মুহাম্মদ আহসান হাবীব
‘করোনা আতঙ্ক’ অস্তিত্বে ধারণ করে আমরা সবাই ঘুমিয়ে আছি। তাই আজ আর কেউ কাউকে জাগিয়ে তুলতে পারছি না কোনো মতেই। কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না কোনো রাষ্ট্রের ক্ষমতার দাম্ভিকতা। দুনিয়াজুড়ে নেই কোনো যুদ্ধ। নেই কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক কর্মতৎপরতা। নেই কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি-ধামকি। নেই কোনো ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার বাহার। সবাই যেনো প্রায় নিশ্চুপ থাকতেই বাধ্য হচ্ছে। দিন দিন থেমে যাচ্ছে দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকাণ্ড। করোনার নিজস্ব শক্তির কাছে হিমশিম খাচ্ছে দুনিয়ার তৈরি সব কৃত্রিম শক্তিগুলো। দুনিয়ার সবচাইতে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র গুলো আজ পরিণত হয়েছে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়। তথ্য, তত্ত্ব, জ্ঞান, গবেষণা, বিজ্ঞান, শক্তি, প্রভাব, অর্থনীতি, রাজনীতি সবকিছুই আজ করোনা ভাইরাসের কাছে হার মানতে বসেছে প্রায়। কেউ কেউ আশংঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘করোনার দাপট থামাতে না পারলে মানবসভ্যতা (মানুষ) বিলুপ্ত হওয়ার সুযোগ আছে।’
ইতিহাসে নির্দিষ্ট প্রাণী দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হওয়ার উদাহরণ/ দৃষ্টান্ত অস্পষ্ট নয়। যেমন ড্রাগন, ডাইনোসর ইত্যাদি। এখনো পর্যন্ত করোনাকে ঠেকানোর মতো কোনো প্রতিষেধক (ঔষধ/ টিকা) আবিষ্কার হয় নি। প্রচেষ্টা চলছে কিন্তু ইতিবাচক ও পরীক্ষামূলক আশ্বাস দিতে পারেনি কেউই। কী হবে শেষ পর্যন্ত? সেটা বলা যাচ্ছে না এখনও। কেবল করোনা সংক্রমিত, সুস্থ, অসুস্থ, মৃত্যু, কোয়ারান্টাইন, আইসলেশন, লক ডাউন, ত্রাণ বিতরণ, আতঙ্ক ও অস্থিরতা বিরাজ করছে সর্বত্র। সচেতন হওয়া আর ঘরবন্দী জীবন চলবে কতদিন? মানুষ তো সৃজনশীল-কর্মমুখী প্রাণী। মানুষকে ঘরে রাখা যায় কি? গেলেও তা বেশিদিন সম্ভব নয়। তাই অনেকে আইনের তোয়াক্কা না করেই বাহিরে বের হচ্ছে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে। এর সমাধান কী? এখন একমাত্র সমাধান হলো করোনা থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার নিশ্চয়তা প্রদান।
শেখ সাদীর মতে যেহেতু, ‘একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করতে পারে না।’ তাই সবাইকে এখন জেগে উঠতে হবে সবাইকে জাগানোর জন্য। আপাতত মেনে চলতে হবে সরকারি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর দেওয়া নির্দেশনা গুলো। নিজেকে, পরিবার ও বিশ্বকে বাঁচতে হলে আপনাকে-আমাকে নির্দেশনা শতভাগ মেনে চলতেই হবে। বাকীটা আল্লাহ ভরসা। অনেকেই বলছেন বাসায় সময় কাটছে না- আতঙ্ক, অস্থিরতা ও বিরক্তিকর! তাদের জন্য নিম্নে ষোলটি টিপস্ দিলাম ট্রাই করে দেখতে পারেন আপনিও।
বাসায় সময় কাটানোর ষোল টিপস: (১) সকালে উঠে প্রতিদিন সারাদিনে কি কি কাজ করবেন তার একটা রুটিন/ তালিকা তৈরি করুন। (২) দিনের কমপক্ষে পাঁচ ঘন্টা বই পড়ুন। ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য, সিলেবাস ও অন্যান্য। (৩) শেখা বিষয়/ তথ্য/ জ্ঞান/ গল্প গুলো পরিবারের সবার সাথে শেয়ার করুন। বিশেষ করে বাবা-মা ও শিশুদের সাথে। (৪) লেখার অভ্যাস থাকলে প্রতিদিন সৃজনশীল কিছু লিখুন। ডাইরি/ ফেসবুক/ ব্লগে। (৫) নির্ভরযোগ্য নিউজ পড়ুন ও দেখুন। ফেসবুক ও ইউটিউব কেন্দ্রিক ভুয়া নিউজ পরিহার করুন। (৬) ইবাদাত/ প্রার্থনা করুন। (৭) বাসার টুকিটাকি কাজ গুলো নিজে করুন। (৮) দু’একদিন পরপর ফোনে আত্মীয়স্বজনের খোঁজ-খবর নিন। (৯) ছাত্র/ ছাত্রীরা সিলেবাস, এডমিশন টেস্ট ও চাকরির পড়া পড়ুন।
(১০) ফেসবুক ও ইউটিউবে শিক্ষামূলক ও ধর্মীয় ভিডিও লিখুন/ দেখুন। দু’একদিন পরপর/ প্রতিদিন পরিবারের সবাই একসাথে একটি ভালো মুভি দেখুন। অশ্লীল মুভি, ভিডিও ও আধুনিক গানবাজনা সম্পূর্ণ পরিহার করুন। (১১) ফেসবুকের সমটাকে ভালোভাবে কাটাতে ও কাজে লাগাতে ফেসবুক গ্রুপ আইনী পাঠশালা – Legal Studies Center and Practice ‘আইনী পাঠশালা’ সার্চ করে গ্রুপে যুক্ত হোন এবং গ্রুপের লেখা গুলো নিয়মিত পড়ুন ও নিজেও লিখুন।
(১২) শিশুদের ভাষা, নৈতিকতা ও ধর্মীয় শিক্ষা দিন। (১৩) পরিবারকে কাছে পেয়েছেন তাই সবার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন ও সবাইকে আরো ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করুন। পারস্পারিক প্রেম, ভালোবাসা ও সেবা বিনিময় করুন। বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবা-মা’র সেবা ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করুন। (১৪) সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে গরিব/ অসহায়দের সাহায্য করুন। (১৫) আধুনিক মেয়েরা রান্না-বান্না শিখুন। (১৬) সবাইকে সচেতন করুন ও নিজে সবসময় সচেতন থাকুন। সে, তুমি ও আমি মিলেই আমরা। আমরা সজাগ হলেই একদিন বিপদমুক্ত হবে বিশ্ব ইনশাআল্লাহ।
লেখক – মুহাম্ম দ আহসান হাবীব। ডাক্তার বাড়ি, দক্ষিণ গিদারী, গাইবান্ধা।