মোঃ হাফিজুর রহমান
সারাবিশ্বে অনিশ্চয়তা বিরাজমান। বিশ্বের ব্যস্ততম রাস্তা সমুহ আজ যানবাহন শূন্য। বড় শপিং মল সমূহের ক্রেতা-বিক্রেতা হীন। সবাই যার যার জায়গায় থেকে এই অদৃশ্য বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষ ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখে সচেতন ভাবে করোনার মোকাবেলা করে চলছে। এই লড়াইয়ে বিজয়ী হতে দুই ধরনের শক্তির প্রয়োজন হবে তার একটি হচ্ছে শারীরিক অন্যটি মানসিক। শারীরিক শক্তি নির্ভর করবে কয়েকটি বিষয়ের উপর যেমন খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম, বয়স ও রোগবালাই এর উপর।
এই মুহূর্তে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন যেমন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে এর সাথে প্রচুর শাকসবজি, ডিম, দুধ ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কে গুরুত্ব দিতে হবে। শারীরিক সক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য হালকা ব্যায়াম অত্যাবশ্যকীয়। যাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ আছে তাদের চেষ্টা করতে হবে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণে রাখতে। অপরদিকে সবচেয়ে বড় যে শক্তি প্রয়োজন তা হলো মানসিক শক্তি। মানসিকভাবে নিজেকে ঠিক রাখতে পারাটা হচ্ছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাঙালি হিসেবে আমরা অনেক আড্ডা প্রিয়।
চায়ের দোকান সমূহে আমাদের আড্ডায় মুখরিত থাকে। গল্প, আড্ডা শেয়ারিং,কেয়ারিং অন্যান্যদের তুলনায় আমাদের বেশি। আমরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে তাদের খোঁজ-খবর নিতে অনেক বেশি পছন্দ করি। তাইতো আমাদের আতিথেয়তা বিশ্বসেরা। তাই সবকিছু ছেড়ে ঘরে থাকাটা কষ্টের। কিন্তু সেটাই আমরা সফল ভাবে করে যাচ্ছি কারণ আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে নিজেদেরকে পরিবারকেও দেশের মানুষকে এই সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করব। বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কিন্তু আমি সেটাকে শারীরিক দূরত্ব বলতে ইচ্ছুক। শারীরিকভাবে একজন-আরেকজনের সংস্পর্শে আসলেই ভাইরাস সংক্রমণের সুযোগ তৈরি হবে। বর্তমান যুগ ডিজিটালাইজেশনের যুগ এখন সবার হাতে মোবাইল। বেশিরভাগ মানুষের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ও রয়েছে। তাই সামাজিক ভাবে একে অন্যের সাথে যোগাযোগের অনেক বড় সুযোগ রয়েছে।
যারা গ্রামে বসবাস করেন তারা নিজ গণ্ডির মধ্যে থেকে চলাফেরা করতে পারেন। তাই একঘেয়েমি বা হতাশা ভর করার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে তাদের কম। নিজ গৃহে অবস্থান করে বিনোদনের অনেক উপকরণ আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। যারা হাসির নাটক সিনেমা পছন্দ করেন তারা তা দেখতে পারেন। অনেকে রোমান্টিক-অ্যাকশনধর্মী নাটক সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। টেলিভিশন চ্যানেল সমুহের উচিত করোনার সময়টাকে মাথায় রেখে সেরা সেরা নাটক, সিনেমা, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান সমূহ সম্প্রচার করা। হতে পারে তা বেশ পুরাতন।
বাচ্চাদের জন্য বিশেষ বিশেষ আয়োজন করা যেতে পারে। বই হতে পারে জ্ঞান অর্জন ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। যারা ছাত্র-ছাত্রী আছে তারা নিজেদের একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই উপন্যাস বা কবিতার বই পড়ে নিজেদের মনের আনন্দে নিজেরাই দিতে পারেন। বাসার মধ্যে ও বিভিন্ন ধরনের খেলার উপকরণ যেমন ক্যারাম, লুডু ইত্যাদি তে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের মনকে সতেজ রাখতে পারি। যাদের লেখালেখির শখ আছে তারা লেখা চালিয়ে যেতে পারে। যাদের গান গাওয়ার ইচ্ছা আছে বাসায় বসেই গুন গুন করে গান গাইতে পারেন। যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হচ্ছে এবাদত বা উপাসনা।
প্রত্যেকেই বাসায় অবস্থান করে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার পালন করে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে এই কঠিন মহামারী থেকে মুক্তির প্রার্থনা করতে পারি। মনে রাখতে হবে আমাদের সচেতনতা ও যথাযথ পদক্ষেপ সাথে স্রষ্টার অনুগ্রহ ছাড়া এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। এসময় বিভিন্ন পেশাজীবীরা প্রচণ্ড পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ডাক্তার, পুলিশ, প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী, সাংবাদিক ও ব্যাংকাররা।এই সময়ে তাদের অবদানের কথা জাতি সারাজীবন স্মরণ করবে। এর সাথে মনোবিদদের সেবার অন্তর্ভুক্ত করে কল সেন্টারের মাধ্যমে সরকার সবাইকে মানসিক সমর্থন দিতে পারেন। বিশেষ করে কেউ মানসিক ভাবে ভেঙে পরলে বা তাদের কিছু জিজ্ঞাসা থাকলে মনোবিদগন সাহায্য করতে পারেন।
আরেকটি পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার সকল মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে গ্রাহকদের ফ্রি ডাটা সরবরাহ করতে পারেন যাতে মানুষ ঘরে থেকেও অন্যান্যদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনে সমর্থন হয়ে নিজ ঘরে অবস্থান করতে পারেন। তবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ধরনের গুজব থেকে সাবধান থাকতে হবে। এমন খবর যা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণ হবে তা পরিহার আবশ্যক। বিশেষ কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি যার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে করোনার প্রকোপ বাংলাদেশে এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। আশা করছি তার নির্দেশনা সমূহ পরিপালনের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে করনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো ।
পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে এখন একজন আরেকজনকে সমর্থন দিতে হবে। বিশেষ করে ডাক্তারদের অনুরোধ করবো আপনারা কর্মক্ষেত্রে আসলে সাধারণ মানুষ আরো বেশি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। কারণ এখন সাধারণ অসুখ হলেও তারা আতঙ্কে থাকে কি হয়? এটা মানসিক শক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো আমরাও সারাদেশে একযোগে কোনকিছু পালন করতে পারি। সেটা না পারলেও আমরা নিজেরাও গিয়ে উঠতে পারি “আমরা করব জয় আমরা করব জয় আমরা করব জয় নিশ্চয় ও হো বুকের গহিনে আছে প্রত্যয় আমরা করব জয় নিশ্চয়”।
লেখকঃ মোঃ হাফিজুর রহমান, শিক্ষক, মার্কেটিং বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ-৮১০০।