এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
করেনায় ত্রানের মালামাল চুরির হিড়িক পড়েছে। সংবাদপত্রের পাতা খুললেই চোখ ছানাবড় হয়ে উঠে। এদিকে চার বছর ধরে সরকারী চাল উত্তোলন ও আত্মসাতের দায়ে কুষ্টিয়ায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কুষ্টিয়ার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেলিনা খাতুন ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯০ (১)(সি) ধারায় এ উদ্যোগ গ্রহন করে সর্বমহলে প্রসংসিত হয়েছেন।
আমি আজ পাঠকের ধৈর্য্যচূত ঘটাব না। প্রাসঙ্গিক গল্প দিয়েই আমার নিবন্ধনের ইতি টানতে চাই। এক ভিক্ষুককে এক কোটিপতি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, আপনাকে যদি আমি ৫০০ কোটি টাকা দেই তাহলে কি করবেন? ভিক্ষুক উত্তরে জানালেন বড় করে একটি শপিং মল বানাবো। তারপর কি করবেন জানতে চাইলে ভিক্ষুক উতত্তরে বললেন সেই শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে আমি একাই ভিক্ষা করবো, আর কোন ফকিরকেই দাঁড়াতে দিবো না। গল্পটির সারমর্ম হেেচ্ছ এই যে, বংশ পরম্পরায় যারা চোর তারা যে কোনো পরিস্থিতিতেই চুরি করবে, সেটা ত্রাণ হোক কিংবা নিজের বাপের কাফনের কাপড়ই হোক।
এবার যে গল্পটি অবতারনা করছি তা সবারই জানা। কৌতুক গল্প মাত্র। কিন্তু আমার লেখার শিরোনামের সাথে এ গল্পটির যথেষ্ট মিল আছে। “রাজা তার আবহাওয়া বিভাগের প্রধানকে ডেকে জিজ্ঞাস করলেন- আমি মৎস শিকারে যেতে চাই, আজকের আবহাওয়া কেমন থাকবে বলে জানা গেছে? আবহাওয়াবিদ জানালেন যে, আজকে অতীব সুন্দর, রৌদ্রোজ্জ্বল এবং চমৎকার আবহাওয়া থাকবে জাহাপনা! আপনি নির্ভয় চিত্তে যেতে পারেন। রাজা বের হলেন। তিনি যখন সাগর পাড়ে গেলেন, সাগর পাড়ের এক জেলে ছাগল চড়াচ্ছিলো, সে বললো- মহারাজ আজকে কেন আপনি সাগরে যাচ্ছেন? একটু পরেই তো ঝুম বৃষ্টি হবে! রাজা রেগে বল্লেন -বেটা জেলের বাচ্চা! তুই কি জানিস আবহাওয়ার খবর ? আর আমাকে কি মূর্খ পেয়েছিস! আমি খবর জেনে তবেই এসেছি । একথা বলে রাজা সাগরে গেলেন, কিছুক্ষণ পর শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি ! রাজা প্রাসাদে ফিরে এসে আবহাওয়া বিভাগের প্রধানকে বরখাস্ত করলেন, তারপর ঐ জেলেকে ধরে এনে আবহাওয়া বিভাগের প্রধান বানিয়ে দিলেন! জেলে তো পড়লো মহা বিপদে! সে তো আবহাওয়ার কিছুই জানে না! রাজ দরবারে গিয়ে জেলে কেঁদে বরল- মহারাজ আমাকে যেতে দিন! আমি আসলে আবহাওয়ার কিছুই জানি না। রাজা বলল – তাহলে ঐ দিন আমার আবহাওয়া বিভাগে চেয়েও সঠিক খবর তুই কি করে দিলি! জেলে উত্তর দিল, মহারাজ সেখানে আমার কোন কৃতিত্ব ছিল না! সব কৃতিত্ব আমার ছাগলের! বৃষ্টি আসার আধাঘন্টা আগে থেকে ছাগলটা ঘনঘন মুতে! এর থেকে আমি বুঝতে পারি একটু পর বৃষ্টি হবে! তারপর রাজা জেলেকে ছেড়ে দিয়ে তার ছাগলটাকে ধরে এনে আবহাওয়া বিভাগের প্রধান বানিয়ে দিলেন! সেই থেকেই বড় বড় পদগুলোতে ছাগল নিয়োগ দেওয়ার রীতি চালু হয়।
পাঠক এবার একেবারেই শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এটা নিছক গল্প নয়। আমার জীবনের একটি ছোট্র অভিজ্ঞতা শেয়ার করেই নিবন্ধের ইতি টানছি। ছোট বেলায় বাড়ি থেকে বাজারে যেতে-আসতে একটি বাড়ির পাশ দিয়ে আসা যাওয়া করা লাগত। ঐ বাড়ির একটি কুকুর হল মাথা ব্যাথার কারণ। বিশেষ করে রাতের বেলায় বাজার থেকে ফেরার পথে ঐ কুকুরকে পাশ কাটিয়ে আসার জন্য নানা রকম ফন্দি ফিকির করতে হত প্রায় লোককেই। ঐ কুকুরের ভয়ে আমি কখনো রাত করে বাড়ি ফিরতাম না। একবার এক প্রতিবেশী চাচার সাথে বাজার থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। ফেরার সময় হতেই আমার মনে পড়ল কুকুরের কথা। চাচাকে বললাম; আমিতো বাড়ি যেতে পারব না চাচা। চাচা জিজ্ঞাসা করল; কেন? আমি বললাম (ওদের) বাড়ির কুকুর আমায় আস্ত রাখবে? চাচা বললেন; ধূর বোকা! চল আমার সাথে, দেখবি কেরামতি।
তো চললাম চাচার উপর ভরসা করে। (ওদের) বাড়ির কাছাকাছি আসতেই ভয়ে গা’টা কেমন যেন শিউড়ে উঠল। বাড়ির পাশে আসতেই ঘেউ ঘেউ করতে করতে ছুটে আসতে শুরু করল ঐ দজ্জাল কুকুরটা। দৌড় লাগাব কিনা এই চিন্তাটা মাথায় ঘুরতে শুরু করল ১০০০ মাইল বেগে। কুকুরটা কাছে আসতেই দেখলাম একদম শান্ত। ঘটনা কি? খেয়াল করছিলাম চাচা কি করে। চাচা পকেট থেকে কি যেন বের করে কুকুরটাকে দিল, আর অমনি কুকুর বাবাজি শান্ত-ন¤্র-ভদ্র আপনজনের মতো আচরন করতে শুরু করল। টর্চ লাইটের আলোয় দেখতে পেলাম বিস্কুট খাচ্ছে কুকুর বাবাজি।
নিশ্চয়ই আপনারা বলাবলি করছেন করোনা চোরদের আর ভোট দেব না। আসুক ভোট। আসবে আমাদেরও দিন। দেখিয়ে দেব। কি দেখাবে? কচু! আরে বোকা এখন জনগণ হাউ-কাউ করছে, ওদের বাড়ির কুকুরের মতো। ভোট আসুক বিস্কুট পেলেই এইসব হাউ-কাউ বন্ধ হয়ে যাবে। আবার ভোট দিবে এইসব নেতাদেরকেই। তারাই নির্বাচিত হয়ে আবার করো চুরি করবে। এ নিয়ে একটি প্রবাদ বাক্যও আছে কুকুরের ঘেউ ঘেউ, বিস্কুটে বশ! জনগণের হাউ-কাউ, ইলেকশনে ফস!!
লেখকঃ এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, বহু আইনগ্রন্থ প্রণেতা, প্রকাশক ও সম্পাদক।