যায় না। যুদ্ধব্যবস্থা জাতিগত সহিংসতা আফ্রিকার সংঘাতপূর্ন উপজাতিক এলাকাগুলো ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও সিভিল আইন শাসন-ব্যবস্থার এরকম হযবরল অবস্থা আছে বলে আমার কাছে মনে হয়না। নেট দুনিয়ার একাংশ মিডিয়া ট্রায়াল ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার চাওয়াকে কটাক্ষ করছেন। আমিও এ বিষয়টির সাথে একমত নই। কিন্তু চিন্তা করুন কেনো হচ্ছে এরকম, ভুক্তভোগীর করার কি আছে আসলে? ভুক্তভূগী দেখছেন পুলিশ মামলা নিচ্ছেনা, সুতরাং মিডিয়াকে দিয়ে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করলে তিনি সরাসরি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রতিকার চাইতে পারেন। এবং হচ্ছেও তাই। ভাইরাল মামলায় মিডিয়ার প্রচারনা (স্বার্থ জড়িত) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তখন নড়েচড়ে বসছে। পরিমনির ক্ষেত্রে আমরা তেমনটাই দেখলাম। এই পরিস্থিতি বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থাহীনতার ও বিচারবিভাগের দৈন্যদশার চিত্র ফুটে তোলে। ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ আইন কিংবা ফৌজদারী কার্যবিধি বহাল থাকলে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি চলায় কি স্বাভাবিক নয়? ফৌজদারী কার্যবিধি বলছেঃ

প্রত্যেক সাধারণ ফৌজদারী মামলা ৩ ভাবে উৎপত্তি হয়ে থাকে।
১.থানায় FIR এর মাধ্যমে আমলযোগ্য অপরাধ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যায়)(CRPC schedule2) সমূহের মামলা যাকে জি আর কেস বলা হয়। ধারা ১৫৪। জি আর কেসে বাদী হয় রাষ্ট্র।

২. GDE এর মাধ্যমে আমলঅযোগ্য অপরাধ( বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যায়না) সমূহের মামলা যা পুলিশ অভিযোগসহ সংবাদ দাতাকে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করে। একে বলা হয় নন জিআর কেস।ধারা ১৫৫ এক্ষেত্রে বাদী হয় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ

৩. সিআর কেস যেসব মামলা (আমলযোগ্য বা আমলঅযোগ্য উভয়ই) নালিশের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দায়ের করা হয়। (ধারা ২০০-২০৩) এক্ষেত্রে বাদী হয় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ।

সুতরাং থানা মামলা না নিলে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বিকল্প প্রতিকার রয়েছে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা জরুরী। থানা মামলা না নিলে আপনার আইনী প্রতিকারের পথ বন্ধ হয়ে যাবেনা। কিন্তু দূর্ভাগ্য যে ঔপনিবেশিক ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেসি প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। নির্বাহী বিভাগ ও প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেটকে আলাদা করা যায় না। প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি স্বাধীন বিচারিক মানসিকতা ও আইনী চর্চার সময় ও পরিস্থিতি স্বভাবতই সম্ভব ছিলনা। ফলে ঔপনিবেশিক এই আইনেও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের যথেষ্ট ক্ষমতা থাকলেও তা প্রয়োগের বা প্রাশাসনের বাহির কিছু করার নজির তৈরী হয়নি।

বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আলাদা হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের মানসিকতার পরিবর্তন কতোটুকু হয়েছে? সাধারণ পর্যায়ে আইনী সুবিধা ও পুলিশ কর্তৃক প্রতিকার না পেলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন। সেই প্র্যাক্টিস তৈরী ও মানুষকে Access to Justice দিতে হবে। মামলা প্রক্রিয়াকরণে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। সেখানে আইন অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কতোটা ভূমিকা রাখছেন? কারন আইনত বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বর্তমান ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিচার বিভাগের অংশ হওয়ায় এর দায় বিচার বিভাগের।
তা নাহলে মিডিয়া ট্রায়াল এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতর ছাড়া কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবেনা। যা বিচার বিভাগের আস্থার উপর অশনী সংকেত বলে আমি মনে করি।
লেখকঃ তাইমুৃম আলীআহাদ।
শিক্ষার্থী ঃ আইন বিভাগ, রাবি।

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj