সরোয়ার আলম, আঙ্কারা, তুরস্ক থেকে
আজ ফিলিস্তিনের কথা বললে যে কয়েকটি বিষয় সবার আগে সামনে আসে তা হলো, লাল, কালো, সাদা এবং সবুজ রঙের একটি পতাকা, লম্বা ত্রিকোণাকৃতির একটি ম্যাপ, বিখ্যাত ফিলিস্তিনি কুফিয়া মাথায় জড়ানো ইয়াসির আরাফাত, ইয়াসির আরাফাত প্রতিষ্ঠিত প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা সংক্ষেপে পিএলও, বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং তার দল আল-ফাতাহ এবং ফিলিস্তিন প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। আর মসজিদেআকসা তো আছেই। তবে সবার আগে যে বিষয়টি সামনে আসে তা হোলো অত্যাচারিত একটি মুসলিম জনপদ।
কিন্তু আজ যারা ফিলিস্তিনের জন্য রাস্তায় নামছেন, মিছিল করছেন, বিক্ষোভ করছেন, অনলাইনে ফিলিস্তিনের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করছেন তাদের হয়তো অনেকেই জানেন না যে এই পতাকা এবং মানচিত্র উসমানীয় সম্রাজ্যকে ধ্বংস করতে ব্রিটিশদের তৈরি করা আরব বিদ্রোহের পতাকা। আর যে মুসলিম জনপদের জন্য সারা বিশ্বের মুসলমানরা দিনরাত দোয়া করছেন, সে মুসলিম ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী আল ফাতাহ, পিএলও এবং এদের লিডাররা কিন্তু আসলে সেক্যুলার মতবাদে বিশ্বাসী।
অন্যদিকে যেই উসমানীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতীক ছিল এই পতাকা আজ সেই পতাকা নিয়েই, সেই পতাকার জন্যই সেই উসমানীয়দের উত্তরসূরি তুরস্কের কাছ থেকে ফিলিস্তিনের জন্য আরও অনেক বেশি কিছু করার দাবি করছি আমরা।
আসলে, ফিলিস্তিন ইস্যুটি আবারও আমাদের মনে করিয়ে দিল ইতিহাসের নির্মম সত্য, এবং তিক্ত বাস্তাতাকে।
ফিলিস্তিনি একজন প্রবীণ প্রফেসর ড. আব্দেল ফেত্তাহ আল আওয়াইসি মসজিদে আকসা এবং ফিলিস্তিনের ওপর গবেষণা করছেন কয়েক দশক ধরে। সারা বিশ্বে ফিলিস্তিনের পক্ষে জনমত গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন।
তিনি বলেন, “আজ সারা বিশ্বে আল-আকসা এবং ফিলিস্তিনের প্রতি যে সমর্থন তার বেশির ভাগই হোচ্ছে বাস্তবতাবিবর্জিত এবং শুধুমাত্র আবেগতাড়িত।”
তার মতে, “আমাদের যুব সমাজকে ফিলিস্তিন এবং মসজিদে আকসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া হয় না। এমনকি এ নিয়ে আমাদের মুসলিম বিশ্বে কোনো ইন্সটিটিউট নেই, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে নেই কোনো কোর্স।”
“আসলে আমরা অনেকেই ফিলিস্তিন এবং মসজিদে আকসার সঠিক ইতিহাসই জানি না। আমরা যে পতাকার জন্য যুদ্ধ করছি, যে সীমানার জন্য যুদ্ধ করছি, সেই পতাকা, সেই ম্যাপ আমাদের অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের আঁকা কোনো পতাকা বা মানচিত্র না।”
তিনি একজন ফিলিস্তিনি হয়েও কঠিন বাস্তবতাকে বলে দিলেন অকপটে। আসলেই, ফিলিস্তিনের বর্তমান পতাকাটির নকশা প্রণয়ন করেন ব্রিটিশ কূটনৈতিক স্যার মার্ক সাইকস। তার উদ্দেশ্য ছিল উসমানীয়দের বিরুদ্ধে আরব জাতীয়তাবাদকে উস্কে দেওয়া। এটি মূলত উসমানীয় সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহের প্রতীক।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে উসমানীয়রা যখন চতুর্মুখী আক্রমণে দিশেহারা তখন ব্রিটেন এবং ফ্রান্স উসকিয়ে দেয় এই আরব বিদ্রোহো। উদ্দেশ্য ছিলো, উসমানীয় সম্রাজ্যকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা। তারা তখন উসমানীয় খিলাফতের অধীনে মক্কা এবং মদিনার তত্ত্বাবধানে থাকা হেজাজের শরিফ হুসেইন বিন আলী আল হাশিমিকে বেছে নেয় এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য।
বর্তমান সময়ের সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, জর্ডান, সৌদি আরবসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে তখন শুরু হয় উসমানীয়দের বিরুদ্ধে আরব জাতীয়তাবাদীদের বিদ্রোহো ।
আর তখনই ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বপন করে আরব-তুর্কি শত্রুতার বীজ। একশো বছর পরে আজও সেই শত্রুতা ছড়াতে তৎপর তাঁরা।
ব্রিটেন এবং ফ্রান্স তখন মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল এক হাশেমীয় সম্রাজ্য গড়ার স্বপ্ন দেখায় শরিফ হুসেইন বিন আলী আল হাশিমিকে। কিন্তু তাদের আসল প্লান ছিলো ভিন্ন। ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং পরবর্তীতে ইতালি মিলে গোপন নকশা করে মধ্য প্রাচ্যকে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করার। কিন্তু সে জন্য আগে দরকার ছিলো উসমানীয় সম্রাজ্যের পতন ঘটানো । তাই উপরে উপরে বা প্রকাশ্যে আরব বিদ্রোহীদেরকে জাতীয়তাবাদের স্বপ্ন দেখিয়ে মূলত তাদেরকে লেলিয়ে দেয় উসমানীয়দের বিরুদ্ধে।
ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, বিশেষ করে মেশিনগান দিয়ে সুসজ্জিত করে এই আরব বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে।
মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল এক হাশেমীয় সম্রাজ্য গড়ার স্বপ্নে বিভোর হুসেইন বিন আলী তখন তার নেতৃত্বে থাকা বাহিনীকে নিয়ে ব্রিটিশদের পরামর্শে এবং তাদের সামরিক কৌশল আবলম্বন করে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করে অটোম্যান আর্মির বিরুদ্ধে।
এই বিদ্রোহ অটোম্যানদের বিরুদ্ধে আরবদের যুদ্ধ হিসেবে দেখানো হলেও আসলে এটি ছিলো আরবদের বিরুদ্ধে আরবদের যুদ্ধ। কারণ, শরিফ হুসেইনের নেতৃত্বে থাকা আরবদের সাথে অটোম্যান আর্মির অধীনে থাকা আরবরাই যুদ্ধ করেছিল তখন।
যুদ্ধে অটোম্যানরা (উসমানীয়রা) হেরে যায়। ভেঙে টুকরো টুকরো হয় বিশাল সম্রাজ্য। কিন্তু শরিফ হুসেইনের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। কারণ, বৃহৎ এক আরব সম্রাজ্যের পরিবর্তে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স তাকে দেয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি রাজ্যের শাসনভার।
শরিফ হুসেইন বিন আলী নিজেকে ঘোষণা করেন হেজাজের বাদশাহ হিসেবে। আর সেই হেজারেরই অংশ হলো পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফ।
আর শরিফ হুসেইন বিন আলী নিজে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হওয়ারও দাবি করেন। অপর দিকে বিন আলীর ছেলেরা ক্ষমতা পান সিরিয়া, ইরাক এবং ট্রান্সজর্ডান নামে নতুন কোরে পেন্সিলে আঁকা কিছু ভূখণ্ডের। কিন্তু এই ক্ষমতাও টিকেনি বেশিদিন।
সৌদি-তুর্কির দ্বন্দ্ব যেভাবে তৈরি হয়
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! যে আরবরা অর্থাৎ যেই হাশেমীয়রা ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের মদদে ওসমানীয়দের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদেরকেই ক্ষমতায় বসার অল্পকিছুদিনের মধ্যে সিরিয়া থেকে তাড়িয়ে দেয় ফ্রান্স। শুধু তা–ই নয়, কয়েক বছরের মাথায় ব্রিটেনের কারসাজিতে হেজাজের ওপর থেকে কর্তৃত্ব হারান শরিফ হুসেইন বিন আলী আল হাশিমি। এই অঞ্চলের ক্ষমতা চলে যায় নজদের গোত্রপতি আবদুল আজিজ বিন সউদের হাতে, যাকে সহায়তা দিয়েছিল ব্রিটেন। তিনি পরে আধুনিক সৌদি আরব গড়ে তোলেন। মাত্র দুই বছরের মাথায়ই সমাপ্তি ঘটে বিশাল হাশেমীয় সম্রাজ গড়ার স্বপ্নের। একই সাথে ওই অঞ্চলে তাদের বংশানুক্রমিক কর্তৃত্বও হারিয়ে ফেলেন হাশেমিয়রা।
উসমানীয়দের বিরুদ্ধে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সাথে আতাঁতকারী শরিফ হুসেইন হয়তো বুঝতে পারেন ব্রিটিশ এবং ফ্রেঞ্চরা তাকে কী বিশাল ধোঁকাটাই না দিয়েছে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।
অবশ্য ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ইরাক শাসন করেন হুসেইন বিন আলী আল হাশিমির বংশধররা । আর ওসমানীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্বদানকারী এই হাশেমীয়রা তখন ট্রান্সজর্ডান নামের আরেকটি ছোট্ট ভূখণ্ড শাসন করতে সামর্থ্য হন। যার অধীনে ছিল বর্তমান ফিলিস্তিন এবং মসজিদে আকসা। কিন্তু ব্রিটিশরা পরবর্তীতে এই অঞ্চলকেও তাদের অধীন থেকে আলাদা করে দেয়। নতুন করে অঙ্কন করে ফিলিস্তিনের মানচিত্র। পরবর্তীতে এই ব্রিটিশরাই ইউরোপের ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের অনুমতি দেয়।
শেষ হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ, পার হয়ে গেলো একশো বছর। গঠিত হলোনা বৃহৎ সেই আরব সম্রাজ্য। মুখ থুবড়ে পড়লো সেই আরব জাতীয়তাবাদ, আরব ঐক্য। কিন্তু রয়ে গেলো শুধু ওসমানীয় সম্রাজ্যের পতনকে তরান্বিত করার একটি করুণ ইতিহাস!
ব্রিটিশরা হাশেমীয়দেরকে সান্ত্বনা স্বরূপ মসজিদে আকসার দায়িত্বভার দেয়। আর তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় হাশেমীয়দের। তারই পরম্পরায় হাশেমিয়দের উত্তরসূরি জর্ডান এখনও আল আকসা মসজিদের তত্ত্বাবোধানের দায়িত্ব বহন করছে। জর্ডানের একটি ওয়াকফ এখনও মসজিদে আকসার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছে। জর্ডান সেই ১৯২০ সাল থেক শুরু করে আজ পর্যন্ত মসজিদুল আকসায় চার বার সংস্কারের কাজ করে এবং তাতে খরচ করে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।
যাইহোক, তখন উসমানীয়দের বিরুদ্ধে এই আরব জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহে আরও উদ্দীপনা যোগাতে ব্রিটিশ কূটনৈতিক মার্ক সাইকস বিদ্রোহী আরবদের হাতে তুলে দেন একটি পতাকা। কালো, সাদা, সবুজ এবং লাল রঙের এই পতাকায় নির্দেশ করা হয় ইসলামের তিন খিলাফতের সময়কে।
আনুভূমিক রংগুলোরো মধ্যে কালো রং আব্বাসীয় খেলাফত, সাদা রং উমাইয়া খিলাফত এবং সবুজ রং ফাতেমীয় খিলাফতকে নির্দেশ করে। আর ত্রিভুজ আকৃতির লাল অংশটি হাশেমিয় রাজবংশকে নির্দেশ করে।
সেখানে স্থান হয়নি উসমানীয় খিলাফতের কোনো নিদর্শনের। যে উসমানীয়রা ছয়শ বছর ধরে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়েছেন, শাসন করেছেন ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার বিশাল এক মুসলিম অঞ্চল, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতীক ছিল এই পতাকা। ব্রিটিশদের সাথে আঁতাতের প্রতীক এই পতাকা। অনেকে একে উসমানীয় খেলাফতের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবেও দেখেন।
আরব বিশ্বের অনেক দেশ এই পতাকাটিকেই এখন তাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে আজ ব্রিটিশদের আঁকা সেই পতাকা হাতেই, সেই মানচিত্রের জন্যই আন্দোলন চলছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। সেই পতাকা উড়িয়েই চলছে ফিলিস্তিন মুক্তির আন্দোলন। আল আকসার মুক্তির আন্দোলন। মুসলমানদের মুক্তির আন্দোলন। আজ আমরা উসমানীয় বিরোধী সেই পতাকা হাতে নিয়েই ফিলিস্তিনের জন্য, মসজিদে আকসার জন্য উসমানীয়দের উত্তরসূরি তুরস্কের সহযোগিতা চাই জোর গলায়! এমনকি তুরস্ককে কম সহযোগিতা করার জন্য মুনাফিক বলেও গালি দেই অনেকেই! মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন!
অন্যদিকে সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ই ফ্রান্স এবং ব্রিটেন আরবদের এবং তুর্কিদের মধ্যে শত্রুতার বীজ এমনভাবে বপন করে দিয়েছিল যা এখনও ডালপালা ছড়িয়ে দিব্যি বিরাজ করছে কিছু আরবদের এবং তুর্কিদের মগজে।
একদিকে আরবদেরকে শিখিয়ে দেওয়া হয় যে উসমানীয়রা তথা তুর্কিরা তোমাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। অন্যদিকে তুর্কিদেরকে মগজ ধোলাই করা হয় এই বলে যে, আরবরা তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তোমাদেরকে পিছন থেকে ছুড়ি মেরেছে। বহু আরব এবং তুর্কিরা তাদের জাতীয়তাবাদের আবেগে লুফে নেয় এই ভ্রান্ত ধারণা। বিশ্বাস করে এগুলো এবং মনে ধারণ করে শত্রুতার বীজ।
অথচ বাস্তবতা হলো, উসমানীয় সেনাবাহিনীতে তখন হাজার হাজার আরব সৈন্য ছিল যারা ব্রিটিশ এবং ফ্রান্সের মদদে বিদ্রোহী ওই আরবদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করেছিল।
তবে আরব বিশ্বের এবং তুরস্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখন বুঝতে পারছেন যে তখন ওই আরব বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ এবং ফ্রান্সের মিথ্যা আশ্বাসে প্রতারিত আরবদের একটি ক্ষুদ্র অংশের। আসলে আরবরা এবং তুর্কিরা একে অপরের শত্রু না। বরং তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নিয়েছিল ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। আরবদের এবং তুর্কিদের আসল শত্রু ছিল তারা। এমনকি এখনও মুসলমানদের মধ্যকার কোন্দলের সুযোগ নিচ্ছে এই পশ্চিমা সুযোগ সন্ধানীরা।
তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় উসমানীয়দের যা অবস্থা ছিল তাতে ওই বিশাল ভূখণ্ড ধরে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। আরব অঞ্চলগুলো স্বাধীন হতোই। যেমনটি হয়েছিলো বলকান অঞ্চলে। কিন্তু ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের এই ডবল প্রতারণা না হলে হয়তো আজকে মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা অন্যরকম হতো। ফিলিস্তন এবং আল আকসা হয়তো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতোনা সারা বিশ্বের দরবারে! মুসলিম বিশ্ব হয়তো এতো অসহায় হয়ে থাকতো না!
আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ না করলেই নয়। যখন এই বিদ্রোহী আরবরা উসমানীয় খেলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, ব্রিটেনের মদদে খেলাফতকে ধ্বংস করে দিয়ে নতুন খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছিল ঠিক তখনই ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা কিন্তু এই উসমানীয় খেলাফত রক্ষায়, ইতিহাসের সর্ববৃহৎ খেলাফত আন্দোলন শুরু করে সেই ব্রিটিশদেরই বিরুদ্ধে।
ইতিহাস আসলেই অনেক জটিল এবং নির্মম। বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে বুঝতে হলে ইতিহাসকে সঠিকভাবে জানতেই হবে।
ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ কী?
এবার আসি ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ বিরতির ভবিষ্যৎ কী? সে নিয়ে সংক্ষেপে একটু বলি।
যে বিশাল ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে ইঞ্চি ইঞ্চি করে দখল করে নিয়েছে ইসরাইল। যেই ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের নিজেদের ভূমিতে উদ্বাস্তু হিসেবে, শরণার্থী শিবিরে বসবাস করতে বাধ্য করেছে ইসরাইল। যে ফিলিস্তিনে উড়ে এসে জুড়ে বসে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল, সে ফিলিস্তিনের মুক্তি এই ধরণের ঠুনকো যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে সম্ভব নয়।
এই যুদ্ধবিরতি আরও বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি মাত্র। আজ যদি মিসর, সিরিয়া, জর্ডানসহ আরব বিশ্ব এবং মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনিদের রক্ষায়, মসজিদে আকসা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্ত প্রাচীরের মত না দাঁড়ায় তাহলে আগামীকাল, আগামী পরশু, মিশর, সিরিয়া, জর্ডান এমনকি সৌদি আরবের সীমানা ধরেও টান দিবে এই জায়নবাদি আর সাম্রাজ্যবাদীরা তাতে সন্দেহ নেই।