- : মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নোংরা রাজনীতি চলছে শিক্ষকদের মধ্যে। পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি নিয়ে ব্যস্ত। সরকারি দলের সমর্থক শিক্ষকরাই নিজেদের মধ্যে লিপ্ত হয়েছে অন্তঃকলহে। সদ্য যোগদান করা শিক্ষক থেকে শুরু করে ভাইস চ্যান্সেলর পর্যায়েও এ লড়াই চলছে । অনেকে বলছেন এতে শুধু শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে না,শিক্ষাঙ্গনেও তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা। অনেক সময় শিক্ষকরা তাদের এই অপরাজনীতিতে ব্যবহার করছেন ছাত্রদের। সংশ্লিষ্টদের মতে,এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি সর্বস্তরের বিরূপ ধারণা তৈরি হবে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষকদের মর্যাদাও।
দলীয় আনুগত্যের প্রতিযোগিতা : বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অতিমাত্রায় দলের আনুগত্য প্রদর্শন করার লক্ষ্যে শিক্ষকরা যে ভুমিকা পালন করছেন তা প্রশংসনীয় নয়, মনে হচ্ছে দলের প্রতি আনুগত্যের একটি প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে। কে কা থেকে বেশি অনুগত এটা দেখাচ্ছেন তারা। এটি দেখাতে গিয়ে তারা নিজেদের ক্ষতি করছেন, দেশেরও ক্ষতি করছেন এবং দলেরও ক্ষতি হচ্ছে । এসব থেকে শিক্ষকদের বিরত থাকা উচিত।
যে কোনো দেশেই শিক্ষকরা রাজনীতির উর্ধ্বে নন, পথপ্রদর্শক। ইকোনমিক পলিসি হেলথ পলিসি এডুকেশন পলিসি, সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজনীতি তো আছেই। আদর্শের দিক থেকে এসব নীতিনির্ধারণী ভুমিকা রাখবেন এটি প্রত্যাশা সবাই। তবে সেটিকে অভিক্ষুূ্দ্র দৃষ্টিতে দেখলে,দলের প্রতি আনুগত্য বেশি হয়ে যায়। শিক্ষকরা রাজনীতির অনুসরণ করবেন উপদেশ দেবেন, সমালোচনাও করবেন,কিন্তু তাদের নৈতিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ব হবে না। এটি সব সময়ই খেয়াল রাখা উচিত। কারণ শিক্ষকরা আদর্শের পেশায় রয়েছেন । বুদ্ধিবিবেচনাহীন কাজ যেন না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
উপাচার্যের চেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ চেয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধারের নিষ্কলঙ্ক থাকা সবার প্রত্যাশিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা স্বার্থকে তুচ্ছ করে জ্ঞানসাধনায় নিয়োজিত থাকেন, প্রশাসনিক দক্ষতাও একাডেমিক দক্ষতা রয়েছে তাদেরই নিয়োগ দেওয়া উচিত। দলে সম্পৃক্ত থাকতে পারে বা দলের শুভানুধ্যায়ী হতে পারে, তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে যাচাই প্রক্রিয়া কার্যকর থাকতে হবে। পদের প্রতি মোহ থাকলে উপাচার্য থাকা উচিত না।
সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারছি কিনা এটি মনে রাখতে হবে। তাহলে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের মনে থাকবে শুধু মেধার কারণেই তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি রাজনীতির প্রতি সম্পৃক্তও থাকতে পারেন কিন্তু নিয়োগ হতে হবে একাডেমিক এক্সিলেন্সের ভিত্তিতে। এভাবে যারা নিয়োগ লাভ করে তারা মান বজায় রাখে। দায়বদ্ধ থাকে বিবেকের কাছে। সরকার তার পছন্দের ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করবে এটি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাকে মনে রাখতে হবে তায় দায়বদ্ধতা বিবেকের কাছে, চেয়ারের মর্যাদা সবকিছুর উর্ধ্বে। চেয়ারে মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে কোনো লোভ- লালসা তার কাজ করবে না। দুর্নীতি তাকে স্পর্শ করবে না। তিনি ছাত্র শিক্ষক – কর্মকর্তারদের কাছে থাকবেন রোল মডেল হিসেবে। অন্য কোনোভাবে প্রভাবিত হলে বিবেক তাকে দংশন করবে। দল মত নির্বিশেষে তাকে মেধার লালন করতে হবে। দুর্নীতির বাইরে যদি কেউ লবিংয়ের মাধ্যমে উপাচার্য হওয়ার চেষ্টা করে সেটা হওয়া উচিত সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা। পদের প্রতি মোহ থাকবে না,মোহ থাকবে শিক্ষকতার প্রতি। পদের প্রতি মোহ থাকলে তার উপাচার্য থাকা উচিত নয়। উপাচার্যকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়- এমন অভিযোগের সত্যতা থাকলে এক মুহুর্তও দেরি করা নয় রিজাইন করার ক্ষেত্রে।
একজন অধ্যাপকের ওপর যদি কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব আসে তবে তিনি তা পালন করবেন মান-মর্যাদা বজায় রেখে। শিক্ষকতা ছাড়া তার কোনো পদের প্রতি মোহ থাকা উচিত নয়। একজন অধ্যাপকের আর বেশি মর্যাদা কী হতে পারে। অধ্যাপক উপাচার্য হলে সবার প্রতি ন্যায়বিচার করতে হবে । তিনি যদি কোনো শিক্ষক – কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগ দেন, তবে মেধাকে এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে । দল মতের উর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে হবে । দুর্নীতি যেন তাকে স্পর্শ না করে সেটি নিশ্চিত করতে হবে । উপাচার্যের পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পদে নিয়োগদানের আগে কতৃপক্ষকে বিবেচনা করতে হবে, কোন ব্যক্তি আসলে উপযুক্ত সেই পদের জন্য । উপাচার্য নিয়োগের জন্য যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে। উপাচার্যের আকর্ষণ থাকবে মেধার প্রতি, পদের প্রতি নয়, ন্যায়বিচার করার জন্য অবিচল থাকতে হবে উপাচার্যকে। পদের মর্যাদা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।
নিয়োগ পাচ্ছেন দলের পাহারাদার হিসেবে দেশে কোনো বিশ্বিবদ্যালয়ও নেই কোনো উপাচার্যও নেই । ব্যক্তিত্ব, ভাবমূর্তি, পাণ্ডিত্য না দেখে সব উপাচার্য নিয়োগ করা হয় – তারা দল করে কিনা অর্থাৎ দলের পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয় । তারা নিয়োগ পেয়েই মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব জমিদারি । বঙ্গবন্ধু যেভাবে উপাচার্য নিয়োগ করতেন এখন তার সম্পুর্ণ বিপরীত পদ্ধতিতে তদবির আর আওয়ামী লীগের প্রতি শতভাগ অনুগত দেখে বর্তমানে উপাচার্য নিয়োগ করা হয় । বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমার শিক্ষকরা যদি সারা বছর রাজনীতি করেন তবে কখন পড়াশোনা করবেন, বা করাবেন ? নির্বাচনভিত্তিক নোংরা রাজনীতিতে কোনো শিক্ষক সম্পৃক্ত হতে পারেন না।
এ জন্য প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন আইন থাকতে পারে। শিক্ষকদের রাজনীতির মতাদর্শ থাকতে পারে । কিন্তু তারা রাজনৈতিক দলাদলি করতে পারবেন না । নির্বাচনও কমিয়ে দিতে হবে । বিশ্ববিদ্যালয় তদারকির প্রতিষ্ঠান ইউজিসিকে সরকার নিজেই ইচ্ছে করে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখেছে। ইউজিসি বেশ কিছু উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে । কিন্তু মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্হা আজও নেয়নি । এ কারণে ইউজিসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। সরকারের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আলাদা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে। যে কমিটিতে সদস্য থাকবেন শিক্ষক, কিন্তু তাদের থাকবে না রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা।
উপাচার্য কলিমউল্লাহর দুর্নীতির ৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ :
অধিকার সুরক্ষা পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য কলিমউল্লাহর দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর দুর্নীতির ৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা বলছেন- এটি প্রথম খণ্ড। উপাচার্যের দুর্নীতিগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৃহৎ সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপাচার্যের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. মতিউর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা লজ্জিত। আমরা আপনাদের সামনে গবেষণাপত্র বা গবেষণার ফল প্রকাশ না করে উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রকাশ করছি। শ্বেতপত্র প্রকাশ করার কারণ হচ্ছে জনগণের টাকায় পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয় যেন সঠিকভাবে চলে এবং একজন উপাচার্য যেন স্বেচ্ছাচারি ও দুর্নীতিপরায়ণ না হয়ে প্রকৃত অভিভাবক হয়ে দেশ-দেশান্তরে শিক্ষার দ্যুতি ছড়িয়ে দেন। আমরা জানি অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অনিয়ম-অসঙ্গতি-দুর্নীতি তুলে ধরে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করতে পারে গণমাধ্যম।
তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদের সামনে শ্বেতপত্রে উল্লেখিত ১১১টি অভিযোগের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো তুলে ধরছি। অভিযোগ গুলো হলো- সংঘবদ্ধ দুর্নীতি : বেরোবির চতুর্থ উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ২০১৭ সালের ১৪ জুন যোগদান করার পর ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিত থেকে ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে ব্যাপকভাবে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতি, ভর্তি বাণিজ্য, হয়রানি, নির্যাতন, নিপীড়ন আর স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্য এসব দুর্নীতি করেন সংঘবদ্ধভাবে। তবে তিনি এসবের মূল নায়ক। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে সংঘবদ্ধ দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করছেন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে এ সংঘবদ্ধ দুর্নীতির চক্র তৈরি করেছেন তিনি।
নিয়োগ দুর্নীতি : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সংস্থা জানিপপ এবং কিছু কিছু অঞ্চলের প্রার্থীরা প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। এছাড়া নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে রয়েছেন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং তার মা। দুজন মিলেই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উপাচার্য নিজেই, ওই অনুষদের ডিন পদেও রয়েছেন উপাচার্য। উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি, অনুষদের ডিন হিসেবেও তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য আর বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তিনিই সদস্য। অপরদিকে তার মা বিষয় ‘বিশেষজ্ঞ’ সদস্য।
আর্থিক দুর্নীতি : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ ক্রয় ক্ষেত্রেই সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ না করে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। উপাচার্যের দুর্নীতি সহযোগী শিক্ষক, কর্মকর্তারাও গত সাড়ে তিন বছরে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ব্যাপক দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৮ সালে যেই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা তা এখনও ৩৫ শতাংশ কাজের মধ্যেই রয়েছে। ১০ তলা ভবনের কেবল ৪ তলার ছাদ হয়েছে মাত্র। অথচ বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা হরিলুটের পরিকল্পনা করেছিলেন। এই প্রকল্পে উপাচার্যসহ কয়েকজন কর্মকর্তার নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসির তদন্ত কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহনপুলের সঙ্গে সংযোগ সড়ক করার নামে ছোট একটি ইট বিছানো রাস্তা নির্মাণ দেখিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ইউজিসি কর্তৃক বরাদ্দকৃত ৩৫ লাখ টাকার কাজকে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। বিষ্ময়কর বিষয় হলো রাস্তা নির্মাণের এই কাজ করেছে ‘মেসার্স সাহেল ফল ভান্ডার।
একাডেমিক দুর্নীতি : উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ একাডেমিক দুর্নীতিও করেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালকসহ একাই ১৬টি প্রশাসনিক পদে থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর ২৬ (৫) ধারা লঙ্ঘন করে ছয়টি অনুষদের মধ্যে চারটি অনুষদের ডিনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সমালোচনার মুখে তিনটি অনুষদের ডিন পদ ছেড়ে দিলেও যোগ্য অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদ আঁকড়ে ধরে আছেন।
বরখাস্ত, সতর্ক ও আদালত অবমাননা : দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে ড. কলিমউল্লাহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দমন করার জন্য কোনো তদন্ত ছাড়াই সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে অবৈধভবে শোকজ নোটিশ দেন, সতর্ক করেন। উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে এ পযর্ন্ত ১৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রেখেছেন। ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত থেকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তাও তিনি অমান্য করেন। শিক্ষকদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সতর্ক করেন তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে।
দুর্নীতির আখড়া ঢাকার লিয়াজোঁ অফিস : আইন লঙ্ঘন করে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি লিয়াজোঁ অফিস চালু করেছেন উপাচার্য। জরুরি কার্যাদি সম্পন্ন করার নামে স্থাপিত ওই লিয়াজোঁ অফিস এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অফিসে পরিণত করেছেন তিনি। লিয়াজোঁ অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যপ্রণালী সম্পন্ন করার নামে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ভুয়া বিলে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। দুর্নীতির নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই লিয়াজোঁ অফিস। সিন্ডিকেটসহ সকল সভা ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে হয়। নিয়োগ ও আপগ্রেডেশন বোর্ড ঢাকায় হওয়ায় শত শত শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সময় ও অর্থ খরচ করে রংপুর থেকে ঢাকায় যেতে হয়। সব ধরনের দুর্নীতির কেন্দ্র হচ্ছে ঢাকার লিয়াজোঁ অফিস।
উপস্থিত মাত্র ২৩৭ দিন : ড. কলিমউল্লাহর উপস্থিতি-অনুপস্থিতির হিসাব করে অধিকার সুরক্ষা পরিষদ দেখেছে যে ১৪ জুন ২০১৭ উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ পযর্ন্ত মোট ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেছেন। অর্থাৎ উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৩৭ দিন। কখনোই তিনি পূর্ণদিন উপস্থিত থাকেন না, কখনো ক্যাম্পাসে থাকেন এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা। মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ১ জুন ২০১৭ ইস্যুকৃত তার নিয়োগ প্রজ্ঞাপনের ৪ নং শর্তে বলা হয়েছে- তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের ওই নিয়োগ শর্ত অমান্য করে উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহ ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকছেন।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণেও দুর্নীতি : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মনে-প্রাণে ধারণ করতে পারেন না উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এটি তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে প্রমাণ মিলেছে। সম্প্রতি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে দায়সারাভাবে অর্থ নয় ছয় করে ক্যাম্পাসের অখ্যাত স্থানে (অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড) বঙ্গবন্ধুর নিম্নমানের ম্যুরাল স্থাপন রাজনীতির এই মহানায়কের প্রতি অবজ্ঞারই নিদর্শন। গত বছর ৬০টিরও বেশি গবেষণায় আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হলেও এক শিক্ষককে বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেননি তিনি।
[ লেখকঃ নির্বাহী সম্পাদক দৈনিক আপন আলো | সদস্য ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজে | ও প্রকাশক জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ]