সব
facebook apsnews24.com
বিচারক ও আইনজীবীবৃন্দের কালো কোট, কালো গাউন ও পরচুলা পরিধানের পটভূমি - APSNews24.Com

বিচারক ও আইনজীবীবৃন্দের কালো কোট, কালো গাউন ও পরচুলা পরিধানের পটভূমি

বিচারক ও আইনজীবীবৃন্দের কালো কোট, কালো গাউন ও পরচুলা পরিধানের পটভূমি

অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান

কালো কোট, কালো গাউন প্রসঙ্গঃ

সততা ও নিষ্ঠার সাথে বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনের মাধ্যমে সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা আইনজীবী ও বিচারকবৃন্দের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। আদালতে বিচারকার্য পরিচালনায় অংশ গ্রহনের ক্ষেত্রে এজলাসে আইনজীবী এবং বিচারকবৃন্দকে কালো কোট,কালো গাউন এবং সাদা ব্যান্ড বা ‘বো’ পরিধান করতে হয়। এরুপ পোশাক পরিধানের পিছনে বিভিন্ন ধরনের তত্ব প্রচলিত আছে প্রথমতঃ আইনের ভাষা কালো অক্ষরে লেখা, কালো রং প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও ধৈর্য্যের প্রতীক। আইনজীবীগণ তাদের মক্কেলদের পক্ষে আদালতে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ন হন। কালো রং তাদের মধ্যে আস্থা ও প্রশান্তির ছাপ এনে দেয়। বিচারক ও আইনজীবীগণ কালো কোট ও গাউনের সাথে সাদা রং এর জামা পরেন, যা তাদেরকে শান্তি,আন্তরিকতা ও ন্যায়পরায়নতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাছাড়াও আইন অন্ধ বা আইনের চোখ বাঁধা বলা হয় অর্থাৎ অন্ধকারে আলোর খোঁজ করতে হয়।

বিশেষ অর্থে আইন অন্ধ (Blind) শব্দটির ব্যাখ্যা দাঁড়াই যে, অন্ধ লোকের কাছে সবকিছুই, সমান সাদা-কালোর কোন ভেদাভেদ নাই। তাছাড়া স্বাক্ষী সাবুদ ও আলামত (Clue) সহ ফরিয়াদি পক্ষের স্বাক্ষীদের জবানবন্দি PW (Prosecution Witness) ও আসামি পক্ষের স্বাক্ষীদের জবানবন্দি DW (Defence Witness (যদি থাকে) এর উপর ভিত্তি করে বস্তুনিষ্ঠ জেরা করন এবং সর্বোপরী যে রায় দেয়া হয় তার বাইরে কোন আইনজীবী বা বিচারকের যাওয়ার ক্ষমতা নাই। এ ক্ষেত্রে বিশাল ক্ষমতা ও জ্ঞানের অধিকারী হলেও কোন ব্যক্তিগত মতামত প্রয়োগ বা চাপিয়ে দেয়ার এতটুকু অবকাশ নাই।

আইনের দর্শনের আওতায় সীমাবদ্ধ গন্ডির মধ্যেই ভেবে-চিন্তে এগুতে হয়। বিচারক ও অ্যাডভোকেটগণ আদালতে প্রদত্ত স্বাক্ষ্য-প্রমানাদির বাইরে গিয়ে কোন মতামত বা রায় দিতে পারবেন না; অপরাধ বা ঘটনা সম্পর্কে একজন বিচারক বা অ্যাডভোকেট এর ব্যক্তিগত জ্ঞান যাই থাকনা কেন তিনি আদালতে উপস্থাপিত স্বাক্ষাদির বাইরে গিয়ে কোন মতামত দিতে পারবেন না। উক্ত স্বাক্ষাদির আলোকেই একজন অ্যাডভোকেটকে যেমন আদালতে বক্তব্য রাখতে হয় তেমনি বিচারকবৃন্দকেও রায় লিখতে হয়। দ্বিতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী কালো গাউন পরিধানের কারন হলো নিজেকে নিজের পরিচয় গোপন রাখা, এর দ্বারা বোঝানো হয় যে, আদালতে একজন আইনজীবী ভিন্ন সত্তা নিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করেন। কারন তিনি নিজের কথা বলেন না; পেশাগত স্বার্থে মক্কেলের পক্ষে কথা বলেন ।

সাদা ‘বো’ বা ব্যান্ড পরিধানঃ

কালো পোশাকের মধ্যে সাদা ‘বো’ বা ব্যান্ড পরিধান করার কারন হল- তিমিরা”ছন্ন অন্ধকারের মধ্য থেকে সাদা তথা আসল সত্যকে বের করা এ পেশার মহান দায়িত্ব অর্থাৎ ‘বো’ বা ব্যান্ড হল সত্যের প্রতীক। এর আগে বাংলাদেশসহ বৃটিশ কলোনিগুলোর বেঞ্চে বিচারকদের পরিধানকৃত কালো কোট বা গাউনের হাতা ব্যক্তির হাতের চেয়ে লম্বা রাখার রেওয়াজ প্রচলিত ছিল, এখন নাই। লম্বা হাতার ব্যাখ্যা হল, আইনের হাত এত দীর্ঘ যে,অপরাধী পৃথিবীর যে স্থানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন তাকে সেখান থেকে ধরে এনে আইনের বিচার মানতে বাধ্য করবেই এ হাত অর্থাৎ আইনের হাত অপরাধির জ্ঞান ও সীমার চেয়ে অনেক বড়। অন্যভাবে বলা হয়ে থাকে যে অপরাধী যত জ্ঞান বা ক্ষমতার অধিকারী হোকনা কেন আইনের হাত লম্বা বিধায় সংশ্লিষ্ট সাজাপ্রাপ্ত আসামি বেঞ্চ বা আদালতের রায় মানতে বাধ্য।

সাদা পরচুলা (Wig) পরিধানের পিছনে রহস্যঃ

অতীতে আমাদের দেশে ছিল এবং বর্তমানে বৃটেন ও আমেরিকাতে বিচারকবৃন্দ মাথায় লম্বা পরচুলা পরিধান করেন। তারা এখনো এর গুরুত্ব ও নিগূঢ় দর্শন আঁকড়ে ধরে আছেন। তবে আমাদের দেশে প্রধান বিচারপতি শপথ গ্রহনের সময় রেওয়াজ হিসাবে পরিধান করে থাকেন। সাদা পরচুলা (Wig) পরিধানের পিছনে রহস্য হল- মা জননী সন্তানের প্রতি যেমন ন্যায়পরায়ন, তেমনি তার কাছে সব সন্তান একই এবং সমান। কারও প্রতি অবিচার করার মানসিকতা থাকেনা। সে আলোকেই দু’পক্ষ ( ফরিয়াদি ও আসামি) তার সন্তান বলে বিবেচ্য। এই বিচার কার্যে যাতে সঠিক বিচারের পথ সমুন্নত থাকে এবং কোন পক্ষপাতের অবকাশ না থাকে।

এজলাসে দু’পক্ষের বক্তব্য ও আবেদন আন্তরিকভাবে শ্রবণ করে বিচারক ঠান্ডা মাথায় রায় (Judgement) দিয়ে থাকেন, যাতে বিবাদী আত্মপক্ষ সমর্থন (Self Defence), মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights) ও ন্যায়পরয়নতার (Justice& Equity) বরখেলাফের কোন সুযোগ না পায়। অপর তত্ত্ব অনুযায়ী সাদা লম্বা পরচুলার অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধা মাতার মত স্নেহপরায়ন হয়ে তার সন্তানদের বিচার করতে বিচারালয়ে বসেছেন বিচারক, যেন কারও উপর কোন অন্যায় করা না হয়। কারন দুইপক্ষই তার সন্তান এবং সেকারনে দুই পক্ষের আবেদন তাকে শুনতে হয়ে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্টা করতে হয়। আর এভাবেই সমাজে বিচারক ও আইনজীবীগন সম্মানের সাথে বেঁচে থাকেন, সেই সাথে আমাদের সমাজে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয় এবং বিচার প্রার্থী জনগণ তাদের অধিকার ও ন্যায়বিচার পেয়ে থাকেন।

লেখকঃ অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, লেখক ও আইনজীবী, জজকোর্ট মেহেরপুর, E-mail: advmizanur98@gmail.com

আপনার মতামত লিখুন :

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

পারিবারিক আদালত আইন ২০২৩, যেসব বিষয় জানা জরুরী

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

সামাজিক ব্যাধি পরকীয়া: কারণ ও আইনী প্রতিকার

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব গাঁথা মার্চ মাস

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করতে কতজন সাক্ষী প্রয়োজন, আইন কি বলে!

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

বাংলা ভাষার সর্বজনীন ব্যবহার নিশ্চিত হোক

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

ইসলামী ব্যাংকিং পূর্ণতা পাওয়ার পথে সমস্যা: সমাধানের উপায়

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার: ApsNews24.Com (২০১২-২০২০)

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
০১৬২৫৪৬১৮৭৬

editor@apsnews24.com, info@apsnews24.com
Developed By Feroj