করোনাকালের লকডাউনে বাংলাদেশে পারিবারিক সহিংসতার হার যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনী গবেষণায় দেখা গেছে যে, আইন ও সালিশ কেন্দ্র সহ বিভিন্ন হেল্পলাইনে পারিবারিক সহিংসতার বিষয়ে সাহায্য চেয়ে ফোন কলের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গেছে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ২৭টি জেলায় ৪২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬ টি শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে এক হাজার ৬৭২ জন নারী এবং ৪২৪ টি শিশু আগে কখনো নির্যাতনের শিকার হয়নি। অর্থাৎ, এই করোনাকাল পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড গড়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, অন্যান্য কিছু দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরের মত দেশেও এ সমস্যাটি রয়েছে।
আপনিও লিখতে পারেন আমাদের ক্যাম্পাস, শিক্ষা পরিবার, সাহিত্য ও মতামত পাতায় । আাপনার লেখার মাধ্যমে দেশ ও জাতি সমৃদ্ধ হোক।
আপনার লেখা পাঠাতে আমাদের ইমেল করুন editor@apsnews24.com এই ঠিকানায়।
লেখার সাথে আপনার পরিচয়, ফোন নাম্বার ও ছবি দিবেন। প্রয়োজনে ফোনও করতে পারেন।
01517856010
পারিবারিক সহিংসতা বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বোঝায় এ নিয়ে সমাজে অনেক রকম ধারণা রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এ বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ আইন রয়েছে এবং তা হচ্ছে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০। এখানে পারিবারিক সহিংসতার সংজ্ঞাটিকে স্পষ্ট করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে, পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক আছে এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোন নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন বা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। এখানে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বলতে যৌতুকের দাবী, ভরণপোষণে অস্বীকৃতি, জোরপূর্বক নারীর বেতন ভোগ করাকে বোঝায়। অর্থ্যাৎ, পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে যে শুধুমাত্র শারীরিক নির্যাতন বা শারীরিক আঘাত থাকবে তা নয় বরং মানসিক আঘাতও এর অন্তর্ভুক্ত।
আদালত চাইলে পারিবারিক সহিংসতার স্বীকার হওয়া ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি আদেশ দিতে পারেন যা restraint order নামে পরিচিত। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এর ৩০ ধারার অধীনে এ আদেশ লঙ্ঘন করার শাস্তি হচ্ছে অনধিক ৬ মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড। উক্ত শাস্তি ভোগ করার পর পুনরায় restraint order লঙ্ঘন করার শাস্তি হচ্ছে ২ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড। অর্থাৎ, একবার শাস্তি ভোগ করার পর এরকম ভাবার কোন সুযোগ নেই যে, যেহেতু শাস্তি ভোগ করা হয়ে গেছে, সেহেতু পুনরায় পারিবারিক সহিংসতায় লিপ্ত হতে কোন আইনী বাধা নেই। আইন সেক্ষেত্রেও ব্যবস্থা রেখেছে।
পরিশেষে বলা যায়, পারিবারিক সহিংসতা রোধের লক্ষ্যে প্রতি বছর এ বিষয়ে একটি জরিপ হওয়া প্রয়োজন। ২০১৮ সালের প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায় যে, প্রায় ৭২% ভিকটিম নারী এ বিষয়টি প্রকাশ করে না। সারা দেশে এটা প্রচার হওয়া উচিৎ যে, পারিবারিক সহিংসতা যখন চরম আকার ধারণ করে, তখন সেটাকে শুধুমাত্র নিজের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যাপারে সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ নয়। বিষয়টিকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে সমাধান করা প্রয়োজন।
নাজিয়া আমিন
আইনজীবী ও লেখক